ভেনেজুয়েলার কথিত ‘কার্টেল দে লস সোলেস’কে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন (এফটিও) হিসেবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সোমবার এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী তালিকায় যুক্ত করবে। যা ওয়াশিংটনের মতে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
তবে কার্টেলটি প্রকৃতপক্ষে কোনও মাদকচক্র নয়। এটি ভেনেজুয়েলার সামরিক কর্মকর্তা ও সরকারি ব্যক্তিদের বোঝাতে ব্যবহৃত একটি প্রচলিত শব্দ, যারা দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি আরও জোরালো করার আইনি ভিত্তি তৈরি হতে পারে। ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার ভূখণ্ডে সম্ভাব্য হামলা পরিস্থিতিকে বড় ধরনের সংঘাতে রূপ দিতে পারে। মার্কিন অভিযানে এ পর্যন্ত মাদক পাচারের অভিযোগে সন্দেহভাজন নৌযানে হামলায় ৮০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এবং আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা এসব হামলাকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, এগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শামিল।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, শিগগিরই ওয়াশিংটন নতুন ধাপের অভিযান শুরু করতে পারে। তবে সময়, পরিধি বা ট্রাম্প চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ভেনেজুয়েলা বিষয়ে ‘কোনও কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না’। দুই কর্মকর্তা জানান, গোপন অভিযানই মাদুরোকে লক্ষ্য করে নতুন পদক্ষেপের প্রথম ধাপ হতে পারে। বিকল্পগুলোতে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রয়াসও রয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে ভেনেজুয়েলার উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের মাদক কারবারে সম্পৃক্ততা বোঝাতে ‘কার্টেল দে লস সোলেস’ শব্দটি চালু হয়। পরে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ায় এটি পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা এবং অবৈধ খনন ও জ্বালানি পাচারের মতো কর্মকাণ্ড বোঝাতেও এটি ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ‘সোলেস’ বলতে সামরিক কর্মকর্তাদের কাঁধের ব্যাজকে বোঝায়। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে মাদক সন্ত্রাসবাদ (নারকো টেররিজম)-সহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা করার সময় এই শব্দটিকে একটি কথিত মাদকচক্রের পর্যায়ে উন্নীত করে।
২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা মাদুরো অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ট্রাম্প তাকে অপসারণ করতে চান এবং জনগণ ও সামরিক বাহিনী প্রতিরোধ করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা কারাকাসে চাপ বাড়িয়ে তুলছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির আকাশপথেও প্রভাব পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বর্ধিত সামরিক তৎপরতার’ কারণে ঝুঁকির সতর্কতা জারি করার পর শনিবার ছয়টি এয়ারলাইন ভেনেজুয়েলায় ফ্লাইট বাতিল করে। স্পেনের ইবেরিয়া, পর্তুগালের টিএপি, চিলির লাতাম, কলম্বিয়ার আভিয়ানকা এবং ব্রাজিলের গোল নিজেদের সবগুলো ফ্লাইট স্থগিত করেছে বলে জানিয়েছেন ভেনেজুয়েলার এয়ারলাইন অ্যাসোসিয়েশনের (এএলএভি) সভাপতি মারিসেলা দে লোয়াইজা। রবিবার তুর্কিশ এয়ারলাইনও জানায়, তারা ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল করবে।



