সোমবার,১৭,নভেম্বর,২০২৫
24 C
Dhaka
সোমবার, নভেম্বর ১৭, ২০২৫
প্রচ্ছদসীমানা পেরিয়েদক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং ট্রাম্পকে উপহার দিলো স্বর্ণের মুকুট

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং ট্রাম্পকে উপহার দিলো স্বর্ণের মুকুট

“এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা(এপেক) সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছে এক অনন্য সম্মান পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং ট্রাম্পকে উপহার দেন স্বর্ণের মুকুট। এটি প্রাচীন সিলা রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী মুকুটের প্রতিরূপ। এই প্রতীকী উপহারটি দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অচলাবস্থায় থাকা ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি এগিয়ে নিতে কূটনৈতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে” 

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা কিম ইয়ং-বম সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া শুল্ক আলোচনার বিস্তারিত বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে।তিনি বলেন, ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির মধ্যে রয়েছে ২০০ বিলিয়ন ডলারের নগদ বিনিয়োগ ও ১৫০ বিলিয়ন ডলারের জাহাজ নির্মাণ সহযোগিতা।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা চুক্তিতে পৌঁছেছি, প্রায় চূড়ান্ত করেছি। তবে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা জানান, আলোচনার ফলে দুই দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাধা দূর করার পথ খুলেছে। ট্রাম্পের এ সফর ঘিরে বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই হবে ট্রাম্প-শির প্রথম মুখোমুখি বৈঠক, যা দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর গিয়ংজুতে অনুষ্ঠিত হবে।

টোকিও থেকে আগমনের পর ট্রাম্প প্রথমে করপোরেট নেতাদের এক সভায় বক্তব্য দেন। জাপান সফরে তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বিরল খনিজ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসে মুকুটের পাশাপাশি তাকে দেওয়া হয় দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব। ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার এই প্রচেষ্টাকে বিশ্লেষকরা প্রতীকী কূটনীতি হিসেবে দেখছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিউলের বাণিজ্য সম্পর্ক গত আগস্ট থেকে অচলাবস্থায় ছিল। ওই সময় সিউল যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেও সরাসরি নগদ অর্থ পাঠানো তাদের অর্থনীতিকে নড়বড়ে করতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিল। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি নির্মাতারা যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়ছে, যা জাপানি ও ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় বড় অসুবিধা তৈরি করেছে। নতুন চুক্তি বাস্তবায়িত হলে সেই শুল্ক হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাণিজ্যের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতেও দুই দেশের নেতারা আলোচনা করবেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে মিত্রদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে। অন্যদিকে সিউল যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে শিথিলতা চায়, যাতে তাদের শিল্পকারখানায় কর্মী নিয়োগ সহজ হয়। এর আগে সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে হুন্ডাই ব্যাটারি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৩০০-র বেশি দক্ষিণ কোরীয় নাগরিককে আটক করা হলে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। প্রেসিডেন্ট লি সে সময় বলেছিলেন, যদি ভিসা নীতিতে পরিবর্তন না আসে, তবে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কারখানা স্থাপন দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানিগুলোর জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। ট্রাম্প তার বক্তব্যে জানান, চীনের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্ক কমানোর একটি প্রাথমিক কাঠামো ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে এবং তিনি আশাবাদী, এই সফরে ‘দুই দেশের জন্যই দারুণ এক চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হবে।

শি’র সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটলে ট্রাম্পের এশিয়া সফরের সফল পরিসমাপ্তি ঘটবে। তবে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে অগ্রগতি এখনও অনিশ্চিত। ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, আমি কিম জং-উনকে ভালোভাবে চিনি… তবে এবার সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে সাক্ষাৎ সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ