বুধবার,৩১,ডিসেম্বর,২০২৫
17 C
Dhaka
বুধবার, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫
প্রচ্ছদসারাদেশগাজিপুরে সাংবাদিক হত্যা-পিতার আহাজারি: ‘আমি খুনিদের বিচার চাই না, আমার ছেলেকে এনে...

গাজিপুরে সাংবাদিক হত্যা-পিতার আহাজারি: ‘আমি খুনিদের বিচার চাই না, আমার ছেলেকে এনে দাও’

স্থানীয় প্রতিনিধি: ‘কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো? আমি খুনিদের বিচার চাই না। তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।’ — কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমন আহাজারি করছিলেন সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের বাবা মো. হাসান জামাল। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েছেন তিনি; ক্ষণে ক্ষণেই মুর্ছা যাচ্ছেন এই বৃদ্ধ বাবা।

গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে সাংবাদিক তুহিনকে। পুলিশ জানায়, তুহিন সেদিন রাস্তায় একটি দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করছিলেন—যেখানে কয়েকজন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করছিল। বিষয়টি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা তুহিনকে ধাওয়া করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এলাকার একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে পুরো ঘটনার প্রমাণ মিলেছে বলে জানায় পুলিশ।

নিহত তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মো. হাসান জামাল ও সাবিহা খাতুন দম্পতির সর্বকনিষ্ঠ ছেলে। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। তার স্ত্রী মুক্তা আক্তারের সঙ্গে সংসারে রয়েছে দুই সন্তান—তৌকির (৭) ও ফাহিম (৩)।

শুক্রবার সকাল থেকেই ফুলবাড়ীয়ার ভাটিপাড়া গ্রামে ভিড় জমতে থাকে স্বজন, প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের। বেলা ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ৭৫ বছর বয়সী মা সাবিহা খাতুন বিলাপ করছেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “আমার ছেলে তুহিন বলেছিল, আম্মা, আগামী মাসে তোমাকে চোখের ডাক্তার দেখাবো। ডাক্তার যদি অপারেশন করতে বলে, অপারেশন করাবো। তুমি ভালো হয়ে যাবে। কোনো চিন্তা করো না।”

স্বজনরা জানান, তুহিন ২০০২ সালে ফুলবাড়ীয়া আল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৫ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স সম্পন্ন করে ভাই জসিম উদ্দিনের ব্যবসায় যুক্ত হন। পরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি নেন এবং ২০১২ সাল থেকে সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন। ২০০৯ সালে বড় ভাই জসিম ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর থেকে তুহিন ও ভাই সেলিম গাজীপুরে থাকতেন। সেলিম বর্তমানে পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

শুক্রবার বাদ জুমা গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় তুহিনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয় এবং মাগরিবের নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

ঘটনার পর নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম বাদী হয়ে বাসন থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বাসন থানার ওসি শাহীন খান বলেন, “আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অপরাধে জড়িত প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।”

সর্বশেষ