বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস নিয়ে অহেতুক ভয় পাওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা ব্যয় বেশি। রোগীভেদে চিকিৎসা ব্যয় কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম।
বুধবার (২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাবিষয়ক গাইডলাইনের প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থেকে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা আবশ্যক। সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। ছত্রাকবিরোধী ওষুধ বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ড্রাগ জরুরিভাবে প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকিসমূহ যেমন : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে আক্রান্ত অঙ্গের সার্জারি করতে হতে পারে বা কোনো কোনো সময় কেটে ফেলেও জীবন রক্ষা করতে হতে পারে। যেমন : রাইনাে-অরবিটাল-সেরেব্রাল সংক্রমণে নাক, সাইনাস বা চক্ষুকোটরের অপারেশন, আক্রান্ত অংশ অপসারণ, চক্ষু অপসারণ, এক্সেন্টারেশন ও ইন্ট্রাক্র্যানিয়াল সার্জারি অন্যতম।
বিএসএমইউ উপাচার্য বলেন, করোনা মহামারির সঙ্গে ভারতের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রাদুর্ভাবের সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে কয়েকটা রােগী পাওয়া গেলেও এই মুহূর্তে ভারতের মতো মহামারির আশংকা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার সকল চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের নিয়ে করোনা মােকাবিলায়, বিশেষ করে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। আইসিইউ ও বেড সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়িয়ে, হাইফ্লো অক্সিজেনের সরবরাহ সম্প্রসারিত করে এবং পূর্ণ উদ্যমে ভ্যাক্সিনেশনের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে।
তিনি আরও বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়েও সরকার, চিকিৎসক সমাজ, সাংবাদিক ও জনগণের মনে অহেতুক আতঙ্ত দূর করে সঠিক ধারণা ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে, দেশের প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করার পরিকল্পনা ও এটি সংকলণন করা হয়েছে।
ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতি এক লাখে ২০ থেকে ৩০ জনের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হতে পারে। এই রােগ ছোঁয়াচে নয়। বহু আগে থেকেই এই রােগের কথা জানা থাকলেও ইদানিং করোনা মহামারিতে ভারতে এর প্রকোপ দেখা যায়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, বিশেষত কিটো অ্যাসিডােসিসে আক্রান্তরা, ক্যান্সারে আক্রান্ত রােগী, অতিরিক্ত বা অপ্রয়ােজনীয় ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়ােটিকের ব্যবহার অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অত্যাধিক মাত্রায় বা অপ্রয়োজনীয় স্টেরয়েড গ্রহণ করা, কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রােগী এবং চরম অপুষ্টিজনিত রােগী, চামড়ায় গভীর ক্ষত ও পােড়া ঘায়েও এই রােগ হতে দেখা যায়। করোনা ভাইরাসে দীর্ঘমেয়াদে আক্রান্ত বা চিকিত্সাধীন রােগী এতে আক্রান্ত হতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মিউকর ছত্রাকের হাইফাগুলাে মানুষের রক্তনালীগুলোতে আক্রমণ করে, যা থেকে থ্রম্বোসিস ও টিস্যু ইনফেকশন, নেক্রোসিস এবং পরিশেষে গ্যাংরিন তৈরি করে। সুস্থ মানুষের রক্তে শ্বেত রক্তকণিকা বা নিউট্রোফিল এ ছত্রাকের বিরুদ্ধে মূল প্রতিরক্ষার কাজ করে থাকে। সুতরাং নিউট্রোপেনিয়া কর্মহীনতায় (যেমন : ডায়াবেটিস, স্টেরয়েড ব্যবহার ) বা এইডস আক্রান্তরা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। আক্রান্ত অঙ্গের ওপর ভিত্তি করে মিউকরমাইকোসিস রােগটি ছয় ধরনের হলেও রাইনাে-অরবিটাল-সেরেব্রাল রােগ নাক, নাকের ও কপালের সাইনাস, চোখ ও ব্রেইন বা মস্তিষ্কের সংক্রমণ করে বলে এটাই সবচেয়ে বিপজ্জনক। তাতে ফুসফুসীয়, আন্ত্রিক ত্বকীয় সংক্রমণও হতে পারে। আক্রান্ত অংশ আর নাকের শ্লেষ্মা, কফ, চামড়া ও চোখ কালাে রঙ ধারণ করে বলে একে ‘কালাে ছত্রাক’ নামে ডাকা হয়। আক্রান্তদের মধ্যে দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা না করতে পারলে ৫০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ রােগী মৃত্যুবরণ করে থাকে। আর সংক্রমণে মৃত্যুর হার ১০০ শতাংশ।