বুধবার,২৪,ডিসেম্বর,২০২৫
16 C
Dhaka
বুধবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫
প্রচ্ছদসম্পাদকীয়মুক্তমতবাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক লাল সীমানায়: বাংলাদেশ কি প্রক্সি যুদ্ধের কিনারায়! /?

বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক লাল সীমানায়: বাংলাদেশ কি প্রক্সি যুদ্ধের কিনারায়! /?

বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক লাল সীমানায়: রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে মুরব্বির মতো মন্তব্য: পাকিস্তানের ডনের কার্টুন: বাংলাদেশ কি প্রক্সি যুদ্ধের কিনারায়! /?
গত এক বছরের অধিক সময়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমাগত লাল সীমানার দিকে এগুচ্ছিল- এখন তা লাল সীমানা প্রায় ছুয়েছে। গত কয়েক দিনের দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা তাদের দূতাবাসের দিকে ধাবিত হয়েছে। বাংলাদেশে যেমন ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে মিছিল হয়েছে তেমনি ভারতেও বাংলাদেশের দূতাবাসের দিকে মিছিল হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারত স্ব স্ব দেশের দূতাবাসের কার্যক্রম প্রায় বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিবেশী দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা দূরবর্তী পাকিস্তানের নজর কেড়েছে। তাদের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন এক কার্টুনে বাংলাদেশকে বাঘ হিসেবে মোদির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অনেকটা যেন বাহবার ছলে যুদ্ধে প্ররোচিত করা। এই ধরনের একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত গতকাল এক মন্তব্যে উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের মুরব্বিসুলভ পরামর্শ দিয়েছে। পরামর্শটা সময়োপযোগী।
এখানে উল্লেখ করা যায় যখন প্রতিবেশী দেশগুলো যুদ্ধের দিকে ধাবিত হয় তখন পরাশক্তিসমূহ উত্তেজনা প্রশমনের পরামর্শ দেয় এবং কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়।  যেমন সাম্প্রতিক ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্র তার কূটনৈতিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে সর্বাত্তক যুদ্ধ থেকে দুই দেশকে বিরত করেছে। এই স্থিতি অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের সাথে সামরিক চুক্তি বা সমঝোতা করে নেয়। ভারত এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের হাতের বাইরে রাশিয়ার সাথেও সামরিক চুক্তি করে রেখেছে। উপমহাদেশে রাশিয়া এখন ১৯৭০-৭১ সালের ভূমিকার পুনরাবৃত্তির দৃশ্যে হাজির হয়েছে।  যদিও রাষ্ট্রদূত বলেছেন তারা কোনো পক্ষ নয়। এর কূটনৈতিক মানে হলো তারা বাংলাদেশের পক্ষে নয় কারণ বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার বাণিজ্য বিনিয়োগ থাকলেও সামরিক চুক্তি নেই। এটা আরও পরিষ্কার হয় যখন রাশিয়া বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের কথা মনে করিয়ে দেয়।
এটা যদি পাকিস্তানের পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখা যায় তবে তারা বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতিতে ফায়দা নিতে চাইবে। তাতে ভারতকে টাইট দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে তারা প্রক্সি হিসেবে কাজে লাগাতে পারবে। তাদের ধারণা বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতি তাদের জন্য কিছুটা সহায়ক। কারণ বাংলাদেশের সাথে সম্প্রতি  পাকিস্তানের সামরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এটাি সব নয়। বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়া  পাকিস্তান এককভাবে প্রক্সী যুদ্ধে ঠেলে দিতে  পারবে না।  বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনীতি কূটনৈতিক লাইনেই এগুচ্ছে।  বাংলাদেশে ভারতবিরোধী হাইপ চলছে।  ভারতে বাংলাদেশ বিষয়ে সর্বদলীয় ঐক্য বাড়ছে।  সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ জনগণ এই উত্তেজনার কুফল ভোগ করবে। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক মানবিক সংকট তৈরি করবে যা প্রতিবার ভারত পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতিতে দেখা যায়। কারণ সীমান্তে ভারত পাকিস্তানের সংস্কৃতির মিল আছে।  একইভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের ক্ষেত্রেও তাই।  তাছাড়া,  বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তিধর দেশ নয়। আর এই উত্তেজনায় লাভবান হয় উভয় দেশের উগ্রবাদী মতবাদ।
বাংলাদেশের সামনে জাতীয় নির্বাচন আর পশ্চিম বঙ্গে রাজ্যসভা নির্বাচন। বাংলাদেশের রাজনীতি উগ্রবাদীদের হাতে গেলে বিজেপি লাভবান হবে পশ্চিম বঙ্গে। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আজ যে কথা বলেছেন তাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ কম। রাষ্ট্রদূত জানেন কূটনৈতিক বিপর্যয় সামরিক সংঘর্ষের দিকে ধাবিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সামরিক সংঘর্ষে যুক্ত হতে পারে না। রাজনীতি এখনো অন্তর্বর্তীকালীন। জনগণ যদি তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে তবে দুই দেশের ভবিষ্যত কূটনীতি কি হবে তা সেই নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই নির্ধারণ করতে পারবে।  একটা দেশ অতি উগ্রবাদী পজিশন নিলে তার পরিণতি কি হয় তার জ্বলন্ত উদাহরণ ইউক্রেন।  রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের উপদেশ সকলের কানে বাস্তবতার রূপ তুলে ধরুক।
লেখক- শরীফ শমশির
লেখুক ও গবেষক

সর্বশেষ