বুধবার,১৭,এপ্রিল,২০২৪
26 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪
Homeগণ অর্থনীতিপাট সিন্ডিকেটে হঠাৎ দামের রেকর্ড: এ খুশি কত দিন!

পাট সিন্ডিকেটে হঠাৎ দামের রেকর্ড: এ খুশি কত দিন!

* বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল * চাষে অনীহা চাষীদের * কমছে উৎপাদন * বাড়ছে অস্তিত্বের সংকট

নতুন কথা প্রতিবেদন ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ায় শিল্পাঞ্চলে চলছে কর্মহীন শ্রমিকের হাহাকার। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটছে পাটচাষীদের জীবন। এই অবস্থায় চলতি বছর হঠাৎ করেই বেড়ে গেল পাটের দাম। কেবল বাড়েই নেই, রীতিমতো দামের ক্ষেত্রে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। পাটের দামে সবচেয়ে বেশি খুশি আড়তদার, মজুতদার ও ফড়িয়ারা। কারণ কৃষক যা দাম পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি মুনাফা গেছে তাদের পেটে। কৃষকরাও বিগত বছরের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি’ই পেয়েছে। তবে এতেও তারা খুশি নয়। কারণ তারা বুঝে গেছে সামনে পাটের আরো দুর্দিন আসছে। অন্যদিকে পাটের দামে মুনাফাখোর আড়তদার-মজুতদাররা খুশি হলেও এটা দীর্ঘস্থায়ী নয়। পাটখাতকে ধ্বংস করে পাটের এই রেকর্ড দামের খুশি কতদিন সেটাই ভাবনার বিষয়!
গত বছর পাটের মৌসুমে প্রতি মণ ভালো মানের পাট বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। সেই একই পাট বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকার ওপরে। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আরো বেশি দামে পাট বিক্রি হয়েছে, যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য! পাটের দামের ক্ষেত্রে এটা রেকর্ডও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই মজুতদারেরা কৃষকের কাছ থেকে সব পাট কিনে নিয়েছেন। ফলে পাটের এই বাড়তি দরের মুনাফা যাচ্ছে মজুতদার আর ফড়িয়াদের পকেটে। তারা জানান, এমনিতেই সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ার পর এই খাত যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া পাট পচানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানির অভাব, পাটবীজের আমদানিনির্ভরতাসহ বিভিন্ন কারণে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিককভাবে কমছে পাটের উৎপাদন। দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি আয়ের এই খাত এখন নিজেই ধুঁকছে। ইতিমধ্যে কাঁচা পাটের অভাবে অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পাটের বাজার ধরে রাখা মুশকিল হবে।
প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ কেন পাটের দাম বাড়ছে। এর কারণ হলো বিশ্বে পাটপণ্যের চাহিদা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পাটের উৎপাদন না বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে দামের ওপর। মাটি ও আবহাওয়ার কারণে দেশে সবচেয়ে ভালো মানের পাট উৎপাদন হয় ফরিদপুর অঞ্চলে। সেখানে পাটের দাম বেশি। এর কারণ হিসেবে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পাটের জোগান কম, কিন্তু চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে। অন্যদিকে মিলমালিকদের দাবি, মজুতদারদের সিন্ডিকেটই পাটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে যে দরে পাট বিক্রি হচ্ছে, তাতে পণ্য তৈরি করে লাভ করা দূরে থাক, লোকসান গুনতে হবে মিলগুলোকে। তারা বলছেন, তার যেসব মিল চালু আছে, সবার উৎপাদন অর্ধেক বা তারও কম হচ্ছে এখন। কয়েকটি মিল তো বন্ধই হয়ে গেছে। তারা আরো জানান, কৃষকদের কাছ থেকে পাট তাদের কমই কেনা হয়, মিলগুলো পাট কিনে থাকে ছোট-বড় পাট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। আর এদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। সুযোগ বুঝে পাটের দাম বাড়ানো-কমানোসহ পুরো নিয়ন্ত্রণই এই সিন্ডিকেটের হাতে। এখন যা পাট আছে, তার পুরোটাই ব্যবসায়ীদের হাতে। তাই দামও তারা ইচ্ছেমতো নিচ্ছে। আর মিল চালাতে গেলে পাট তো কিনতে হবেই, না হলে মিল বন্ধ করে রাখতে হবে।
দেশে-বিদেশে পাটের চাহিদা বাড়লেও এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পাটের উৎপাদন কমছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ৭ লাখ ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। উৎপাদন হয় ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার বেল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয় ৬ লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বছর পাট উৎপাদন হয় ৮০ লাখ বেল। ২০২০-২১ অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে পাট উৎপাদন হয়। এ বছর ৭ লাখ ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত আবাদ হয় মাত্র ৬ লাখ ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে। আর পাট উৎপাদন হয় ৭৭ লাখ বেল। এ হিসাবে ধারাবাহিকভাবে পাট উৎপাদন কমছে। পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষীরা। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ২৬টি পাটকল বন্ধ হওয়ায় চাষীরা শঙ্কায় আছেন!
ফলে হঠাৎ করে পাটের দাম বাড়লেও এতে খুশি হওয়ার কিছু নেই। সামনে পাটের আরো দুর্দিন আসছে। ধ্বংস হয়ে যেতে পারে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভাবনাময় এ খাত-বলছেন বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ