রবিবার,২৮,এপ্রিল,২০২৪
32 C
Dhaka
রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
Homeজাতীয়নববর্ষের উৎসবে মাতলো সারাদেশ

নববর্ষের উৎসবে মাতলো সারাদেশ

এসেছে বাংলা নতুন বছর ১৪৩১। রবিবার (১৪ এপ্রিল) ভোরের আলো ফুটতেই রাজধানীর রমনার বটমূলে বাঁশির সুরে নতুন বছরকে স্বাগত জানান ছায়ানটের শিল্পীরা। পরে গান, কবিতায় মুখরিত হয় বটমূলমঞ্চ। এদিকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে থেকে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শাহবাগ, ঢাকা ক্লাব ও শিশু পার্কের সামনে থেকে ইউটার্ন নিয়ে ৯টা ৫০ মিনিটে টিএসসিতে এসে শোভাযাত্রা শেষ হয়। এছাড়া রাজধানীর শিশু পার্কের সামনে বর্ষবরণের আয়োজন করে ঋষিজ শিল্পগোষ্ঠী। আজ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে মেতে উঠেছে সারা দেশ।

যে রাজনৈতিক বাস্তবতায় শোভাযাত্রার সূচনা শুরু হয়েছিল তার ব্যত্যয় ঘটেনি কোনও বছর। দেশীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনও ক্রান্তিকালকে সামনে রেখে নতুন বছরে নতুন প্রতিজ্ঞার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনটি। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’। আয়োজকরা বলছেন, যা কিছু অশুভ আমাদের চারপাশে, মৌলবাদের যে উত্থানের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা তা দূর করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগাতে এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ঠিক ঈদের ছুটির মধ্যে পহেলা বৈশাখ দিনটি পড়লেও জনসমাগম বলছে কেটে যাবে ঘোর অমানিশা।

রবিবার সূর্যোদয়ের পরে ঢাকার রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। সাদা-লালের মিলনমেলা হেঁটে চলেছে চারুকলা ইনস্টিটিউটের দিকে। সেখানে সংগঠনের পক্ষ থেকে আসা মানুষের মিছিল যেমন ছিল, ঠিক তেমন ছিল পারিবারিকভাবে শোভাযাত্রায় শরিক হওয়া জনতার ভিড়। ছোট বাচ্চা-কাঁধে যে বাবা এসেছেন কেবল সবার সঙ্গে এই উৎসবে শরিক হতেই। তিনি জানেন না কেন এই শোভাযাত্রা, কিন্তু সবাই এমন উৎসবে যুক্ত হবে আর তার সন্তান সেটা জানবে না– এটা ঠিক হবে না ভেবেই চলে আসেন।

সকাল সোয়া ৯টায় শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রাকে বারবার হোঁচট খাওয়াতে চেষ্টা করেছে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। কখনও এটাকে ধর্মবিরোধী লেবাস লাগিয়ে, কখনও বিভিন্ন হামলার ভয় দেখিয়ে থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই প্রগতিশীল ছাত্র শিক্ষক সমাজ দ্বিগুণ প্রতিবাদী হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

চৈত্র সংক্রান্তির রাতে প্রস্তুতিকালে সবার মধ্যে একটা শঙ্কা ছিল, যেহেতু ঈদের ছুটিতে অনেক মানুষ ঢাকার বাইরে, সেহেতু এবার ঠিক কত মানুষ যুক্ত হবেন শোভাযাত্রায় তা আন্দাজ করা যাচ্ছিল না। কিন্তু চৈত্র সংক্রান্তির বিকালেই তাদের বানানো সব মুখোশ ও উপকরণ প্রায় বিক্রি হয়ে যায়। সেখানে বিক্রেতা চারুকলার এক শিক্ষার্থী অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, ভয়ের কিছু নেই। শোভাযাত্রা প্রতিবারের মতোই মুখর হয়ে থাকবে। মানুষ ঠিকই যোগ দেবেন।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে যখন মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রদর্শনীর জন্য বিভিন্ন মুখোশ, পেঁচা, ঘোড়া, মূর্তি, ট্যাপা পুতুল, নকশি পাখি, নানা প্রাণীর প্রতিকৃতি প্রধান সড়কে সাজানো হচ্ছিল তখনই রাস্তাটি ভরে যায় মানুষে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহানা-রেজাউল দম্পতি পুরো পরিবারসহ এসে জায়গা নেন একপাশে। তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করি প্রতি বছর আসতে। কী যে ভালো লাগে এখানে এলে। আমরা না নিয়ে এলে পরের প্রজন্ম জানবে কী করে শোভাযাত্রা বিষয়টা কী।

রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শেষ করে দ্রুত পায়ে হেঁটে আসছিলেন কয়েকজন। শোভাযাত্রায় টানা ১৫ বছর আসছেন উল্লেখ করে তাদের একজন রিয়াজুল বাশার বলেন, আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন থেকে শুরু করেছি। এরপর পরিবারের সবাই মিলে আসা। এখন আমাদের ১৮ জনের ছোট্ট একটা মিছিল হয়ে যায়। ফেসবুকে পোস্টারে দেখেছি এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’। এই যে অন্ধকার, সেটার মানে কী, এই যে সারাক্ষণ মৌলবাদ উত্থানের শঙ্কা, সেটা প্রতিরোধের কেন দরকার সেসব কেউ ক্লাসরুমে শেখে না। পরিবারে বড়দের এ দায়িত্ব পালন করতে হবে।

প্রতি বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং এবার ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’ স্লোগানে এক ধরনের দায়িত্বশীলতা আছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, অন্ধকারকে কাটিয়ে আলোর পথে যাবো, এটি আমাদের প্রত্যাশা। সব অন্ধকার কেটে যাবে একদিন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর যেকোনও অপচেষ্টা রুখে দেবো। স্লোগানটি অন্তরে ধারণ করে হবে অগ্রযাত্রা। তরুণসমাজ মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, বাঙালি আত্মপরিচয়কে নিজে ধারণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রবাহিত করার কাজটি এই দিনগুলোর মধ্য দিয়ে হয়। এই দিনগুলো নিজে উদযাপন করুন এবং পরিবারের মানুষদের উদযাপনের ধরনগুলো শেখান। দেখবেন পথভ্রষ্ট হবে না বাংলাদেশ। শেকড়কে ভুলে কেউ বড় হতে পারে না। শোভাযাত্রায় যখন একসঙ্গে হেঁটে যাই আমার তখন সারা দেহ-মনে যেন এখনও অদ্ভুত এক দায়িত্ববোধ জন্মে। আজ এই ছুটির মধ্যেও যখন এত মানুষের সমাগম দেখলাম, নির্ভয়ে রাস্তায় নেচে-গেয়ে অংশ নিতে দেখলাম বিভিন্ন বয়সী নারী শিশুকে, তখন মনে হলো হতাশ হওয়ার মতো কিছু ঘটে নাই।

সর্বশেষ