শুক্রবার,২৯,মার্চ,২০২৪
24 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
Homeগণ অর্থনীতিগরিবের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি

গরিবের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি

করোনাতেও বাড়ছে কোটিপতিদের সম্পদ

নতুন কথা ডেক্স: মহামারি করোনায় বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও তার ধাক্কা লেগেছে। কিন্তু করোনাকালের এই মহাবিপর্যয়ের মধ্যেও বিশ্বের সহস্রাধিক শীর্ষ ধনী মাত্র ৯ মাসে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন। অথচ করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কয়েক কোটি দরিদ্র মানুষের সময় লাগবে এক দশক- এ তথ্য আন্তর্জাতিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান অক্সফার্মের। অন্যদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম-এর প্রতিবেদন অনুয়ায়ী করোনাকালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বেড়ে পৌঁছে ৪২ শতাংশে। দারিদ্র্যের এই হার বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে অসমতার-বলছেন গবেষক, অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু সানেমের এই তথ্য মানতে নারাজ অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মোস্তফা কামাল। তিনি বলছেন, তাদের গবেষণা এবং ফলাফল ঘোষণায় সঠিক নয়।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুয়ায়ী সানেমের ফলাফল যাই হোক, বাংলাদেশের দারিদ্রতার হার যে বেড়েছে তা সহজেই অনুমেয়। কারণ করোনায় হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়েছেন, অনেকে অর্ধেক বেতনে চাকরি করছেন। অন্যদিকে অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের অবস্থা ভয়াবহ। বন্ধ হয়ে গেছে বহু শিল্প কারখানা। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও ব্যবসা না হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দেশের বহুপরিবার।
নিজেদের অর্থায়নে জরিপ করে সানেম তার প্রতিবেদনে বলেছে, করোনায় ৪২ শতাংশ মানুষ গরিব হয়েছে। গরিব হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে আরো অনেক মানুষের, যারা আগে গরিব ছিল না। বিবিএস-এর জরিপ মতে ২০১৬ সালে দেশে গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সানেমের ২০১৮ সালের জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে দারিদ্রোর হার ছিল ২৪ দশমিক ৫শতাংশ। ২০২০ সালে এসে এই দারিদ্র্যতার বেড়ে হলো ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে ২০১৮ সালে দরিদ্র্য ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২০ সালে হয় ৩৫.৪ শতাংশ। করোনার আগে দেশে দরিদ্রতম ২০ শতাংশ মানুষ মোট আয়ের ৭ দশমিক ২০ শতাংশের মালিক ছিল। কিন্তু মোট আয়ের ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ ছিল সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের হাতে। করোনাতেও তাদের আয় বেড়েছে। কারণ মোট আয়ের ১৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ এখন তাদের দখলে। আর দরিদ্রতম ২০ শতাংশ মানুষের দখলে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তাদের আয় কমেছে।
অক্সফামের ‘অসমতা ভাইরাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, কভিড-১৯ একযোগে সারা পৃথিবীতে ধনী-গরীবদের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য বাড়িয়ে তুলেছে। এক শতাব্দীর বেশি সময় আগে থেকে দেশে দেশে অর্থনৈতিক অসমতা শুরু হয়। তবে এই প্রথম একই সময়ে প্রায় প্রতিটি দেশে অসমতা বৃদ্ধির ঘটনা ঘটল। এই সময়ে পৃথিবীর প্রায় সহস্রাধিক ধনী যারা শত কোটিপতি মাত্র ৯ মাসেই তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন। তাদের মতো কভিডপূর্ব অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরতে দরিদ্র মানুষদের অন্তত ১৪ গুন বেশি সময় লাগতে পারে। এশিয়ার দরিদ্রতম অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ায় একই সময়ে ১০১ জন শত কোটিপতির সম্পদ বেড়েছে ১৭৪ বিলিয়ন ডলার। করোনায় দরিদ্র হয়ে পড়া এ অঞ্চলের ৯ কোটি ৩০ লাখ মানুষের প্রত্যেকে ১ হাজার ৮শ’ ডলারের চেক দেয়ার জন্য এই অর্থ যথেষ্ট। চলতি মহামারিতে বিশ্বে গত ৯০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে কর্মসংস্থান সঙ্কট সবচেয়ে বেশি প্রকট হয়েছে। বর্তমানে কোটি কোটি মানুষ বেকারত্বের অভিসাপে জর্জরিত। এপর্যন্ত করোনার ধাক্কা সবচেয়ে বেশি পড়েছে নারীদের ওপর। নারীরাই সবচেয়ে বেশি অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীন পেশায় যুক্ত। তাদের বেতন ও তুলনামূলক কম। বিশ্বের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা খাতে কর্মরত জনশক্তির ৭০ শতাংশই নারী। এই অবস্থা তাদেরকে সবচেয়ে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।
অক্সফাম বলছে, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে আমরা মানুষের মধ্যে গভীর বৈষম্য বাড়বে দেখেছি। ধনী-গরীবের মধ্যে সৃষ্ট বৈষম্য ভাইরাসের মতই প্রাণঘাতি হয়ে উঠেছে। সম্পদ দারিদ্রদের হাত থেকে ধনীদের হাতে চলে যাচ্ছে। ফলে মহামারিতেও তাদের বিলাসী জীবনের কোনো হেরফের ঘটে নি। অথচ করোনার সম্মুখযোদ্ধা, স্বাস্থ্যকর্মী, দোকানদার, ক্ষুদ্রব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা জীবনসঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছেন। ধুকছে ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পখাত। একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের দাম। যার প্রভাব পড়েছে গরিব,নিম্ন ও মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন জীবন-যাপনে। ফলে পৃথিবীসহ গরিবের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবার আগে কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে। কমাতে হবে অসমতা।

সর্বশেষ