“মারিয়া, ভেনিজুয়েলার সমাজতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করে মার্কিনী গনতন্ত্র কায়েমের একজন প্রতিশ্রুতিশীল সৈনিক! ক্যারিবিয়ান সাগরে ট্রাম্পের হামলা আরও জোরদার হবে”
এবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জোরালো দাবিদার ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরাকে হামলার পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ওয়াশিংটনে ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছিলেন। তারপর ট্রাম্প নিজেই নিজের ঢোল পেটাতে শুরু করেছিলেন। তাঁর আত্মপক্ষে যুক্তি ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার চেয়ে শান্তির জন্য তিনি বেশি কাজ করেছেন। কিন্তু নরওয়েজিয়ান নোবেল শান্তি কমিটি ট্রাম্পকে হতাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্রকে হতাশ করেনি। তাঁরা এমন একজনকে নোবেল দিয়েছেন যিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং ভেনিজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে এনজিও থেকে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। তিনি ইলেকশন মনিটরিং দিয়ে শুরু করে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীতা দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দূত হিসেবে পরিচিত ভেনিজুয়েলার রাজনীতিবিদ।
ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে বর্তমানে মাদক পাচারের অভিযোগ এনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্যারিবীয় সাগরে জেলে নৌকায় নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেছেন। গুলি আরও চলবে যতক্ষণ ভেনিজুয়েলার বর্তমান রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোকে উচ্ছেদ করা না যায়। ভেনিজুয়েলা গত কয়েক দশক ধরে হুগো সেভেজের মাধ্যমে একটা সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু রাষ্ট্রের তালিকায় আছে। কারণ হুগো সেভেজ ভেনিজুয়েলার তেল গ্যাসকে জাতীয়করণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক তেল কোম্পানি এখানে ব্যবসা হারিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এটা অপরাধ। তাই শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সেভেজকে উচ্ছেদের জন্য অর্থনৈতিক অবরোধসহ সব সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। কাহিনি লম্বা না করে বলা যায় যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার নির্বাচনকে সবসময় প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে ভেনিজুয়েলার তেল গ্যাস পুনরায় দখলের প্রচেষ্টা জারি রেখেছে। তাই তারা ঔ দেশের নাগরিকদের নির্বাচন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। তেমনি ভাবে বর্তমান নোবেল বিজয়ীও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গনতন্ত্রের ফেলো। ট্রেনিংপ্রাপ্ত। গতবার রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী ছিলেন। এবার প্রার্থী হতে পারেননি। উচ্চ আদালত তাঁর প্রার্থীতা বাতিল করেছে। তিনি বিরোধী দলীয় অন্য প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন। তিনি ভেনিজুয়েলায় আছেন। এবার নোবেল জয়ী হয়ে যে অর্থ পাবেন তা তিনি তাঁর সংগ্রামে কাজে লাগাতে পারবেন।
এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার পরিষ্কারভাবে সমাজতান্ত্রিক নীতিমালা অনুসরণকারী একটি দেশের অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের একজন গনতন্ত্রকামীকে দেওয়া হয়েছে। তিনি যদি জয়লাভ করেন তবে ভেনিজুয়েলার প্রাকৃতিক সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর হাতে আসবে। ট্রাম্প নিজে শান্তি পুরস্কার না পেলেও তাঁর ভেনিজুয়েলা নীতির সমর্থনে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের মতবাদ বা আধিপত্য বজায় রাখার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় – এটা নিয়ে আর বিতর্কের অবকাশ নেই। মায়ানমারের নোবেলজয়ীও গনতন্ত্রের সংগ্রামী কন্যা ছিলেন।
ভেনিজুয়েলার মাচাদোও আগামী দিনগুলোতে প্রাণ দিয়ে গনতন্ত্রের সংগ্রাম জারী রাখবে যাতে গনতন্ত্রের আবরণে ভেনিজুয়েলার সার্বভৌমত্ব যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তার প্রাকৃতিক সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর হাতে থাকে। নোবেল শান্তি পুরস্কার আসলে পশ্চিমা ও যুক্তরাষ্ট্রের রেজিম চেইঞ্জ ও প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের মিশন! তাছাড়া আর কি!
বিশ্লেষক- শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক



