নতুন কথা রিপোর্ট : এক ধাপে তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে ৫২ শতাংশ বাড়ানোর পর লিটারে মাত্র ৫ টাকা কমানোর কোনো সুফল পাবে না সাধারণ মানুষ। উলটো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার। লাভবান হবে একটি গোষ্ঠী। কাজেই এখন ৫ টাকা কমানোর মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার পক্ষে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দরকার হলে আর কিছু দিন অপেক্ষা করে এক ধাপে লিটারে কমপক্ষে ১৫ টাকা কমালে ভালো হতো। তখন পরিবহণ, কৃষিসহ সব সেক্টরে বাড়তি ব্যয় কমানো জন্য সংশ্লিষ্টদের বাধ্য করা যেত। এতে সাধারণ মানুষের উপকার হতো। এ অবস্থায় পরিবহণের ভাড়াসহ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোয় ব্যয় কমবে না। তারা বলেন, ৫ আগস্ট দাম বৃদ্ধির পর রাত ১টা থেকেই কার্যকর হয়েছে। জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা রাত থেকেই নতুন দামে তেল বিক্রি করেছেন। পর দিন থেকে সব ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে থাকে। এখন ৫ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে কী না সে বিষয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে যা ক্ষতি করার করে দিয়েছে। গত পাঁচ আগস্ট তেলের দাম লিটারে সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা বাড়ানোর কারণে গণপরিবহণের ভাড়া, পণ্যপরিবহণ ভাড়া, কৃষি খাতে সেচ, সারের দাম বেড়ে গেছে। এর ফলে মানুষের দৈনন্দিনসহ সব ধরনের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। নিত্যপণ্য বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ পড়েছে ভোগান্তিতে। এ পর্যায়ে লিটারে ৫ টাকা দাম কমানোর কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ আগস্ট ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা হয়েছে। এখন লিটারে ৫ টাকা কমার ফলে বাসের ভাড়া কি কমবে? পণ্য পরিবহণ ভাড়া কি কমবে? পণ্যের দাম কি কমে যাবে? এটা সরকারের কাছে ক্যাবের পক্ষ থেকে আমাদের প্রশ্ন। কারণ জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানোর ফলে মনে হচ্ছে না কোনো প্রভাব পড়বে। তাই সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ তেলের দাম আরও কমানো হোক। এতে জনসাধারণ উপকৃত হবে। একটু হলেও সব খাতে ব্যয় কমবে। সব ধরনের পণ্যের দাম কমবে। বাজারে যে এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হয়েছে তা কমে আসবে। এতে ভোক্তা স্বস্তিতে থাকবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেছেন, তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত লোকদেখানো হবে। এর কোনো সুফল পাবে না সাধারণ মানুষ। পেট্রোল, অকটেনের লিটারে এক ধাপে অন্তত ১৫ টাকা না কমাতে পারলে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আরও কিছু দিন অপেক্ষার পরামর্শ দেন তিনি। কারণ লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে গণপরিবহণ ভাড়া, কৃষি খাতের খরচ, পণ্য পরিবহণ, পণ্যমূল্য ফের সমন্বয় করা সম্ভব হবে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে একটি গোষ্ঠীর পকেটে টাকাটা চলে যাবে। আর দাম না কমালে টাকাটা সরকারি কোষাগারে থাকবে, যা জনকল্যাণমুখী যে কোনো খাতে ভর্তুকি দিলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। আমদানি শুল্ক মওকুফ ও বিশ্ব বাজারে তেলের যে পরিমাণ দাম কমেছে তাতে এক ধাপে লিটারে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব ছিল।
তিনি আরও বলেন, সরকার যাদের কথা চিন্তা করে দাম কমাচ্ছে তারাই যদি এর সুফল না পায় তাহলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে আমি নই। কারণ এক ধাপে অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোয় সব খাতে মানুষের ব্যয় যে পরিমাণ বেড়েছে, সেখানে ৫ টাকা কমিয়ে কোনো সেক্টরেই বাড়তি ব্যয় কমানো সম্ভব হবে না। কমানোর অঙ্কটা এমন হতে হবে, যাতে সব সেক্টরেই আলোচনার মাধ্যমে বাড়তি ব্যয় কমাতে বাধ্য করা যায়। সরকার যদি ৫ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমি বলব না কমানো উচিত। লিটারে কমপক্ষে ১৫ টাকা কমাতে না পারলে এখন না কমানোই ভালো। এ পর্যায়ে ৫ টাকা কমানো ঠিক হবে না। এই সিদ্ধান্ত হবে লোকদেখানো। তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে শিল্প কারখানার মালিকরা কিছুটা লাভবান হবে। সেটাও উল্লেখ করার মতো না।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। ওই সময় প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, কেরোসিন ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করা হয়। জ্বালানি তেলের নজিরবিহীন দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাস ট্রাক লঞ্চ ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। ঢাকায় ১৬ শতাংশ এবং দূরপাল্লার বাসে ২২ শতাংশ বাস ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি লঞ্চ ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সব ধরনের মানুষের ব্যয় হু হু করে বেড়েছে। এতে মধ্যবিত্ত, নিুমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের এখন ত্রাহি অবস্থা।