রবিবার,৯,নভেম্বর,২০২৫
28 C
Dhaka
রবিবার, নভেম্বর ৯, ২০২৫
প্রচ্ছদজাতীয়তিস্তা প্রকল্পে আনুষ্ঠানিক আগ্রহ প্রকাশ- কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাচ্ছে, চীন

তিস্তা প্রকল্পে আনুষ্ঠানিক আগ্রহ প্রকাশ- কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাচ্ছে, চীন

সুত্র জানায়,  বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নদীভাঙন রোধ, সেচ সম্প্রসারণ এবং তিস্তা নদীকে ঘিরে কৃষি ও শিল্প উন্নয়নের মহাপরিকল্পনায় চীন আনুষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ উদ্দেশ্যে খুব শিগগিরই চীন একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে পাঠাবে। সোমবার সকালে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে বৈঠককালে এ প্রতিশ্রুতি দেন।

এক ঘণ্টার বৈঠক- 

সোমবার সকালে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী হয়। বৈঠকে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতার বর্তমান ধারা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং চীন এই প্রকল্পে প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।

বাংলাদেশের প্রস্তাব ও চীনের প্রতিক্রিয়া- 

তিস্তা নদীর দু’পাড়ে নদীভাঙন ঠেকানো, শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনের কাছে প্রায় ৫৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছে। বৈঠকে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, চীন বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে এবং দ্রুত অগ্রগতি আনতে বিশেষজ্ঞ দল পাঠাবে।

দুই দেশের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক অঙ্গীকার- 

উভয় পক্ষের আলোচনায় উঠে আসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক বেইজিং সফর। সেই সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে অবকাঠামো, স্বাস্থ্য এবং কৃষি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

স্বাস্থ্য খাতে নতুন উদ্যোগ- 

তিস্তা প্রকল্প ছাড়াও বৈঠকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে চীনের সহযোগিতা প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়। জানা গেছে, চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে এবং কারিগরি ও আর্থিক কাঠামো নির্ধারণে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।

তিস্তা প্রকল্পের গুরুত্ব- 

তিস্তা নদীকে ঘিরে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই নদীর সঙ্গে যুক্ত। বর্ষাকালে ভয়াবহ বন্যা ও ভাঙন, আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব—এই দুই চরম বিপর্যয় মোকাবেলায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। পানি ব্যবস্থাপনায় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া গেলে কৃষি উৎপাদন বহুগুণ বাড়বে, একই সঙ্গে শিল্প স্থাপনের সুযোগও তৈরি হবে।

চীনের কৌশলগত আগ্রহ- 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব আরও বিস্তৃত করার কৌশলের অংশ হিসেবেই চীন তিস্তা প্রকল্পে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কারণ এই নদী ব্যবস্থাপনা শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে চীনের সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে।

কূটনৈতিক বার্তা- 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চীনের এই আগ্রহ বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ শুধু অর্থ নয়, প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের ক্ষেত্রেও তারা অগ্রসর। যদি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।

সর্বশেষ