॥ অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী ॥
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন রংপুরের আদিবাসী পল্লীর গর্বিত সন্তান মোহন চন্দ্র ভগত। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী শিবচন্দ্র রায় কলেজের অদম্য মেধাবী এই কৃতি শিক্ষার্থী ২০২০- ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েদর্শন বিভাগে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন। আদিবাসী (ওঁরাও) সম্প্রায়ের মেধাবী এই তরুণ মোহন চন্দ্র ভগতের এই গৌরব সাফল্যে আমাদের বুকটা ভরে গেছে। তোমাকে সেলুট। শিবচন্দ্র রায় কলেজ পরিবারের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী’র দিনমজুর পরিবারের এই অদম্য মেধাবী সন্তানের উচ্চশিক্ষা অর্জনের পথ যাতে অর্থাভাবে বিনষ্ট না হয়, সেজন্য শিবচন্দ্র পরিবারের সবাইকে জাগ্রত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে শিবচন্দ্র রায় কলেজ আর্থিকভাবে তার উচ্চশিক্ষার পথ প্রশস্ত করতে হাত বাড়িয়েছে। এলাকার সাংসদ, বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তিনিও সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন। মোহনচন্দ্র ভগতের আগুয়ান যাত্রাপথে তাকে সহযোগীতা করেছে তার কলেজের শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। কৃতজ্ঞতা জানাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিবচন্দ্র রায় কলেজ পরিবারের মেধাবী ছাত্র আনিসুর রহমান, রণি, শামিম ও তরিকুলকে। দারিদ্র্যের শৃঙ্খলে আবদ্ধ অদম্য মেধাবী এই সন্তানের উচ্চশিক্ষার পথ মসৃণ করতে সকল স্তরের সাংবাদিক, কলামিস্ট বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি। দৃষ্টি আকর্ষণ করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়সহ সকলের প্রতি। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ‘অদম্য শিক্ষা বৃত্তি’র’ সুযোগ যাতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এই মেধাবী সন্তানও পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
হালুয়া-রুটি ভাগাভাগির রাজনীতির কঠিন রসায়ন আমি বুঝি না। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে গরিব ঘরের মেধাবী সন্তানদের সুশিক্ষায় উজ্জীবিত বা সহযোগিতার নাম যদি রাজনীতি হয় তাহলে সেই রাজনীতি ‘শিবচন্দ্র রায় পরিবারের’ সকল সদস্যকে করতেই হবে। এই শিক্ষা দিয়েছিলেন রংপুরের প্রজাবিদ্রোহের মহানায়ক, ইটাকুমারীর মানবপ্রেমিক জমিদার রাজা শিবচন্দ্র রায়। আদিবাসীরাই ছিলেন ১৭৮৩ সালের রংপুরের কৃষক বিদ্রোহের লড়াকু সৈনিক। ছিলেন প্রজাহিতৈষী জমিদার শিবচন্দ্র রায়ের ‘জমিদারবাড়ি’ সুরক্ষায় নিয়োজিত বিশ্বস্ত তীরন্দাজ বাহিনী। প্রজাবিদ্রোহে আদিবাসীদের ভূমিকা ছিল অনন্য। এই আদিবাসীরাই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ‘রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও’ অভিযানে দুঃসাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। শিবচন্দ্র রায় কলেজ প্রতিষ্ঠার কল্যাণেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের সন্তান মোহন চন্দ্র ভগত উচ্চশিক্ষার সেরা বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অনন্য গৌরবের উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছে। তার গৌরবে ইটাকুমারীর আদিবাসী পল্লীতে বইছে আনন্দের উচ্ছ্বাস। উচ্ছ্বাসিত আমরাও। আলোকবর্তিকার এই প্রাণশক্তি জাগিয়ে রাখতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর। ‘জাগাও আলো আরো আলো’ জাগাও প্রাণশক্তি সকল শিক্ষার্থী’র প্রাণে, সকলের ঘরে ঘরে। বৈষম্যপীড়িত অসমান সমাজের হতদরিদ্র পিছিয়ে পড়া অদম্য সাহসী সন্তান মোহন চন্দ্র শিক্ষা সংগ্রামের কষ্টকর বিজয়গাঁথা কেউ বলুক না বলুক আমি উচ্চকণ্ঠে বলবই। বলবো রাষ্ট্র ও সমাজের অবহেলা, অবজ্ঞার নানামুখী প্রতিকূলতা ভেঙে অক্লান্ত পরিশ্রম আর হার না মানা অদম্য ইচ্ছাশক্তির কল্যাণে মোহন চন্দ্র এ জায়গায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। আদিবাসী সমাজের মোহন চন্দ্র ‘অরুণোদয়ের’ অগ্নিরথ হয়ে বেঁচে থাকুক আমাদের জীবনে-এই প্রত্যাশায় ভালো থেকো বাবা, শুভ কামনা।
লেখকঃ পলিটব্যুরোর সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।