বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী
- তিন পদে বিজয়ী ১৩৮৩
- চেয়ারম্যান ৩০২
- মেম্বার ৭৭৯
- সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ৩৩২
- ২০টি ইউনিয়নে ভোট’ই লাগে নি
নতুন কথা প্রতিবেদন ॥ নির্বাচন মানেই ভোট উৎসব। তবে সবচেয়ে বেশি উৎসবমূখর নির্বাচন হলো তৃণমূলের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। এবার সে উৎসব অনেকটাই ম্লান। দেশজুড়ে চলছে চতুর্থ ধাপের নির্বাচনী প্রচারণা। তবে নির্বাচন পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন হয়নি অনেক চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সদস্য (মেম্বার) ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড সদস্যদের। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও শরীয়তপুরের মোট ২০ ইউনিয়নে কোনো প্রয়োজন হয় নি। কারণ তারা ভোট ছাড়াই জয়ী হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিন পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন ১ হাজার ৩৮৩ জন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩০২ জন, মেম্বর পদে ৭৭৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৩৩২ জন-এ তথ্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। সামনে আরো দুই ধাপের নির্বাচন শেষে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন ইসির সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনে বহু ইউনিয়নে উৎসবের আমেজ না থাকলেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ভয়াবহ আকারে। চার ধাপের নির্বাচনে সহিংসতায় প্রাণহানি হয়েছে ৭২ জনের।
জানাগেছে এবার নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও ওই দলের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনে আছে আরো অনেক রাজনৈতিক দল। কিন্তু এবার দেশের বেশির ভাগ ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে আওয়ামী লীগ বনাম বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ। ক্ষমতা বনাম ক্ষমতার লড়াইয়ে শক্তির দৌড়ে যিনি এগিয়ে আছেন, তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা ভোট যুদ্ধে জয়ী হচ্ছেন। তবে বিনা ভোটে নির্বাচিতদের মধ্যে তিন পদের প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত। চার ধাপের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত ৩০২ জনের মধ্যে ৩০১ জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। গণমাধ্যম সূত্রে জানাগেছে, এবারে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউপির সব কয়টিতে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা মেম্বার পদে সবাই ভোট ছাড়াই পাস করেন। ওই উপজেলায় কোনো ভোট লাগে নি। একই অবস্থা কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পাঁচ ইউপিতে। সেখানেও সব কয়টি পদে ভোট ছাড়াই পাস করে। শরীয়তপুরে একটি ইউপিতে একই ঘটনা ঘটে।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন। এ ধাপে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৪৮ জন। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে ১১২ জন এবং মেম্বার পদে ১৩৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান পদে ১০০ জন, মেম্বার পদে ৩৩৭ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে ১৩২ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন ৮১ জন। এ ধাপে মেম্বার পদে ২০৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে ৭৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার আগে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই দফায় অনুষ্ঠিত ভোটে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন ৭৩ জন। এছাড়া মেম্বার পদে ৭৪ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে ১২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। অন্যদিকে এবারের ইউপি ভোটে প্রভাব বিস্তার, সহিংসতা অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি। এ পর্যন্ত ভোট সহিংসতায় ৭২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সহিংসতার অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের নিজেদের মধ্যে। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে জোর করে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ খোদ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই।