মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীন! শ্রমজীবি গরীব-মধ্যবিত্ত অসহায়

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীন! গরীব – মধ্যবিত্ত এখন টিসিবির ট্রাকের লাইনে! মূল্যস্ফীতি উপমহাদেশের দেশগুলোর চেয়ে বেশি!দেশের রাজনৈতিক হাওয়ার উত্তাপের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার খবরে সরকার একপ্রকার উদাসীন। অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর মুদ্রাস্ফীতি নয়ের নিচে বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন। অথচ, গত এক সপ্তাহ ধরে সবজি, চাল-ডাল ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে।

সংবাদপত্রগুলো এবং রেডিও টেলিভিশনে পণ্যের বাজারের উর্দ্ধগতির খবর প্রতিনিয়ত প্রচার করছে।যেমন, সংবাদের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারে পণ্যের দরপতন, বাংলাদেশে সুফল কম। বিশ্ববাজারে চাল, সয়াবিন, চিনি, জ্বালানি তেল ও এলপিজির দাম কমলেও দেশের বাজারে তার প্রভাব নেই বরং উল্টো, এইসব পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে।সবজির দাম ২৬% বেশি। উপমহাদেশের হিসেবে যেমন, শ্রীলঙ্কা মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ০.৩০, ভারত ১.৫৫, নেপাল ২.৭২, পাকিস্তান ৪.১০ এ নামিয়ে আনতে পারলেও বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ৮.৫৫। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা যদি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দ্রুত নির্বাচন দিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দ্রব্যমূল্য কমাতে পারে তাহলে বাংলাদেশ কেনো ব্যর্থ হচ্ছে – এই প্রশ্নগুলো আলোচনায় উঠে আসছে।

গলদটা কোথায়?বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যেসকল রিপোর্ট গত কয়েক বছরে ছাপা হয়েছে বা আলোচনা হয়েছে তারমধ্যে প্রধান বিষয় হলো, রিজার্ভ এবং ডলারের দাম, মুদ্রা পাচার, ব্যাঙ্ক লুটপাট এবং বাজারের সিন্ডিকেট ইত্যাদি ইত্যাদি। দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য মুদ্রা নীতির উপর নির্ভর করেছে। বাজার তদারকি, সিন্ডিকেটের রহস্য উদঘাটন, কৃষি পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও সরকারি সহায়তা বিষয়ে নজর দেওয়া হয়েছে কম।তেলের সিন্ডিকেট কারা, চালের সিন্ডিকেট কারা, ডিমের সিন্ডিকেট কারা সরকার জানে। এটা সহজ, এই কারসাজি করে উৎপাদক মিল মালিক এবং আমদানি কারকগণ। যদি উৎপাদক ও আমদানিকারক এক হয় তবে মূল্য বাড়ার সিন্ডিকেট তারা। দেখা গেছে, সরকার তাদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে অন্যদিকে বাজারে ম্যাজিজট্রেট পাঠিয়ে খুচরা বাজারে ধমক ধামক ও জরিমানা করে। গোড়ায় পানি ঢেলে আগা কাটার মতো।

এখানে সরকারের অসহায়ত্ব কোথায়? হাঁ, একজায়গায় সরকার অসহায়। সরকার যদি আইএমএফ থেকে ঋণ নেয় তবে বাজারে বেশি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এটা আইএমএফের শর্ত।কৃষিতে ভর্তুকী, কৃষি পণ্যে মূল্য সহায়তা এবং বাজার সংস্কার করা না গেলে বাজার অবশ্যই আট থেকে বারটা কোম্পানির হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে হয়। ব্যবসায়ীদের হা মেটাতেই সরকার হিমশিম খায়।অর্থনীতির নীতিমালার উপর নির্ভর করে মানুষ পেট ভরে ডাল-ভাত খেতে পারবে কিনা? এখানেই সমস্যা।বলা হয় আমরা উপর উপর এগোলেও তলার দিকে পিছিয়ে আছি কেনো? গরীব- মধ্যবিত্ত সরকারি প্রণোদনা ছাড়া মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ঠিকে থাকতে পারে না। এই মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে সরকার যাা কিছু করে তা ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই করে, ভোক্তার স্বার্থে তেমন কিছু করতে পারে না। জনগণের কল্যাণ তেমন হয় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই জনগণের বিশেষ করে গরীব-মধ্যবিত্তের অর্থনীতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। নচেৎ লিখতে লিখতে দূর্ভিক্ষ দেখবো তা নিরব হোক বা সরব হোক। ঋণের দায়ে গরীব পরিবার বা সৎ সাংবাদিক আত্মহত্যা করতেই থাকবে যদি তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতির মধ্যে পরিবর্তন না আসে।

শরীফ শমশির

লেখক ও গবেষক