জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে দিশেহারা গরীব-নিবিত্তরা মধ্যবিত্তরাও হিমশিম খাচ্ছেন

নতুন কথা প্রতিবেদন:করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত জনজীবন। ক্রয় ক্ষমতা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বমুখী পাগলা ঘোড়ার তাÐবে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন গরিব-নি¤œবিত্তরা। খেটে খাওয়া দিনমজুরের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না খেটে খাওয়া মানুষ। ভালো নেই মধ্যবিত্তরা। সামগ্রিক চাপে তারাও চিড়ে চ্যাপ্টা হচ্ছেন।
জানাগেছে, পেশাজীবিদের অনেকের আয় কমেছে। কারো আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে কর্মহীন দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে সঞ্চয় ভেঙ্গে খাওয়া শেষ। ধার-দেনা করে চলছেন। এরই মধ্যে বাড়ছে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম। পেঁয়াজ তেলের দাম আগেই বাড়তির দিকে। চরম নৈরাজ্য চলছে আলুতে। মসলার বাজারও বেশ চড়া। ভুতুরে বিলের খপ্পরে বিদ্যুত। কোনো সবজি এখনো ৭০-৮০ টাকা নিচে না। বেড়েছে ওষুধ, পরিবহন ব্যয়, বাড়িভাড়া, গ্যাসের দাম। ফলে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এই অবস্থায় অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন গরিব, নি¤œবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তরাও। এমতবস্থায় বিপুলসংখ্যক মানুষকে তিন বেলা আহার জোগাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। মধ্যবিত্তরাও আয়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে প্রতিদিনের বাজার তালিকা কাটছাট করছেন।
সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মানুষের এখন আয়, রোজগার নেই। যারা আয় করছেন, তাদেরও রোজগার কমে গেছে। তদুপরি নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। বাজারে চলছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য। এসব ডাকাতদের কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করে বাজার সামালাতে হবে। সধারণ মানুষকে বাঁচাতে হবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন,“থালায় ভাত কমেছে, এখন আলুভর্তাও জুটছে না। মানুষ যাবে কোথায়?”
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি (ক্যাব) জানিয়েছে, গত বছর মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ শতাংশ। পণ্য ও সেবামূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অথচ চলতি বছরে এই ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। তারা ২২ টি নিত্যপণ্যের সেবার তথ্য পর্যালোচনা করে বলেছে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চাল, ডাল, আটা, ডিম, শাক, সবজি, তেল, লবণ, চিনি, সাবানসহ অধিকাংশ পণ্যের দামই অস্থিতিশীল। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের তোয়াক্কা করছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা তাদের ইচ্ছেমতো দাম রাখছেন।
করোনার মধ্যেও বাড়ি ভাড়া বেড়েছে দশমিক ১৮ শতাংশ। বস্তির ঘরভাড়া বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। জ¦ালানি তেলের মূল্য কমলেও যাত্রী পরিবহন ব্যয় কমে নি। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই অধিক যাত্রী এবং বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
ওষধে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। ১৪২ টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করা হয়। করোনায় ওষুধের দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে। কোম্পানিগুলো যে যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছে। কোনো কোনো ওষুধের দাম ২/৩ গুণ বেশি রাখা হচ্ছে। যা দরিদ্র ও নি¤œবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গ্যাস ও পানির দাম বেড়েছে দফায় দফায়। ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত ১০ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় মানুষের হাহাকার ও আর্তনাদ উপলদ্ধি করা গেলেও তা থেকে উত্তরণের কোনো পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।