Sunday,8,December,2024
19 C
Dhaka
Sunday, December 8, 2024
Homeজাতীয়করোনা থাবায় মোংলা

করোনা থাবায় মোংলা

।। নরেশ চন্দ্র হালদার ।। 

বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা এখন বিপদজনক এক জনপদ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার প্রথম দিকে মোংলা নিরাপদ ছিল। আক্রান্ত বা মৃত্যুর কোন খবর ছিল না। লক ডাউন যথারীতি চালু থাকলেও সংক্রমন না থাকায় সাধারণ জনগণ বিষয়টাকে আমলে নেয়নি। মাস্কবিহীন চলাফেরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা, চুপি চুপি দোকানপাট খুলে বেচাকেনা করা এমনকি দোকান খোলার পক্ষে মিছিলও হয়েছে। ঈদের আগেভাগে লক ডাউ একটু শিথিল হলে মোংলার অলিগলি জনসমাগমে ভরে উঠে। স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা থাকলেও অনেকেই বিষয়টাকে আমলে নেয়নি। ঐ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থাররত মোংলার স্থায়ী বাসিন্দারা মোংলায় ঈদ করতে আসে। সরকারের সতর্কতা উপেক্ষা করে অতি উৎসাহী কিছু লোকজন ইচ্ছামত চলাফেরা করে।

অন্যদিকে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত কিছু লাইটার জাহাজের ভারতীয় লোকজন মোংলা বন্দরে বাজার করে থাকে। মোংলার মাছ বাজারে সব সময় ভিড় লেগে থাকে। সেখানে অনেককে মাস্কবিহীন চলাফেরা করতে দেখা যায়। মেইন সড়ক জনমানব শূন্য হলেও মাছ বাজার ও কাঁচা বাজারে লোকজনের অভাব নেই। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রে বার বার সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেও তা নিয়ে সাধারণ জনগণের কোন মাথা নেই। ফলে সংক্রমন দ্রুত ছড়াতে থাকে। ঈদের ১৬ দিনের মাথায় করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসারত অবস্থায় প্রথম মারা যায় শেলাবুনিয়া নিবাসী মোবাইল ব্যবসায়ী মোঃ নূর উদ্দিন (৪২)। এর পর মারা যায় চিলা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য নজরুল ইসলাম। শেলাবুনিয়া (বটতলা) নিবাসী জলির সরদার (৭৯)এবং কানাইনগর নিবাসী অশোক মন্ডল (৫০)ও একই ভাবে চলে যান না ফেরার দেশে। করোনার প্রকোপ এখন পৌরসভা ছাড়িয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে আন্দারিয়া গ্রামে একজন মারা গেছে এবং আরও কয়েকজনের আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। কোন কোন পরিবারে একাধিক সদস্যের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

প্রথম দিকে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার করোনা টেস্ট করালেও পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে এখন শুক্রবার বাদে সপ্তাহের ৬ দিনই করোনা টেস্ট করানো হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহ থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০% থেকে ৭০% এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। মোংলা থানা ও উপজেলা প্রশাসন আরও শক্ত অবস্থানে থেকে সবকিছু তদারকী করছে। ইতিমধ্যে ৩ দিন যানবাহন চলাচলের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। রোগী বহনকারী গাড়ী ছাড়া বাকি যানবাহন বন্দ থাকবে। আজ থেকে পুলিশের পাশাপাশি কোস্ট গার্ডও করোনা প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।

লেখক : প্রধান শিক্ষক, মোংলা, বাগেরহাট।

সর্বশেষ