ইয়াসের মৃদু আঁচেই প্লাবিত উপকূল জনপদ
নতুন কথা ডেস্ক ॥ ‘ইয়াস’-এর আঘাতে লণ্ডভণ্ড ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চল। প্রলয়ঙ্করী এই ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে বাংলাদেশ এ যাত্রায় রক্ষা পেলেও মৃদু আঁচেই বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত বিস্তীর্ণ উপকূল জনপদ। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, মাছের ঘের। প্লাবিত বাড়িঘর। আশ্রয়হীন মানুষ ও গৃহপালিতপশুর স্থান এখন উচুঁ রাস্তার খোলা আকাশ। পানিবন্দী লাখো মানুষের একটাই আর্তনাত,“ত্রাণ চাই না-টেকসই বাঁধ চাই।” দাবি অযৌক্তিকও না। বছরের পর বছর যায়, কিন্তু এই জনপদের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় বাঁধগুলো সংস্কারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ফলে ফি বছর জলোচ্ছ্বাস, অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে বাঁধ ভেঙে অবর্ণীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয় উপকূলবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের।
জানাগেছে, সিডর, আইলা, আম্পানের মতো ইয়াস বাংলাদেশে দানবীয় তা-ব না চালালেও তার প্রভাবে সমুদ্রের জোয়ারের পানির স্রোতের আঘাতে উপকূলের ৯ জেলার ২৭ উপজেলায় বাঁধ ভেঙে ভৌত অবকাঠামো, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, ঘের ও পুকুর এবং রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মারা গেছেন ৮ জন। বিধ্বস্ত সেন্টমার্টিনসের একমাত্র জেটির পল্টুন, দ্বীপের বাঁধ ও সড়ক। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, নোয়াখালী, লহ্মীপুর, চট্টগ্রাম জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।-প্রাথমিকভাবে এ তথ্য জানিয়েছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বেড়িবাঁধ ভেঙে শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাস্তা ভেঙে বিচ্ছিন্ন এসব অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। খুলনার ৩০ টি পয়েন্টে প্রায় ৭৫ কিঃ মিঃ বাঁধ ভেঙে গেছে। মংলার ১০ গ্রাম প্লাবিত। নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে মোরড়লগঞ্জের অধিকাংশ রাস্তা। সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ফসলের জমি ও চিংড়ি ঘের।প্লাবিত উপকূল জনপদের মানুষের আহাজারি-এভাবে বাঁধ ভেঙে আর কত কাল প্রাণ হারাব, ফসল হারাব, বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হব! আমরা বাঁচতে চাই। শান্তিতে বসবাস করতে চাই। তাদের এই চাওয়া পূরণ হয় না। দুর্যোগ হওয়ার পর আলোচনায় আসে, কিন্তু তাদের কষ্ট লাঘব হয় না। ১৪ বছর আগের সিডরের তা-বের ক্ষত আজো বয়ে বেড়াচ্ছেন উপকূল জনপদের বাসিন্দারা। আঘাত হেনেছে বুলবুল, আইলা, মহাসেন, ফণী ও আম্পান। সেসব আঘাতের ক্ষত’ও বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে ‘ইয়াস’-এর প্রভাব। এভাবে বার বার ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারে বাঁধ ভেঙে এই জনপদের মানুষের কান্না বাড়ায়। এ কান্না যেন শেষ হওয়ার নয়! বহু আগে নির্মিত বেড়িবাঁধগুলো জানমাল রক্ষায় কোনো কাজে আসছে না। উপকূল জনপদের দরিদ্র মানুষের জীবন আরো বিপন্ন করে তুলেছে এই নাজুক বাঁধগুলো। আইলার সময়ে উদ্যোগ নেওয়া বাঁধগুলোর সংস্কার ও মেরামত কাজ গত ১ যুগেও শেষ হয় নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বেড়িবাঁধগুলো মেয়াদোতীর্ণ হয়েছে। বাঁধগুলো লবণাক্ত মাটি দিয়ে তৈরি। পানি বাঁধের মাটির গাঁথুনি দুর্বল করে ফেলে। এছাড়া বাঁধ ছিদ্র করে চেংড়ি ঘেরে লবণ পানি তোলার কারণেও এগুলো দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার করা উচিৎ। তারা বলছেন, বাঁধগুলোর উচ্চতা আরো ১০ ফুট বাড়াতে হবে। অন্যদিকে উপকূলবাসীর বক্তব্য, দুর্বল বাঁধের কারণেই এবার ইয়াসের মৃদু আঁচেই এমন ক্ষতি হয়েছে। তারা বলছেন, শক্ত ও মজবুত বাঁধের বিকল্প নেই। কিন্তু সেই মজবুত টেকসই বাঁধ কবে হবে! তা জানে না কেউ।