রবিবার,২৮,এপ্রিল,২০২৪
29 C
Dhaka
রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
Homeজাতীয়সংবিধানের বিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের প্রস্তাব ওয়ার্কার্স পার্টির

সংবিধানের বিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের প্রস্তাব ওয়ার্কার্স পার্টির

নতুন কথা প্রতিবেদন: রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত আইন তৈরির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। ওয়ার্কার্স পার্টি রাষ্ট্রপতিকে বলেন, যদিও আইন মন্ত্রী বলছেন আইন প্রণয়নের যথেষ্ঠ সময় নেই তবে পার্লামেন্টেই উদাহরণ আছে যে এর চেয়েও কম সময়ে আইন প্রণয়ন কেবল নয়, সংবিধানও সংশোধন হয়েছে। যেটা প্রয়োজন সেটা হলো সংবিধানকে অনুসরণ করা। যদি একান্তই আইন প্রণয়ন না করা হয় তবে যে সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলা হচ্ছে সেক্ষেত্রেও সার্চ কমিটির দেয়া নামগুলোর সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির যাচাই বাছাইয়ের পর রাষ্ট্রপতিকে প্রেরণ করতে হবে এবং তিনিই সেই তালিকা থেকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করবেন। ওয়ার্কার্স পার্টির তরফ থেকে মাহমান্য রাষ্ট্রপতিকে নাগরিকবৃন্দের সঙ্গেও সংলাপ করার প্রস্তাব দেয়া হয়। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সর্বসম্মত মতামত গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাষ্ট্রপতির ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে আজ ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে নিম্নোক্ত লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। যা তুলে ধরা হলো।

জনাব মোঃ আবদুল হামিদ
মহামান্য রাষ্ট্রপতি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
বঙ্গভবন, ঢাকা।

প্রিয় মহোদয়,
আমাদের সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের স্থলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষে রাজনৈতিক দলের সাথে আপনি যে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ইতোপূর্বে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জনাব জিল্লুর রহমান এর আমন্ত্রণে অংশ নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ পদ্ধতির আইন প্রণয়নসহ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য আমাদের মতামত প্রস্তাব আকারে তুলে ধরেছিলাম এবং ২০১৬ সালে ঐ একই প্রস্তাব আপনার কাছে তুলে ধরেছি। আজকের সংলাপেও আমাদের সেই প্রস্তাবের পুনঃউল্লেখ করছি ঃ-
১. নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাই এর প্রতি তদ্রুপ মান্যতা ও মর্যাদা থাকতে হবে যাতে করে নির্বাচন পরিচালনা, তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন পরিবেশে কাজ করতে পারে।

২. সংবিধানের ১১৮ বিধি বাস্তবায়নার্থে আইনের বিধানাবলি অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি আইন তৈরি করতে হবে। জাতীয় সংসদের নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুতেই এই আইন উত্থাপন করে জরুরি ভিত্তিতে তা পাস করা যেতে পারে। এখানে উল্লেখ করতে চাই দেশের সকল রাজনৈতিক দলই এই আইন প্রণয়নের পক্ষে। নাগরিকবৃন্দের পক্ষ থেকেও একই দাবি উত্থাপিত হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত সংবিধান বর্ণিত বিধি পরিপূরণে আপনি সরকারকে এই নির্দেশ দিতে পারেন। অন্যথায় প্রতিবারের মত এবারও নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক জন্ম দেবে এবং এ ধরনের আস্থাহীনতার পরিবেশে নির্বাচন কমিশন যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারবে না।

৩. এই আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারগণ নিয়োগের জন্য নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেতা, স্পীকার, প্রধান বিচারপতি ও এ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে এই সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠিত হবে। এই সাংবিধানিক কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির নিকট প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের পরামর্শমত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ করবেন।

৪. যদি আইন প্রণয়ন একান্তই সম্ভব না হয় তবে বিকল্প হিসেবে যে সার্চ কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীদের নিয়ে তা গঠন করা যেতে পারে। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতি পদে চারজনের নাম প্রস্তাব করবে। সার্চ কমিটির দেয়া নামের তালিকা সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটি বাছাই করে সেখান থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে। রাষ্ট্রপতি ঐ তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ দেবেন।

৫. নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্যের মধ্যে দু’জন নারী সদস্য থাকবেন।

৬. নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী আইনসমূহের যথাযোগ্য প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি,
আমরা আশা করি, একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ ও কার্যক্ষম নির্বাচন কমিশন গঠন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমাদের প্রস্তাবাবলী আপনার সদয় বিবেচনা পাবে।
আমাদের আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ।

সংলাপে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি’র নেতৃত্বে পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক, কমরেড নুর আহমদ বকুল, কমরেড কামরূল আহসান, কমরেড আলী আহমেদ এনামুল হক এমরান ও কমরেড নজরুল ইসলাম হক্কানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কমরেড রাশেদ খান মেনন তার লেখা ‘এক জীবন’ প্রথম পর্ব স্বাধীনতার সূর্যোদয় গ্রন্থটি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করেন।

সর্বশেষ