নতুন কথা প্রতিবেদন:মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য এ বছর ৩৫ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রæতি মিলেছে। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। ২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলন থেকে এ প্রতিশ্রæতি আসে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। ভার্চুয়াল এই সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট দেশ ও সংস্থা ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি ২০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় তা ১ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৯ কোটি ৬০ লাখ দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। আর যুক্তরাজ্য ৪ কোটি ৭৫ লাখ পাউন্ড দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। প্রতি পাউন্ড ১১৫ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা।
এদিকে গত তিন বছরের তথ্যে দেখা গেছে, চাহিদার বিপরীতে ক্রমেই সহায়তার হার কমছে। এখাতে তিন বছরে অর্থের চাহিদা ছিল ২৩০ কোটি ডলার। কিন্ত দাতারা দিয়েছে ১৬০ কোটি ডলার; যা মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ। এ কারণে রোহিঙ্গাদের পেছনে বাংলাদেশ সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছে ২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। আবার ভাসান চরে আবাসন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে আরও তিন হাজার ১শ’ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বড় ধরনের চাপে পড়েছে বাংলাদেশ।
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৭টি সংস্থা বাংলাদেশকে তহবিল দিয়েছে। এগুলো হলো-জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম, বিশ্বখাদ্য সংস্থা ডবিøউএফপি, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএ, জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডবি¬উএইচও এবং নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন ওম্যান।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য মোট তহবিলের প্রয়োজন ছিল ৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্রতি ডলার ৮৬ টাকা হিসাবে স্থানীয়মায়ানমার,রোহিঙ্গা, মুদ্রায় যা ৩ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। কিন্ত এই ৭ সংস্থা মিলে দিয়েছে ৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা মোট চাহিদার ৭৩ শতাংশ। বাকী ২৭ শতাংশ বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করতে হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার চাহিদা বিপরীতে দাতাদের কাছ থেকে এসেছে ৬৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা মোট চাহিদার ৬৯ শতাংশ। ২০১৯ সালে ৯২ কোটি ডলার চাহিদার বিপরীতে এসেছে ৫৫ কোটি ডলার। যা মোট চাহিদার মাত্র ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ সহায়তার হার ক্রমেই কমে আসছে।
অন্যদিকে দাতাদের মাধ্যমে যে অর্থ আসছে তার ৩৩ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা এবং তাদের সহযোগী এনজিওদের পরিচালন ব্যয় মেটাতে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন ওম্যান। সংস্থাটি মোট তহবিলের ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যয় করেছে পরিচালক খাতে। বাকী ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করেছে মূল কর্মসূচিতে। এছাড়া ইউএনএইচসিআরের পরিচালন ব্যয় ২৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ইউএনএফপিএ ১৮, ডবিøউএইচও ১৭, আইওএম ১৪ দশমিক ৭, ডবিøউএফপি ১০ দশমিক ৩ এবং ইউনিসেফ ৩ শতাংশ পরিচালনা খাতে ব্যয় করেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কম পরিচালন ব্যয় ইউনিসেফের। এছাড়া বর্তমানে ১৮৩টি এনজিও রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে। এদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে। বিদেশী অর্থে এসব এনজিও’র কর্মকর্তারা বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
ট্রিপল আরসির সর্বশেষ তথ্য অনুসারে-দেশে মোট নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ১১ লাখ ১৯ হাজার জন। এরমধ্যে আশ্রয় প্রার্থী ৭ লাখ ৪২ হাজার। এদের জন্য ৬ হাজার ৫শ’ একর জমিতে মোট ৩২টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে ঘরের সংখ্যা ২ লাখ ১২ হাজার ৬০৭টি। দুই প্রক্রিয়ায় ৮ লাখ ৬৭ হাজার ১৯জনকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে সাধারণ খাদ্য বন্টনের আওতায় ৪ লাখ ৬৩ হাজার এবং ই-ভাউচারের আওতায় ৪ লাখ ৫ হাজার।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবসানে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফেরত নেয় নি মিয়ানমার। এ কারণে হতাশ বাংলাদেশ। শুধু সাহায্য না দিয়ে রোহিঙ্গারা যেন দ্রæত ফেরত যেতে পারে সে পরিবেশ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাজ করা উচিত।