Saturday,7,December,2024
21 C
Dhaka
Saturday, December 7, 2024
Homeজীবন সংগ্রামরানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির ৮ বছর- আজো বিচার পেলনা হতভাগ্য শ্রমিকরা

রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির ৮ বছর- আজো বিচার পেলনা হতভাগ্য শ্রমিকরা

ক্ষতিপূরণ ও কারখানা আইন সংশোধনের দাবি করলেন শ্রমিক নেতা কামরূল # শহীদদের প্রতি স্কপের শ্রদ্ধা নিবেদন

নতুন কথা প্রতিবেদন: ২৪ এপ্রিল। ঐতিহাসিক রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস। ২০১৩ সালের এ দিনেই সাভারে রানাপ্লাজা নামে একটি ভবন ধসে ১ হাজার ১ শ’ ৩৭ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন ২ হাজার ৪ শ’ ৩৮ জন। ঘটনার ৮ বছর পরেও হতভাগ্য শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবার কোনো বিচার পেল না। আজো উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত রয়েছে নিহত শ্রমিক পরিবার। আর পুঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছেন আহত শ্রমিকরা। ফি বছর ২৪ এপ্রিল এলেই কেবল রানাপ্লাজার শ্রমিকদের কথা স্মরণ করা হয়। গণমাধ্যমে অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়, কিন্তু ওই সব হত্যভাগ্য শ্রমিকের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। নতুন করে বাঁশখালির মতো শ্রমিকের বুকে চলে গুলি, আবার আগুনে পোড়ে শ্রমিকের দেহ। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে ভবন ধসে, আগুনে পুড়ে কিংবা গুলিতে মরছেন শ্রমিক। আর তদন্ত কমিটি অথবা শ্রমিক বিক্ষোভ ঠেকাতে নেওয়া হয় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখে না। শ্রমিকদের এই ভয়াবহ পরিণতি থেকে মুক্তির উপায় কী-এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কপের অন্যতম নেতা জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শ্রমিক নেতা কামরূল আহসান নতুন কথা’কে বলেন,“ বাংলাদেশের মামলাগুলো যেভাবে কচ্ছপের গতিতে চলে, রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির মামলাও তেমনি গতিতে চলছে। জনগুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এই মামলাকে যেভাবে এগিয়ে নেওয়ার কথা না নেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, দিবসগুলো আসলে আমরা কিছু কথা বলি, কিন্তু দিবসটি চলে গেলেই ভুলে যাই। আর ভুলে যাই বলেই নতুন ঘটনা ঘটে। এবার বাঁশখালির ঘটনায় আমরা শ্রমিক নেতারা বিচারবিভাগীয় তদন্ত ছাড়াও গণতদন্ত দাবি করেছি। যেখানে শ্রমিকদের প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও গণতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে আর কেউ শ্রমিক নির্যাতন ও হত্যা করতে সাহস পাবে না।”
শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে শ্রমিক নেতা কামরূল আহসান বলেন,“ আমরা এবার দাবি তুলেছি, ক্ষতিপূরণ আইন সংশোধন করতে হবে। রানাপ্লাজায় নিহত শ্রমিক পরিবার ও আহত শ্রমিকদের জন্য ভবন নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া রানাপ্লাজা ওই স্থানে একটি স্থায়ী স্তম্ভ নির্মাণ করতে হবে, যাতে শ্রমিক ও দেশবাসী সারাজীবন রানাপ্লাজার শ্রমিকদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা করতে হবে। একই সাথে তিনি শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য কারখানা আইনেরও সংশোধন করতে হবে। এসব করার মধ্যদিয়েই শ্রমিকের জীবন ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।”
এদিকে বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে ৮ বছরেও রানাপ্লাজা ট্র্রাজেডিতে করা ৩ টি মামলার একটিরও বিচার শুরু হয় নি। প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুলটির নিষ্পত্তিও হয় নি। ফলে নিহত শ্রমিক পরিবার ও আহতরা আজও ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

রানাপ্লাজা হত্যাকাণ্ডে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতীয় শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্যপরিষদ (স্কপ) নেতৃবৃন্দ। ২৪ এপ্রিল সকালে জুরাইন কবরস্থানে স্কপ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, সাইফুজ্জামান বাদশা, সুলতান আহমেদ, মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে এবং সকাল ১০ টায় সাভারে রানাপ্লাজা শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে স্কপ নেতা কামরুল আহসান, আব্দুল ওয়াহেদ, আহসান হাবিব বুলবুল, এড.আব্দুল আওয়াল এর নেতৃত্বে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, ৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও রানাপ্লাজা ধ্বসে ১১৩৬ জন শ্রমিকের তাৎক্ষণিক মৃত্যুর মতো নির্মম ঘটনার আভিযোগ পত্র দিতেই সময় নেওয়া হয়েছে ৩ বছর আর ৮ বছর পরও বিচার সম্পন্ন হয় নি। ভবন মালিক সোহেল রানা ব্যাতিত অভিযোগ পত্রের ৪১ জন আসামির আর কেউ কারাগারে নেই। বিচারহিনতার এই ধরণের দৃষ্টান্তের জন্যই স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও ৮ ঘন্টা কাজ, বকেয়া বেতনের দাবি করায় শ্রমিকদের গুলি করে হত্যা ঘটনা ঘটছে। নেতারা বলেন, অবিলম্বে রানাপ্লাজা ধসসহ কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক হত্যার জন্য দায়িদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানেরর পদক্ষেপ নিন।

সর্বশেষ