রবিবার,২৮,ডিসেম্বর,২০২৫
16 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫
প্রচ্ছদসীমানা পেরিয়েট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অবসানে একটি ২০ দফা শান্তি কাঠামো প্রস্তাব নিয়ে রবিবার ফ্লোরিডায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কি জানিয়েছেনএই প্রস্তাব ভবিষ্যৎ শান্তিচুক্তির ভিত্তি হতে পারে।এর আগে ২৮ দফার একটি খসড়া নিয়ে আলোচনা চললেও সেটি অনেকটাই রাশিয়ার পক্ষপাতী বলে সমালোচনার পর নতুন করে প্রস্তাবটি সংশোধন করা হয়। জেলেনস্কি বলেছেন, কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর অধিকাংশ বিষয়ে অবস্থান কাছাকাছি এসেছে। তবে ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে এখনও ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি।

জেলেনস্কি ও তার দফতর এ সপ্তাহে যে খসড়া প্রকাশ করেছেতাতে প্রথমেই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে পূর্ণ ও প্রশ্নাতীত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তির কথা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করতে যোগাযোগরেখা পর্যবেক্ষণে মহাকাশভিত্তিক মানববিহীন নজরদারি ব্যবস্থাসহ একটি মনিটরিং কাঠামো গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে ইউক্রেন তার সশস্ত্র বাহিনী বর্তমান ৮ লাখ সদস্যের শক্তিতে বজায় রাখবে বলে উল্লেখ আছে। ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫এর আদলে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্রএমন প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়াকে ইউক্রেন ও ইউরোপের প্রতি আগ্রাসন না করার নীতি আইনি ও সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে ইউক্রেনকে নির্দিষ্ট তারিখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ দেওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে স্বল্পমেয়াদে ইউরোপীয় বাজারে বিশেষ সুবিধা এবং বিনিয়োগ ও সমৃদ্ধিসংক্রান্ত আলাদা চুক্তির মাধ্যমে একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন প্যাকেজ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। যুদ্ধপরবর্তী পুনর্গঠনঅর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও মানবিক প্রয়োজন মেটাতে কয়েকটি তহবিল গঠনের মাধ্যমে ৮০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করার কথাও রয়েছে। তবে জেলেনস্কি জানিয়েছেনওয়াশিংটনের অবস্থান হলোইউক্রেনকে এমন সুবিধা দিলে একই শর্ত রাশিয়ার ক্ষেত্রেও বিবেচনায় আনা হতে পারে। প্রস্তাবে ইউক্রেনের পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন রাষ্ট্র হিসেবে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

ইউরোপের সবচেয়ে বড় জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে এখনও সমঝোতা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুযায়ীইউক্রেনযুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সমান অংশীদারত্বে কেন্দ্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করবেযেখানে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। অন্যদিকে কিয়েভ চায়যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে ৫০৫০ অংশীদারত্বে কেন্দ্রটি পরিচালিত হোক। ভূখণ্ড ইস্যুকে জেলেনস্কি সবচেয়ে জটিল বলে উল্লেখ করেছেন। রাশিয়া চায়ডনেস্ক অঞ্চলের যেসব এলাকা এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেসেখান থেকে কিয়েভ সেনা প্রত্যাহার করুক। ইউক্রেন চায় বর্তমান যুদ্ধরেখায় লড়াই থামুক। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল ও একটি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছেভবিষ্যৎ ভূখণ্ড সংক্রান্ত সমঝোতা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যাবে না। ডনিপ্রো নদী ও কৃষ্ণসাগর ব্যবহার করে বাণিজ্যিক চলাচলে রাশিয়া বাধা দেবে নাএমন অঙ্গীকারের কথাও রয়েছে। মানবিক ইস্যুতে যুদ্ধবন্দি বিনিময়বেসামরিক আটক ও শিশুদের ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। চুক্তি সইয়ের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে ইউক্রেনএমন শর্তও খসড়ায় আছে। পুরো চুক্তিটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সভাপতিত্বে একটি শান্তি পরিষদ এর বাস্তবায়ন তদারকি করবে। লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সব পক্ষ একমত হলে চুক্তি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবেএমনটাই বলা হয়েছে এই ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে।

সুত্র- রয়টার্স 

সর্বশেষ