শনিবার,২০,এপ্রিল,২০২৪
37 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
Homeজাতীয়বাঁশখালী আবারো রক্তাক্ত-ন্যায্য পাওনা চাইতে গিয়ে গুলিতে ঝরলো ৭ প্রাণ

বাঁশখালী আবারো রক্তাক্ত-ন্যায্য পাওনা চাইতে গিয়ে গুলিতে ঝরলো ৭ প্রাণ

গুলি চালিয়ে পুলিশ বড় অন্যায় করেছে-মেনন

নতুন কথা প্রতিবেদন: আবারো রক্তাক্ত চট্টগ্রামের বাঁশখালী। ২০১৬ সালে বাঁশখালীর এই এস আলম গ্রুপের কয়লা বিদুৎ কেন্দ্রে’ই গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ৪ জন। সেবার অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন স্থানীয়রা। এবার ন্যায্য পাওনা চাইতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ৫ হতভাগ্য শ্রমিক। আহত আরো ৩০ জন। এভাবে এস আলম গ্রুপের হিং¯্রতায় আর কত প্রাণ ঝরবে!-প্রশ্ন শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক নেতা ও মানবতাবাদী সচেতন মানুষের। শ্রমিক অধিকার আদায়ে সদা সোচ্চার বর্ষীয়ান বামপন্থী নেতা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন বলেছেন, “বাঁশখালিতে গুলি করার মতো কোনো ঘটনা ঘটে নি। সেখানে গুলি চালিয়ে পুলিশ বড় অন্যায় করেছে।” গুলিতে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা এবং শ্রমিকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন। আর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা। এছাড়া ‘এই ঘটনাকে অমানবিক ও ন্যাক্কারজনক’ বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী। চট্টগ্রাম জেলা যুব মৈত্রী’র নেতারা বলছেন,“ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজে বাঁশখালীর শ্রমিক হত্যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।”
গত ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গ্লামারা ইউনিয়নের এস আলম গ্রুপের ‘এসএস পাওয়ার প্লান্ট’-এ আন্দোলনরত শ্রমিকের উপর পুলিশ অতর্কিত গুলি চালায়। সেই গুলিতে নিহত হন ৫ জন শ্রমিক। পরবর্তীতে গুলিবিদ্ধ আরো ২ জন নিহত হওয়ায় এখন পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ৭ জন শ্রমিক মারা গেছেন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘোষিত কঠোর লকডাউনের মধ্যে রাজপথ এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড়ে প্রশ্ন উঠেছে-কেন শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানো হলো? কি অপরাধ ছিল ওই হতভাগ্য শ্রমিকদের? তারা তো কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে লিপ্ত ছিল না। তারা ন্যায্য পাওনা বকেয়া বেতন চাইতে গিয়েছিলেন। ১৪ তারিখে তা দেওয়ার কথাও ছিল। দেওয়া হয়নি বলেই তো তারা কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে নামেন। তাদের দাবি ছিল ঈদ বোনাস, পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম। এই দাবিগুলো কি অমূলক? শ্রমিকদের বেতন দিবেন না, গাধার মতো খাটিয়ে ঈদ বোনাস দিবেন না, পানির ব্যবস্থা করবেন না, আবার নিরাপত্তাহীনভাবে কাজ করার ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে নিরাপত্তা সরঞ্জামও চাইতে পারবে না-তা কী করে হয়? এসব দাবি পূরণ করেন নাই বলেই তো শ্রমিকরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের দাবি শোনার জন্য আলোচনায় বসা যেত, যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়া যেত। অথবা দাবি পূরণের আশ^াস দিয়ে শান্ত করা যেত। আন্দোলনকারীরা যদি বেপরোয়াই হতো তা থামানোর জন্য ফাঁকা গুলি করে আওয়াজ করা যেত। পুলিশের প্রাণহানির শঙ্কা থাকলে পায়ে গুলি করতে পারত। যদিও প্রত্যক্ষদর্র্শীরা বলছেন, এরকম কোনো অবস্থারই সৃষ্টি হয় নি। তাহলে কেন গুলি করা হলো?-প্রশ্ন সেখানেই।
‘এস আলম’ গ্রুপের এই পাওয়ার প্লান্টে’ই ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল জমি অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সাথে সংঘর্ষে গুলি চালানো হয়। তখনো গুলিতে প্রাণ হারান ৪ জন স্থানীয় মানুষ। কেন বার বার এখানেই গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে?
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শ্রমিকরা তাদের অধিকার নিয়ে যেকোনো দাবি তুলতেই পারেন। কিন্তু পুলিশ সেখানে যেভাবে গুলি চালিয়েছে এবং পত্র-পত্রিকায় যেভাবে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে, তাতে অবাক হয়েছি। শ্রমিকরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করেন নি। তারা কোনো দলীয় ব্যানারেও আন্দোলন করেন নি। শ্রমিকরা আন্দোলন করলে অথবা মারমুখি হলেই কি গুলি করতে হবে নাকি? আসলে বাঁশখালীতে গুলি করার মতো ঘটনা ঘটে নি।”
‘পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের সম্প্রতি দেওয়া বক্তব্যে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে মেনন বলেন, “ সম্প্রতি আইজিপি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে আমি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেছেন, ‘পুলিশ সর্বোচ্চ অস্ত্র প্রয়োগ করবে’। সেই বক্তব্য থেকে উৎসাহিত হয়ে এটি করা হয়েছে কি-না আমি জানি না?”
শ্রমিক হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরূল আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন। ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগর সম্পাদকমন্ডলীর এক জরুরি সভায় বাঁশখালী ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। মহানগর সভাপতি সভাপতি আবুল হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন নগর সাধারণ সম্পাদক কমরেড কিশোর রায়, সম্পাদকম-লীর সদস্য কমরেড জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, কমরেড মোঃ তৌহিদ, কমরেড কাজী আনোয়ারুল ইসলাম টিপু প্রমুখ। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী’র সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক অতুলন দাস আলো। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা যুব মৈত্রী’র সভাপতি কায়সার আলম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলি আব্দুল্লাহ এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন।

সর্বশেষ