বৈশ্বিক মহামারী করোনার দাপটে দুনিয়ার কোনো দেশই আজ ফুরফুরে মেজাজে নেই। স্থবির অর্থনীতির চাকা সচল হলেও পৃথিবীর সকল দেশের অর্থনীতির অবস্থাই অনেকটা বেহাল। উন্নত বিশ্ব থেকে উন্নয়শীল বিশ্ব সবত্রই অর্থনীতির ধাক্কা লেগেছে। করোনাভাইরাসের তাÐবকে বলা হচ্ছে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় দুর্যোগ। আমরাও এ দুর্যোগের বাইরে থাকতে পারি নি। বাংলাদেশকে এ দুর্যোগ মোকাবিলা করেই টিকে থাকতে হয়েছে। বিশ্বের দাপুটে দেশগুলো যখন করোনায় নাজেহাল, তখন একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও আমরা অনেকের চেয়ে শক্ত হাতে এর মোকাবিলা করেছি। যদিও দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি আর অবহেলার কারণে অনেকটা পিছিয়ে ছিলাম। সকলে আন্তরিক হলে করোনার ক্ষয়ক্ষতি আরো কম হতো। করোনার সাথে ছিল আম্পান ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধাক্কা। বার বার বন্যার কবলে কৃষি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও করোনাকালীন অর্থনীতি বাঁচিয়ে রেখেছে এদেশের কৃষক।
করোনায় স্থবির বাংলাদেশ আবার সচল হয়েছে। ঘুরছে অর্থনীতির চাকা। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর যেসব আঘাত স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে আমাদের অর্থনীতি। তবে কিছু খাত এখনো সেই আঘাতের ক্ষত থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি। ফিরতে পারে নি আগের ধারায়। এদিকে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমলেও এখনো শেষ হয়ে যায় নি। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যবিদরা আসছে শীতে করোনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা করছেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সকলকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে জারি করা হয়েছে ৯ নিদের্শনা। ফলে দেশের অর্থনীতি আরো একবার ধাক্কায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংক্রমণের কারণে এ বছরের প্রথম থেকেই বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব দৃশমান হয় এপ্রিলে। ওই মাসে রপ্তানি কমে যায় ৮৩ শতাংশ। রেমিট্যান্সও নামতে থাকে। লকডাউন ঘোষণার পর শিল্প ও সেবা খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। চাকরিচ্যুতির মধ্য দিয়ে বেড়ে যায় বেকারত্ব। কমে যায় শ্রমজীবী মানুষের আয়। ফুটপাতে হকাররা বসতে পারে না। রিক্সা, সিএনজি বন্ধ থাকে। গণপরিবণের শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়েন। হোটেল-রেস্তরা ও দোকান কর্মচারীরা কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন। বিদেশে শ্রমিকের কর্মসংস্থানের পথও অনেকটা বন্ধ। মানুষের আয় কমলেও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে থাকে হু হু করে। অন্যদিকে করোনার দুর্ভোগে থাকা মানুষের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেয় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। পেঁয়াজ, আলু, চাল, তেল, সবজিসহ নিত্যপণ্যের গগণচুম্বী দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। একটা অজানা আতঙ্কে ঢাকা পড়েছে বাংলাদেশ। সরকার এই সঙ্কট থেকে কাটিয়ে উঠতে নানা ধরণের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের কারণে সরকারের সেই শুভ উদ্যোগ সফল হচ্ছে না। অর্থনীতিতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন ছাড়া অর্থনীতি উন্নয়নের চাকা থমকে দাঁড়াবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের উন্নতি হয়েছে। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এখনো বর্তমান। বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এখনো ভুগছেন অনিশ্চয়তায়। এ দোদুল্যমানতা থেকে তাদের বের করে আনাই এ সময়ের জন্য একটি বড় কাজ। বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিডের মধ্যে টিকে থাকার বড় কারণ গ্রামীণ অর্থনীতি। আমরাও মনে করি, গ্রামীণ অর্থনীতির শক্তিই দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে, বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। তাই একে লালন করার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। বাড়াতে হবে বিদেশী বিনিয়োগ। বিদেশে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের অর্থনীতির দ্বিতীয় অক্সিজেন পোশাক শিল্পকে চাঙ্গা করতে হবে। পোশাক শিল্প ধ্বসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তবেই আমাদের উন্নয়নের চাকা গতিশীল হবে।