বৃহস্পতিবার,২৫,এপ্রিল,২০২৪
29 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়উপ-সম্পাদকীয়করোনাকালে মে’দিবস

করোনাকালে মে’দিবস

।। কামরূল আহসান ।।

কামরূল আহসান

২০২১ সালের ১লা মে, মহান মে দিবসের ১৩৫তম বার্ষিকী। প্রায় এক শতাব্দি পর বিগত ২০১৯ এর ডিসেম্বর মাস থেকে পৃথীবি জুড়ে করোনা নামের এক ভয়ানক মহামারি (কভিড-১৯ ) দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল যা এখনো আছে। সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশে দেশে সংগনিরোধ বিধি বাধ্যকতা বাস্তবায়নে লকডাউন চলায় উৎপাদন কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়েছিল; স্বাভাবিক কর্মজীবন স্থবির হয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ মার্চ ২০২০ থেকে এই করোনা ভাইরাস সংক্রমন কবলিত হলে লকডাউনের কারণে প্রথম দফায় প্রায় পয়ঁতাল্লিশ দিনের অধিক সময় মানুষ এক প্রকার গৃহবন্দি হয়ে পড়েছিল। জনজীবন থমকে গিয়ে অর্থনীতির চাকা নিস্ক্রীয় হওয়ার উপক্রম হয়।
তেমন কঠিন ও জটিল পরিস্থিতিতেও জনজীবন সচল রাখতে, নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী উৎপাদন ও সরবরাহ অব্যাহত রাখতে, মানুষের চাহিদা পুরনে শ্রমিকেরা নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। কঠিন ঐ পরিস্থিতিতে ঐ সকল সাহসী মেহনতী মানুষের শ্রমে থমকে যাওয়া জনজীবন সচল হয়েছিল। অথচ করোনার প্রথম প্রবাহের আঘাতে দেশে জিবিকা হারিয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক শ্রমজীবি মানুষ, গার্মেন্টস সেক্টরেই কর্মচ্যুত হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ শ্রমিক। যদিও সরকারের ঘোষনা ছিল লকডাউন ছুটিতে কোন কারখানা বন্ধ হবেনা, কোন শ্রমিক ছাঁটাই হবেনা।
অন্য দিকে করোনা মহামারি প্রতিরোধ মোকাবেলা ও চিকিৎসায় হাজারো চিকিৎসক, নার্স, হেল্থ টেকনোলজিষ্ট, স্বাস্থ্যকর্মি, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কর্মি বাহিনী, এ্যাম্বুলেন্স চালক, পরিচ্ছন্নতা কর্মি যারা মহামারি প্রতিরোধের সম্মুখ সারির যোদ্ধা; যারা এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ক্লান্তিহীনভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ্য করতে দিনরাত শ্রম দিয়েছেন, এখনো দিচ্ছেন। এ সকল যোদ্ধারা অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ও মেডিকেল যন্ত্রপাতি ছাড়াই কাজ করছেন। করোনা মোকাবেলায় সম্মুখ সারির এসকল যোদ্ধারা অনেকেই করোনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ সকল মহান যোদ্ধাদের প্রতি জাতির সম্মান জানানো উচিৎ।
গত বছর লকডাউন ও সংগনিরোধ বিধি বাধ্যকতার কারণে মে’দিবসের কোন কর্মসুচি পালন করা যায়নি। এখন আবার নতুন করে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। এখন করোনার দ্বিতীয় পর্যায় চলছে, প্রতিদিন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিন শতকের কোটায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এবারোও হয়তো মে’দিবসের কর্মসুচি পালনে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে।
সরকার করোনা মহামারি মোকাবেলায় নতুন করে গত ৫ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন কর্মসুচি নিয়েছে। কিন্তু কঠোর এই লকডাউনে সরকার সবকিছু বন্ধ করার ঘোষনা দিয়ে শুধু অর্থনীতির চাকা সচল রাখার কথা বলে শিল্প-কলকারখান খোলা রেখে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের নির্দেশ করেছে। এর আগে বিশেষ করে মালিক পক্ষের শক্তিশালী গ্রুপ গার্মেন্টস মালিকরা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল লকডাউনে কারখানা বন্ধ রাখলে তাদের ভিষণ ক্ষতি হবে। মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ফরমান জারী করা হয়েছিল শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও কর্মে যোগদানের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে তবেই মালিক কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা চালাবে। বাস্তবে এগুলো বাস্তবায়নে মালিক পক্ষ চরম দায়হীন আচরণ করছে। শ্রমিকরা স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেটে অথবা পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এটা নিরিক্ষণ ও বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ হলো সরকারের ‘কল-কারখানা পরিদর্শন’ অধিদপ্তর। তারা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যনিরাপত্বাবিধান ও কর্মেক্ষেত্রে শ্রমিকদের যাতায়তে পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতে মালিকদের বাধ্য করতে ব্যর্থ হয়েছে ।
করোনা মহামারীর মধ্যেই চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারায় ব্যক্তিমালিকানাধিন কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং রোজার মধ্যে ৮ ঘন্টা কর্মদিবস বাস্তবায়নসহ ১০দফা দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে পাঁচজন শ্রমিককে হত্যা, অর্ধশত শ্রমিককে আহত করা হলো। অথচ শ্রমিকদের দায়ী করে পুলিশ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য প্রদান, গুলিবর্ষণকারীদের গ্রেফতার না করে উল্টো কয়েক হাজার শ্রমিকের নামে মিথ্যে মামলা দায়ের হলো। এটাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করলে ভুল হবে না। অথচ শ্রম-মন্ত্রনালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে এখনো কোন বক্তব্য দেয়নি। মে’দিবসের প্রাক্কালে এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সেই ১৮৮৬ সালের শ্রমিক হত্যার ঘটনাবলীরই পুনরাবৃত্তি। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।
করোনা মহামারী মানুষের জীবন থেকে অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে। জীবন নিয়েছে,কর্ম কেড়েছে, বেকার করেছে, আয় কমিয়েছে সর্বোপরি অর্থনীতির চাকা শ্লথ করেছে। তবে করোনা এই শিক্ষা দিয়েছে, প্রকৃতি ও পরিবেশের যে ক্ষতি মানুষ করেছে তার প্রতিশোধ এই মহামারী। লকডাউনে মানুষকে আটকে রেখে বিশ্ব প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। সব কিছু বন্ধ থাকায় গ্রীনহাউজ গ্যাস বায়ুমণ্ডলের ক্ষতির মাত্রা কমিয়েছিল। সেকারণে বায়ুমণ্ডলে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের বৃদ্ধি, নির্মল বাতাস আর চোখে পড়ার মত গাছ-গাছালী ও পুস্পের সমারোহ ঘটেছিল।
অন্যদিকে অর্থনীতি সচল রাখতে দরকার হয় উৎপাদন প্রক্রিয়া চলমান রাখা। উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ। মহামারী প্রমান করেছে উৎপাদনের উপকরণ বা উপায় যাই থাকুক না কেন উৎপাদন প্রক্রিয়ার মুল শক্তি শ্রমিক, তাদের ছাড়া কলের চাকা চলে না, উৎপাদনও হয় না। শ্রমিকের অংশগ্রহন ব্যতিত কখনো অর্থনীতির বিকাশ হয়নি। আবহমান কাল ধরে সমাজ সভ্যতা বিকাশে শ্রমজীবি মানুষের ভূমিকাই প্রধান।
মে দিবস আসলে শ্রমিকের শোষণমুক্তির অঙ্গীকার, পুঁজিপতিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সমাজে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নেওয়ার দিন। কীভাবে এই দিনটি পরিণত হলো মে’দিবস হিসাবে সেই ইতিহাস কমবেশি সকলেরই জানা, ইতিহাসের পাতায় চোখ ফেরালেই আমরা জানতে পারি শ্রমজীবী মানুষদের সেই আন্দোলনের কথা। মেহনতি মানুষের এই আন্দোলনের পথ কখনও মসৃণ ছিল না। ছিল নানা ঘটনার ঘাতপ্রতিঘাতে মোড়া। জুলুম, অত্যাচার, প্রতিরোধ, ধর্মঘট, মিছিল, সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে এই দিনটার পিছনে।
ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইউরোপ মহাদেশে বাস্পীয় ইঞ্জিন আবিস্কারের ফলে প্রথম শিল্পবিপ্লবের সুচনায় পৃথিবীতে এক বৈপ্লবিক যুগের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম শিল্পবিপ্লবের ফলে পুরনো উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং পুরনো উৎপাদন সম্পর্কের স্থলে নতুন উৎপাদন সম্পর্ক তথা মালিক ও শ্রমিক শ্রেণীর উদ্বভ হয়। শিল্পবিপ্লব পৃথিবীতে উৎপাদন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক যুগের প্রবর্তন ঘটালেও শ্রমশোষণ তীব্র হয়েছিল। শ্রমিকের অধিকার বলতে কিছুই ছিলনা। শ্রমিকেরা শিল্পদাসে পরিনত হয়েছিল। “সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত” এই ছিল সেইকালে কাজের সময়। মজুরি ছিল নগন্য।
প্রধানত মজুরির বৃদ্ধির দাবীতে শ্রেিকরা সংগঠিত হতে থাকে এবং ধর্মঘট করে। সে সময় তা ছিল বে’আইনী। কিন্তু শ্রমিকেরা যখনই কোন দাবীর প্রস্তাব করতেন তখনই দাবীনামার শুরুতে কাজের ঘন্টা কমানো এবং সংগঠনের অধিকারের প্রশ্নটি তুলে ধরতেন।
১৮২৪/২৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন গঠন হয়। ১৮২৭ সালে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়াতে প্রথম মেকানিক শ্রমিকরা ইউনিয়ন গড়ে তুলে। ১৮৬৭ বৃটিশ রাজকীয় কমিশন ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে বৈধতা দেয়। ১৮৭১ সালে বৃটেনের সরকার শ্রমিক ও মালীকদের সংগঠন করার আইনি অনুমোদন দেয়।অন্যদিকে ১৮৬৬ সালের আগষ্ট মাসে আমেরিকার ‘ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন’ দিনে আট ঘন্টা শ্রমের প্রস্তাব করে। এই ইউনিয়নের সভাপতি জনাব সিলভিসের লন্ডনের ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সাথে নিবিড় যোগাযোগ ছিল। ‘ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন’-এর আন্দোলনের ফলে অনেক স্থানে ‘আটঘন্টা-শ্রম সমিতি’ গড়ে উঠেছিল। ঐ বছরের সেপ্টেম্বরে জেনেভায় শ্রমিকদের প্রথম আন্তর্জাতিক কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। কংগ্রেসের বিবৃতিতে আটঘন্টা শ্রমের দাবীর সমর্থনে নিম্নলিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেঃ “কাজের দিন আইন করে সীমাবদ্ধ করে দেয়ার বিষয় একটি প্রাথমিক ব্যবস্থা; এই ব্যবস্থা ব্যাতিত শ্রকি শ্রেণীর উন্নতি ও মুক্তির পরবর্তী সব প্রচেষ্টাই নিষ্ফল হতে বাধ্য। কাজের সময় দিনে আটঘন্টা আইন করে নির্ধারণের প্রস্তাব কংগ্রেস উত্থাপন করছে।”
১৮৮৪ সালের অক্টোবর ‘আমেরিকা ও কানাডার সংগঠিত ট্রেড ও লেবার ইউনিয়ন ফেডারেশন’ প্রস্তাব গ্রহন করে যে, ১৮৮৬ সালের ১লা মে তারিখ থেকে দৈনিক ‘আট ঘন্টাকেই’ কাজের সময় হিসেবে আইনত গন্য করা হবে। সেই সাথে সকল শ্রমিক সংগঠনের কাছে আহ্বান জানায় যে, তারা যেন এই সিদ্ধান্তের সাথে খাপ খাইয়ে নিজ নিজ এলাকায় ঐ প্রস্তাব বাস্তবানের উদ্দ্যোগ গ্রহন করে। মে’দিবসের আন্দোলন ঘোষনার ফলে ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। শ্রমিক আন্দোলনে একটা গণজোয়ার সৃষ্টি হয়। সংগঠিত শ্রমিকদের পাশাপাশি অসংগঠিতখাতের শ্রমিকরাও ঐ আন্দোলনে শামিল হয়।
১লা মে তারিখে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকদের এক বিশাল সমাবেশ হয়। শহরের সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলনের আহ্বানে শ্রমিক অঞ্চলের সমস্ত শ্রমিক কাজ বন্ধ করে রাস্তায় মিছিল নিয়ে ঐ সমাবেশে যোগ দিয়েছিল। শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এর আগে কখনো শ্রেণী সংহতির এত বলিষ্ঠ প্রকাশ দেখা যায়নি। ১৮৮৬ সালের ১লা মে’র ধর্মঘট-আটঘন্টা শ্রমের দাবীকে যৌক্তিক পরিনতিতে নিয়ে যায়। আমেরিকার শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এই আন্দোলন তৈরী করে এক গৌরবময় অধ্যায়।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে বাস্তিল দুর্গের পতনের শতবার্ষিকীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শ্রমিক প্রতিনিধিরা এক আন্তজার্তিক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন। ‘ওয়ার্কিং মেনস কংগ্রেস’ (মেহনতি মানুষের সম্মেলন) নামের ঐ সম্মেলনকে ‘দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক’ নামে অবহিত করা হয়। কংগ্রেসের প্রস্তাবে ১৮৯০ সালের ১লা মে’কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক বিক্ষোভ দিবস হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়। সেই থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর মে’দিবস পালিত হয়ে আসছে।
স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে ‘আইএলও’র’ সদস্যভুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। ঐ বছরের ৫ জুন বাংলাদেশ আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ সহ ২৭টি কনভেনশন অনুসমর্থন করে। যার উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সংগঠন করার অধিকার ও যৌথ দরকষাকষির অধিকার। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর শেষে এসেও বাংলাদেশের আইন ও চর্চায় অনুসমর্থিত কনভেনশনসমুহের পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন ঘটে নাই। এখনো দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ বিশেষ করে অসংগঠিত খাতের শ্রমিকেরা আইনগত সুরক্ষার আওতার বাইরে রয়েছে। তারা মজুরী বৈষম্য, যৌথ দরকষাকষি ও সংগঠন করার অধিকার বঞ্চিত।
মজুরীর বিষয়ে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমার দাবি ছিল (১ঃ৫) এখন পে-কমিশন ২০টি ধাপে বিভাজিত, বেতন বৈষম্য (১ঃ১১)। ৬৯’ সালে এদেশের শ্রমিকের ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণ হয়েছিল। বিগত পঞ্চাশ বছরে দেশে একটি ‘জাতীয় ন্যুনতম মজুরি’ প্রবর্তন করা যায়নি। প্রধান শিল্প সেক্টরের ৪৩টি মজুরি বোর্ড গঠিত হলেও ১২/১৩ টির মত শিল্পে মজুরি বোর্ড বসে। ‘জাতীয় ন্যুনতম মজুরি’ না থাকায়, শ্রমিক অনেক সস্তায় শ্রম দিতে বাধ্য হয়। জীবনধারণ উপযোগী মজুরী না হওয়ায় কর্মক্ষেত্র ও সমাজে ব্যাপক বৈষম্য তৈরী হয়েছে।
ঠিকদারী প্রথায় নিয়োগ বা আউট সোর্সিং পদ্ধতি বাতীল করে সর্বক্ষেত্রে ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণীর শ্রমিক কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগ দেয়া। ব্যক্তিখাত যাতে শ্রমিকের শোষনের হাতিয়ার না হয়, উৎপাদিত পন্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা,ভোক্তাদের প্রতারনা থেকে রক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করা। সকল শ্রমিকের নিবন্ধন ও তথ্যভান্ডার তৈরী করা। শ্রমিকের পরিবারের জন্য হ্রাসকৃত ও ন্যায্য মুল্যে চাল,আটা,ডাল,তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করা বা রেশোনিংয়ের ব্যবস্থা করা।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত মৃর্ত্যু ও আহত’র ঘটনায় বাংদেশের শ্রমআইনে ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা এবং যে মানদণ্ড তা বর্তমান সময়ের উপযোগী নয়। ক্ষতিপুরণের সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের অভাবে শ্রমিকের জীবন মালিক ও সরকারের দয়ার উপর নির্ভর করে চলছে। তাই দাবী উঠেছে শ্রমআইনে মারাত্বক দূর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপুরণ আইনকে যুগোপযোগীকরার। দুর্ঘটনাজনিত হতাহতের ঘটনায় ‘আইএলও কনভেনশন ১২১’ অনুযায়ী ক্ষতিপুরণের অর্থ, চিকিৎসা ও ভোগান্তির প্রেক্ষিতে আজীবন আয়ের সমান পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা রেখে ক্ষতিপুরণের বিধান করা। শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা।
ইপিজেড আইন প্রনয়নের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের অধিকার বিভাজিত হয়েছে। ফলে কর্মক্ষেত্র দুই আইন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এটি স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থি ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। আন্তর্জাতিক শ্রমমান এবং এই সম্পর্কিত ঘোষনাসমুহের অঙ্গিকারের বিপরিত। মুলগত ভাবে এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। এটি বৈষম্যমুলক ও অগনতান্ত্রিক। বাংলাদেশের শ্রমিকেরা যাতে একটি একক শ্রমআইনের অন্তর্ভুক্ত থাকে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
এই প্রতিষ্ঠিত উক্তি দিয়ে লেখার ইতি টানবো যে, ‘দাবী আদায়ে শ্রমিকের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের বিকল্প নেই।’ মে’দিবস আহবান জানায়, শ্রমজীবি মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, মুক্তি ও কল্যানে বিষয়গুলোর নিশ্চিত রুপ দিতে দৃঢ় আন্দোলন গড়ে তোলার। এ বারের মে’দিবসের শপথ হোক সকল জুলুম, অত্যাচার, বঞ্চনা রুখে দাড়িয়ে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার।

লেখকঃ সভাপতি,জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন।

সর্বশেষ