বুধবার,১৭,এপ্রিল,২০২৪
26 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪
Homeরাজনীতিমহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাজেটে বরাদ্দ না হলে কঠোর আন্দোলন

মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাজেটে বরাদ্দ না হলে কঠোর আন্দোলন

তিস্তা কনভেনশনে উত্তরের মানুষের কড়া হুশিয়ারী উচ্চারণ

রংপুর সংবাদদাতা ॥ “তিস্তাপাড়ের মানুষ বাঁচতে চান। উত্তরাঞ্চলের দুঃখ তিস্তা রক্ষায় মহাপরিকল্পনা চীন-ভারত, আমেরিকা বা রাশিয়ার অর্থায়নে নয়, পদ্মাসেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে করতে হবে। তার জন্য আগামী বাজেটেই বরাদ্দ চাই। তানাহলে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব”-এমন কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করলেন উত্তর জনপদের তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।

১৪ মে ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ আহুত তিস্তা কনভেনশন থেকে তারা এমন হুশিয়ারি উচ্চারণ করলেন। এর কারণ এ লড়াই তাদের বাঁচার লড়াই, ফসল-বসতভিটা ও পরিবেশ-প্রতিবেশ বাঁচানোর লড়াই। এর জন্য তারা মরণ কামড় লড়াইয়ে লড়ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
এদিন লালমনির হাট তিস্তা কলেজ মাঠে সংগঠনের নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক ছাদেকুল ইসলাম দুলালের নামে উৎসর্গিত মঞ্চে সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং সামনে হাজার হাজার মানুষ সমেবেত কণ্ঠে আওয়াজ তুললেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজ হলে, উত্তরের কোটি মানুষের জন্য মাত্র সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হবে না, এটা আর মেনে নেয়া হবে না।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, তিস্তাপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আজ অস্তিত্বের সংকটে। অপেক্ষার প্রহর অনেক কেটেছে। বন্যা-ভাঙ্গনে মানুষের হারাবার মতো আর কিছু নেই। সব হারানো মানুষ এবার ঘুরে দাঁড়াবেন। লড়াইয়ের মাধ্যমেই তারা দাবি আদায় করবেন। আর পিছু হটার জায়গা নেই। ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচী দিয়েই দাবি আদায় করা হবে।
সকাল থেকেই লালমনিরহাট তিস্তা কলেজ মাঠে শত শত মানুষ জড়ো হতে থাকেন। দিনভর বৃষ্টি উপেক্ষা করে তিস্তার দুই পাড়ের ৫ জেলার ১২টি উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ কনভেনশনে আসতে থাকেন। ওই জনপদের কৃষক, শ্রমিক, নারী তাদের সকল কাজ ফেলে প্রাণের দাবি বাস্তবায়নে কনভেশনে যোগ দেন। বেলা ১১টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কনভেনশনের আনুষ্ঠানিকতা। উদ্বোধন ও সভাপতিত্ব করেন তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক গবেষক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট শিক্ষক শফিয়ার রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
শুরুতেই কনভেনশনের সাফল্য কামনা করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপির লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়। এরপর কনভেনশনের মূলপত্র পাঠ করেন তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ।
অন্যান্যদের মধ্য বক্তব্য রাখেন জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গোলাপ, কক্সবাজার মাতামহুরী রক্ষা আন্দোলনের নেতা হাজি বশিরুল আলম, লালমনিরহাটের বিশিষ্ট সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক শফিকুল ইসলাম কানু, রাজারহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু নূর আক্তারুজ্জামান, লালমনিহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন, রাজারহাটের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস, কালিগঞ্জের ভোটমারী ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন ও কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সাজু সরকার প্রমূখ।
এর আগে সংগঠনের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য গাইবান্ধার নদী আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক ছাদেকুল ইসলাম দুলাল ও হাতিবান্ধার সংগঠক মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব গৃহিত হয়। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বখতিয়ার হোসেন শিশির।
ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে এই কনভেনশন থেকে দাবি আদায়ে আগামী ৫ জুন বিশ্বপরিবেশ দিবসে তিস্তার দুই তীরে নৌকা মিছিল ও বিভিন্ন পয়েন্টে সমাবেশ, ৭ জুন রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠকের কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী।

সর্বশেষ