নতুন কথা প্রতিবেদন: করোনার শুরুতে ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। সবাই ত্রাণ বিতরণে যতটা না তৎপর ছিল, তার চেয়েও বেশি দৌড়ে ফাস্ট হতে চেষ্টা করেছে ফেসবুকে তার ছবি দিতে। কিন্তু এবার পর পর তিন দফা লকডাউনে অভাবী মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করলেও কোথাও ত্রাণ তৎপরতা নেই বললেই চলে। কর্মহীন শ্রমজীবী অভাবী মানুষের পরিবারে চলছে হাহাকার।
গতবছর সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ ত্রাণ তৎপরতার দৌড়ে নগদ অর্থ থেকে শুরু করে চাল ডাল তেল চিনি পেঁয়াজসহ যাবতীয় নিত্য প্রয়োজনীয় ও ভোগ্য পণ্য পৌঁছে গিয়েছিল হতদরিদ্র, গরীব ও নি¤œ আয়ের মানুষের কাছে। জনপ্রতিনিধি, শিল্পপতি ব্যবসায়ি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনও বিভিন্ন সোর্স থেকে ত্রাণ নিয়ে হাজির হয় অসহায় মানুষের দ্বারে। এ কারণে প্রায় তিন মাস লকডাউন থাকার পরও মানুষের দুঃখ-কষ্ট খুব একটা আঁচ করা যায় নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ত্রাণ সহায়তার চিত্র প্রতিদিন উঠে আসে। কিন্তু এবার চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন।
চলমান লকডাউনে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরের হত দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষের করুন অবস্থা। তারা কাজ হারিয়েছেন। আয়-রোজগার বলতে কিছু নেই। এ কারণে চরম কষ্টে তাদের দিন কাটছে। কিন্তু সরকারি বেসরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সহায়তা তারা পাচ্ছেন না। এদিকে লকডাউনের ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
লকডাউনে কষ্টে আছেন পরিবহন শ্রমিক, হোটেল-রেস্তুঁরা শ্রমিক, ডেইলি লেবার, কুলি-মজুর, সেলুন কর্মচারি, দোকান-কর্মচারি, ফুটপাথের ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক, বেসরকারি ক্ষুদ্র কোম্পানির চাকরিজীবী, কলকারখানার ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। কেউ কেউ রিক্সা চালানো কিংবা তরি-তরকারি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। কিন্তু রাস্তায় লোকজন কম থাকায় আয় যা হচ্ছে তা একেবারেই কম। এরই মধ্যে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। সব মিলে কাজ হারানো মানুষগুলোর সামনে শুধুই অন্ধকার।
ঢাকায় তিন লাখের বেশি পরিবহণ শ্রমিক রয়েছে। চট্টগ্রামে আছে অন্তত ৮০ হাজার। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় তারা মারাত্মক অর্থকষ্টে পড়েছেন। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বিভিন্ন জায়গায় ধরণা দিচ্ছেন ত্রাণ সহায়তার জন্য। নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু কোনো সহায়তার আশ্বাস মিলছে না। এছাড়া রয়েছে ফুটপাতের হকার ও দোকান কর্মচারি। লকডাউনে তাদের অবস্থাও করুন। যিনি জুতাই সেলাই তথা মুচির কাজ করেন তার রোজগারও বন্ধ।
এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি জেলা প্রশাসনকে ত্রাণ তৎপরতা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রতি জেলা প্রশাসনকে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশাবলী দলের দফতর থেকে জেলা-উপজেলা-থানাপর্যায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের দাবি সেই সাহায্য যেন প্রকৃত মানুষ পান তার পদক্ষেপও নিতে হবে।