ভেনিজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ কি একটা ক্যারিবীয় সাগরীয় যুদ্ধে পরিণত হবে? ট্রাম্পের ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে মাদকসম্রাট বলার কারণ কি ভেনিজুয়েলার মার্কিনবিরোধী সমাজতান্ত্রিক নীতিমালা! / ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরার প্রতি নতুন করে যুদ্ধের মাত্রা বৃদ্ধি করেছেন। ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন রণতরীর সংখ্যা ও টহল বাড়ানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাদুরো বিষয়ে তথ্য প্রদানকারীদের পুরস্কার পঁচিশ মিলিয়ন থেকে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোর্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট মাদুরো একজন মাদকসম্রাট। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই মাদক প্রবেশ করছে। ফলে মাদকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে মাদুরোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়।

এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের দিকে যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন থেকে। তখন ২০১৯ সালে প্রসিডেন্ট মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অবৈধ ঘোষণা করেছিলো। কারচুপি ও নানা দূর্নীতির অভিযোগ এনেছিল মার্কিন ফান্ডেড এনজিওগুলো। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখনই প্রেসিডেন্ট মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছিলেন। তারপর বাইডেনের আমালে তা অব্যাহত থাকে এবং পুনরায় ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর তা আরও জোরদার হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার হলো, মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা। আবার কোনো কোনো দেশে তারা সরাসরি সামরিক অভিযান চালায়। অন্যদিকে, এইসব অঞ্চলের যেসব দেশ নিজেদের সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ সহ নানা সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আর সবচেয়ে কার্যকর যে হাতিয়ার ব্যবহার করে তা হলো, মার্কিন ফান্ডেড এনজিওগুলোকে মানবাধিকার ও গনতন্ত্রের দাবিতে সোচ্চার রাখে। এটা বেশ ভালো ফল দেয়। সমাজতান্ত্রিক নীতিমালা গ্রহণ করার পর মার্কিন অবরোধে দেশগুলোর অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং জনগন দারিদ্র্যের মধ্যে নিপতিত হয়। এই জন-অসন্তোষের রাজনীতি ব্যবহার করে মার্কীনপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো। ভেনিজুয়েলাও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রেসিডেন্ট হুগো স্যাভেজ ভেনিজুয়েলাকে সমাজতান্ত্রিক দেশ এবং পরবর্তীতে ভেনিজুয়েলা বলিবারিয়ান প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দ্বন্দ্ব ও সংঘাতময় হয়ে উঠে। কোনো নির্বাচন, যেটায় সমাজতান্ত্রিক প্রার্থী বিজয় লাভ করলে যুক্তরাষ্ট্র তা সমর্থন করে না।

ভেনিজুয়েলা কিউবা নয়, মাদুরো তেমন জনপ্রিয় নয়, পঞ্চাশ শতাংশের কম ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি সমাজতান্ত্রিক নীতিমালা অব্যাহত রাখায় যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে মাদকসম্রাট আখ্যায়িত করে কোর্ট ও সামরিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বন্দী করতে চায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভোমত্বের গুরুত্ব তেমন নেই : তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের ক্ষতি হলেই সামরিক আগ্রাসনে নেমে পড়ে।

লেখক- শরীফ শামশির

লেখক ও গবেষক