আইনের বাতিঘরের চিরবিদায়:ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

নতুন কথা ডেস্ক:প্রকৃতির অমোঘ সত্য মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু কিছু মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। চলতি বছর একে একে বিদায় নিচ্ছেন দেশের উজ্জ্বল নক্ষত্রসমূহ। ড. আনিসুজ্জামান, কামাল লোহানী ও মাহবুবে আলম সহ আরো অনেকের পর চলে গেলেন সুপ্রীমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিকুল-উল হক। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। গত ২৪ অক্টোবর রাজধানীর আদ্-দ্বীন হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইনের এই বাতিঘর চিরবিদায় নেন। তার মৃত্যুতে আইন অঙ্গনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়ের অবসান হলো। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে দেশের মানুষকে আইনি সহায়তা দানকারি এই আইনজ্ঞের জন্ম ১৯৩৫ সালে কলকাতার সূবর্ণপুর গ্রামে। বাবা মুমিন-উল হক পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। আর মা নূরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিনী। চিকিৎসক স্ত্রীকে হারিয়েছেন আরো কয়েক বছর আগে।
ব্যারিস্টার রফিকুল হকের মৃত্যুতে কেবল তার পরিবার’ই নয়, দেশবাসীও শোকাহত। কারণ এই মৃত্যুতে দেশের আইন, সমাজসেবা এবং সত্যের পক্ষে লড়াইয়ে এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হলো, যা পূরণ হবার নয়। তিনি ছিলেন নির্ভীক ও স্পষ্টবাদী মানুষ। নির্লোভী এই মানুষটি কখনো নিজের স্বার্থের কথা ভাবেন নি। অ্যাটর্নি জেনারেলের বেতনও গ্রহন করেনি। মানুষের জন্য কাজ করেছেন। কেবল আইনে নয়, চিকিৎসা ও সমাজ সেবায় তার অবদান অপরিসীম। ছিলেন একাধি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু সকলেই তার প্রতি আস্থা রেখেছেন। আইনি লড়াই করেছেন আপোসহীনভাবে। বঙ্গবন্ধু থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক রাজনৈতিক নেতার জন্য আইনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। কেবল মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে ’৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতাদের পক্ষে দাঁড়ান নি। বরং তাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন। দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় তিনি বরাবরই সোচ্চার ছিলেন।
বয়োজ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সমাজহিতৈষী ব্যারিস্টার রফিকুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান। শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা।
এক শোক বার্তায় কমরেড মেনন-বাদশা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, কেবল আইন পেশার ক্ষেত্রেই নয়, সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে তার অগাধ জ্ঞান এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছে। আইন পেশার বাইরেও তিনি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সমাজকর্মে এই বয়সেও নিবেদিত ছিলেন। শোকাহত নতুন কথা পরিবার।