ইসরায়েলকে অবশ্যই অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্পেনের একজন মন্ত্রী। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।সাক্ষাৎকারে স্প্যানিশ ওই মন্ত্রী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ইউক্রেন ও গাজায় বিশ্ব নেতারা দ্বৈত নীতি অবলম্বন করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
স্প্যানিশ ওই মন্ত্রীর নাম আইওন বেলারা। তিনি স্পেনের সামাজিক অধিকার বিষয়ক মন্ত্রী। আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পিত গণহত্যা’ চালানোর জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছেন। একইসঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
স্পেনের সামাজিক অধিকার বিষয়ক এই মন্ত্রী দেশটির কট্টর-বামপন্থি পোডেমোস পার্টিরও নেতা। তিনি ইউক্রেন ও গাজায় হওয়া অপরাধের বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের দ্বৈত নীতির নিন্দা করেছেন। আইওন বেলারা বলেছেন, ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করা হলেও গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের বিষয়ে বিশ্ব নেতারা ‘বধিরের মতো নীরব’ রয়েছেন।
বুধবার বেলারা বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রকে অবশ্যই ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এই পরিকল্পিত গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। আমরা অন্যান্য সংঘাতে মানবাধিকার নিয়ে জ্ঞান দিতে পারলেও এখানে সেটি পারছি না। বরং বিশ্ব বসে বসে এই ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখছে? হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, সন্তানদের হত্যার ঘটনা প্রত্যক্ষ করে গাজার মায়েরা মরিয়া হয়ে চিৎকার করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজার এই ঘটনাবলীর বিষয়ে অনেক দেশ এবং অনেক রাজনৈতিক নেতার বধির নীরবতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যারা (সংকট সমাধানে) কিছু করতে পারেন। আমি যা জানি সেটি নিয়েই কথা বলছি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে হচ্ছে ভন্ডামির প্রদর্শন করছে। ইউরোপীয় কমিশন যা দেখাচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, গাজায় হামলার প্রতিবাদে স্পেন ও অন্যান্য দেশগুলোর ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত।
প্রসঙ্গত, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত ৭ অক্টোবর ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।
হামাসের এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে দেড় হাজার ইসরায়েলি। নিহতদের মধ্যে তিন শতাধিক সেনাসদস্য রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরও সাড়ে ৪ হাজার ইসরায়েলি। এছাড়া সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকসহ কমপক্ষে আরও ২৪২ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
এরপর গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ হাজারে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শিশু এবং প্রায় ৩ হাজার নারী রয়েছেন।
এদিকে গাজার এই সংঘাত নিয়ে স্প্যানিশ নাগরিকরা উভয় সংকটে পড়েছেন। এল পাইস পত্রিকা কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে বন্দি হওয়া ইভান ইলারামেন্ডি মারা গেছেন। তিনি ইসরায়েলের একটি বসতিতে বসবাস করতেন।
সংকট শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে স্পেনও গাজা থেকে তার কিছু নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
আল জাজিরা বলছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তার সহযোগীদের ওপর দ্রুত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বেলারা ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও ইইউকে আগের মতো‘দ্রুত পদক্ষেপ’ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘তারা (ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে) প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। আমরা (গাজার ক্ষেত্রে) সুযোগ হারাচ্ছি। এই মুহূর্তে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ আমরা অনেক কিছু করতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার রাজনৈতিক বৃত্তকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসাবেও অভিহিত করেছেন আইওন বেলারা।