রবিবার,৯,নভেম্বর,২০২৫
23 C
Dhaka
রবিবার, নভেম্বর ৯, ২০২৫
প্রচ্ছদসম্পাদকীয়মুক্তমতবাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যুদ্ধ সম্প্রসারিত হয়েছে, দুই দেশের রাষ্ট্রদূতের বাকযুদ্ধ প্রকাশ্যে...

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যুদ্ধ সম্প্রসারিত হয়েছে, দুই দেশের রাষ্ট্রদূতের বাকযুদ্ধ প্রকাশ্যে এসেছে

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যুদ্ধ সম্প্রসারিত হয়েছে, : দুই দেশের রাষ্ট্রদূতের বাকযুদ্ধ প্রকাশ্যে এসেছে : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সামনের নির্বাচিত সরকার এই যুদ্ধের তোপের মুখে পড়বে : বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্র নীতি পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাবে! /?
বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক ও ভূঅর্থনৈতিক গুরুত্ব এখন বেশ দৃশমান তবে এই গুরুত্ব বাংলাদেশের জন্য বিপদও ডেকে আনছে কীনা তা ভাবার সময়ও এসে গেছে।  কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশের জন্য একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিককে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি সিনেটে তাঁর সাক্ষ্য প্রদান কালে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।  তিনি বলেছেন,  বাংলাদেশে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি অবগত। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গুরুত্ব এখন অনেক বেশি, বিশেষ করে  ইন্দো প্যাসিফিককে অবাধ ও মুক্ত রাখার জোটে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।  বাংলাদেশ একটা উদীয়মান অর্থনীতি যে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার দোরগোড়ায় এসে গেছে। এই দেশের অর্থনীতির চেয়ে তার প্রতিরক্ষা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।  বিশেষ করে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা বা সংকটের কথা বলেছেন।  তিনি বলেন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের একার ভূমিকার চেয়ে অন্যদেরও টেনে আনতে হবে।  বাংলাদেশে আসলে তাঁর দায়িত্ব হবে এখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ দেখা এবং বাংলাদেশকে শক্তিশালী প্রতিবেশীদের চাপ থেকে বের করে নিয়ে আসতে সাহায্য করা। এই প্রসঙ্গে তিনি চীনকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ঝুঁকি হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।  তাঁর পর্যবেক্ষণ হলো চীন বাংলাদেশের সীমানায় সাবমেরিন রক্ষাণাবেক্ষনের নামে গোয়েন্দাগিরী করছে এবং চীন থেকে যে ফাইটার জেট কেনার কথা তা বেশ উদ্বেগজনক।
আগামী রাষ্ট্রদূতের কথায় এটা পরিষ্কার হলো বাংলাদেশে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থের বিষয়ে মনোযোগী হবেন।  তাঁর এই মনোযোগে বাংলাদেশের কি লাভ? বা ঝুঁকি?
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের বলি হয়ে  বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানিতে চাপ তৈরি হয়েছে এবং বাংলাদেশ কয়েকগুণ বেশি দামে গম কিনেছে।  এছাড়াও আরও বিমান ইত্যাদি কেনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।  এতে বাংলাদেশের লাভ এখনো ক্ষতিতেই আটকে আছে।  আর যদি চীনকে মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশকে নানান ভাবে চাপ দেয় তবে বাংলাদেশের স্বাধীন অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।  বাংলাদেশের শিল্পের ভবিষ্যত চীনের সহযোগিতার উপর অনেকখানি নির্ভর করে। বাংলাদেশ গত পঞ্চাশ বছর ধরে চীনের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে,  নিত্যপণ্যতো আছেই।
এখন যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ও অর্থনীতিকে চীন থেকে দূরে থাকতে বলে তবে আখেরে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রথমত বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের সহায়তা চায়। কিন্তু তারা সহযোগিতা না করলেও বিরোধিতা করলে বাংলাদেশ বেশ বিপদে পড়বে।  যার লক্ষণ চীনের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে স্পষ্ট।  তিনি বলেছেন,  রোহিঙ্গা সমস্যা দ্বিপাক্ষিক ভাবে সমাধান করতে হবে।  বাংলাদেশ বহুপক্ষীয় কূটনীতি করলে চীন মায়ানমারের জান্তা সরকারকে সহযোগিতা করবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ যদি চীন থেকে প্রতিশ্রুত সামরিক পণ্য না কিনে তবে চীন বাংলাদেশের জন্য তার সহায়তা বন্ধ করবে।  চীনের রাষ্ট্রদূত তাই সম্প্রতি বললেন,  বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্কে অন্য পক্ষের হস্তক্ষেপ মানবে না। এতেই বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ও চীনের রাষ্ট্রদূতের বাকযুদ্ধ স্পষ্ট হয়ে গেলো।
বাংলাদেশ এখন রাজনৈতিকভাবে একটা অনৈক্যের মাঝে নিপতিত।  সামনে নির্বাচন যথাসময়ে হবে কীনা – সন্দেহে নিমজ্জিত।  এই ধরনের পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল যেনো বাংলাদেশকে তাদের কব্জায় নিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।  এর পরিণাম বাংলাদেশের জন্য ভালো নয়।
চীনের ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ভুলে যাচ্ছেন, বাংলাদেশ একটা সার্বভৌম রাষ্ট্র।  তার অর্থনীতির জন্য সে তার পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করবে, অন্য দেশের বিরোধের অংশ হতে নয়।  কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যদি তাদের ইন্দোপ্যাসিফিক বিরোধ বাংলাদেশে নিয়ে আসে তবে বাংলাদেশেরই বিপদ।  যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী চীন বিরোধিতা বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে বলির পাঁঠা বানাতে চায়। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক যেনো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির শিকারে পরিণত না হয়। বাংলাদেশকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।
লেখক- শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক

সর্বশেষ