শনিবার,২০,এপ্রিল,২০২৪
32 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
Homeসীমানা পেরিয়েবাইডেন-কমলার অভিষেকঃ ট্রাম্পের বিদায় হলেও বিদায় হবে না ট্রাম্পিজম

বাইডেন-কমলার অভিষেকঃ ট্রাম্পের বিদায় হলেও বিদায় হবে না ট্রাম্পিজম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন জোসেফ আর বাইডেন। তার সাথে দেশটির প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন কমলা হ্যারিস। বাইডেন-কমলা যখন শপথ নেন তখন বহু দূরে ছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই দিন সকালে তিনি হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিয়ে মেরিল্যান্ড অ্যান্ড্রুস বিমান ঘাঁটিতে শেষ বিদায় নেন। আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অভিশেক অনুষ্ঠানে থাকবেন না। এমন অনাড়ম্ব অনুষ্ঠানে না থেকে ট্রাম্প ১৫০ বছরের প্রথা ভঙ্গ করলেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে নিন্দিত প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প বিদায় নিলেও ট্রাম্পিজম কি বিদায় হবে? আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘না’। বরং ট্রাম্পিজম আরো বেশি উগ্র হবে। কারণ বিদায়ী ভাসনে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আবার ফিরে আসবেন। রিপাবলিকানে হয়তো আর থাকা হবে না। আসবেন ‘প্যাট্রিয়ট পার্টি’ নামে নতুন দল নিয়ে। যদি তাই হয়, ট্রাম্প্রের ‘প্যাট্রিয়ট পার্টি’ হবে শ্বেতাঙ্গবাদীদের দক্ষিণপন্থী উগ্র দল, যা মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে শপথ অনুষ্ঠানের চিত্র দেখে। করোনার কারণে ওই অনুষ্ঠান সীমিত করা হলেও ছিল নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওয়াশিংটন ডিসিতে ছিল ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড। বন্ধ ছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, শপিংমল ও বিপণী বিতান। উঁচু বেস্টনি দিয়ে সুরক্ষিত ছিল ক্যাপিটাল হিল। চলাফেরাতেও ছিল ব্যাপক কড়াকড়ি। এমন শ্বাসরুদ্ধকর ব্যবস্থা ছিল কেবল উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদী ট্রাম্প অনুসারীদের হামলার আশঙ্কায়।
এ কথা ঠিক যে ২০ জানুয়ারি বাইডেন-কমলার অভিশেকের মধ্যদিয়ে মার্কিন ইতিহাসের এক কলঙ্কময় ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। বিদায় হয়েছে বিশ্ব উন্মাদ খ্যাত এক রোখা প্রেসিডেন্ট। তার চার বছর একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ দেখেছেন অর্থনৈতিক অধোগতি, মন্দা, বিপুল ছাঁটাই, অনিয়ন্ত্রিত মহামারীর কামড়, জাতিবিদ্বেষ, অভিবাসী-বিরোধী উগ্রতা, স্বৈরাচার ও স্বেচ্ছাচারের এক উৎকট মিশ্রণ। অন্যদিকে, তার রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের কর্মসূচি প্রসারিত হয়েছে লাতিন আমেরিকা থেকে ইরান, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে ভারত মহাসাগরে। বিদায়বেলাতেও তার আত্মদাম্ভিকতা একটুও কমে নি। উল্টো তিনি দম্ভের সাথে বলেছেন, চার বছরে বহু কাজে তিনি সাফল্য অর্জন করেছেন। বলেছেন, ‘আবার দেখা হবে’। ফলে ভবিষ্যতে ট্রাম্পিজম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঐক্যবদ্ধ আমেরিকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ নিতে হলো জো বাইডেনকে। তার অভিশেক ভাষণে বার বার বলতে শোনা গেছে ‘বিভক্তি নয়, ঐক্যের আহ্বান’।
এ দিন মার্কিন রাষ্ট্রপতির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পী লেডি গ্যাগা। গান গেয়েছেন জেনিফার লোপেজও। চিরাচরিত প্রথায় ক্যাপিটলের ওয়েস্ট ফ্রন্টে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে ৭৮ বছর বয়সী জো বাইডেন কে পদ ও গোপনীয়তার শপথ বাক্য পাঠ করান। শপথ নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তাকে শপথগ্রহণ করান বিচরপতি সোনিয়া সটোমেয়র।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অল্প সময় পরেই বাইডেন তার ভাষণে বলেন, এই দিন গণতন্ত্রের দিন। গণতন্ত্র ভঙ্গুর নয়। তিনি বলেন, আমেরিকা গণতন্ত্রের জন্য জেগে উঠতে সক্ষম হয়েছে। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদের বিপদ, জাতিবিদ্বেষের বিপদের কথাও উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, ঘৃণা, উগ্রবাদ, হতাশা, তৈরি হওয়া ক্ষত প্রশমনের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। বাইডেনের ভাষণের মধ্যদিয়েই স্পষ্ট হয়েছে বিভাজিত আমেরিকার সুর। তাইতো তিনি বার বার ভাষণে গেয়েছেন ঐক্যের গান।
নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যতই ঐক্যের কথা বলুক, দেশটিতে ট্রাম্প বিভাজনের যে বীজ বপণ করে গেল তা সহজে প্রশমিত হবে বলে মনে হয় না। কারণ ট্রাম্প হেরে গেলেও প্রায় ৮ কোটি মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে। ট্রাম্পের মতোই তারাও বিশ্বাস করেন, তাদের বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এর ফলে ট্রাম্প বিদায় নিলেও শান্ত আমেরিকা নিয়ে বাইডেনের এগিয়ে যাওয়া কঠিন’ই হবে। ইতোমধ্যেই আমেরিকাকে দুই ধারায় বিভক্ত করতে ট্রাম্প উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদকে চরম মাত্রায় উস্কে দিয়েছেন। এছাড়া ট্রাম্প ঘরানার কিছু রাজনীতিক নিজেদের লাভবান করতে জনবিরুদ্ধ নীতির বাস্তবায়ন করেছে। ওই শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা মনে করেন ট্রাম্প এখনো অভূতপূর্ব। ফলে মার্কিন গণতন্ত্রের ইতিহাস থেকে ট্রাম্পিজমের ভূত সহজে দূর হবে বলে মনে হয় না।
২০১৭ সালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বিশ্ববিখ্যাত গণমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ মাস্ট হেডের নিচে লিখেছিল ‘ডেমোক্র্যাসি ডাইয়েস ইন ডার্কনেস’। সত্যিই তাই ৪ বছরের শাসন এবং বিদায় বেলা ট্রাম্প আমেরিকার গণতন্ত্রকে অন্ধকারের মধ্যেই ফেলে রেখে গেল। যে দেশটি এতকাল সারা বিশ্বকে গণতন্ত্রের ছবক দিত, এমন কলঙ্কময় ইতিহাসের পর এখন গণতন্ত্র বিষয়ে বিশ্ববাসীকে মার্কিন নেতারা ছবক দিবেন কোন মুখে!

সর্বশেষ