মঙ্গলবার,২৩,এপ্রিল,২০২৪
36 C
Dhaka
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
Homeনারী কথা১৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনির্বাণ বাতিঘর ইলামিত্র লাল সালাম

১৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনির্বাণ বাতিঘর ইলামিত্র লাল সালাম

বেলাল বাঙালী : ইলামিত্র একটি বিপ্লবী অগ্নিস্ফুলিঙ্গের নাম। নারী, কৃষক, সাঁওতাল আন্দোলনের এক লড়াকু অগ্রগামী যোদ্ধার নাম। নাচোলের রানী খ্যাত এক মহিয়সী নারীর নাম। ইতিহাসের এই অগ্নিকন্যা ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী তেভাগা আন্দোলনের বিপ্লবী সৈনিক। শতকষ্ট, অমানসিক যন্ত্রণার পরেও যিনি আপোস করেন নি। লড়েছে মানুষের জন্য, মানুষের মুক্তির সংগ্রামে। ছিলেন আদিবাসী সাঁওতালদের প্রাণের মানুষ। ১৩ অক্টোবর ছিল এই বিপ্লবী অগ্নিকন্যার ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। সাপ্তাহিক নতুন কথার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও লাল সালাম।

ইলামিত্র’র জন্ম ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায়। আদি বসতভিটা বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার বাগুটিয়া গামে। পড়ালেখা কলকাতার বেথুন কলেজ ও কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ে। বাংলা সাহিত্যে এম এ পাশ করা এই নারী কলেজে পাঠরত অবস্থায় নারী আন্দোলন ও ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন।

১৯৪২-৪৩ সালে বাংলায় ভীষণ দুর্ভিক্ষ-দেখা দেয়। এসময় কৃষকদের ওপর শোষণের মাত্রাও বাড়ে। জমিতে উৎপাদিত ফসলের ‘৩ ভাগের ২ ভাগ ফসল কৃষকের’ এই দাবি নিয়ে বেগবান হতে থাকে কৃষক আন্দোলন। দিনাজপুরের হাজী দানেশ, যশোরের অমল সেন, নুরজালাল, মোদাচ্ছের মুন্সি, রাসক লাল, হেমন্ত সরকার, কৃষ্ণ বিনোদ রায় কৃষকদের মাঠ পর্যয়ে সংগঠিত করতে থাকেন। রমেন মিত্র ও ইলামিত্র রাজশাহী অঞ্চলে কৃষকদের সংগঠিত করতে থাকেন। ১৯৪৫ সালেই জমিদার ও সহযোদ্ধাবিপ্লবী রমেন মিত্রের সাথে ইলামিত্রের বিয়ে হয়। ইলাসেন থেকে পরিচিতি লাভ করেন ইলামিত্র হিসেবে। ১৯৪৯ সালে হাজার হাজার ভ‚মিহীন কৃষক ইলামিত্রের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়। জমিদার, জোতদার মহাজনরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ঐ বছর তাদের আর ধান না দিয়ে কৃষক সমিতির উঠোনে তোলা হয়। ফলে সংঘর্ষ বাধে। ১৯৫০ সালে জোতদার ও ভ‚মিমালিকরা নাচোলের আশপাশে তে-ভাগা কার্যকর করতে বাধ্য হয়। আর ইলামিত্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে সাঁওতাল ও ভ‚মিহীনদের এক শক্তিশালী তীরন্দাজ সমৃদ্ধ লাঠিয়াল বাহিনী। ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি পুলিশের সাথে গ্রামবাসীর খÐযুদ্ধ শুরু হয়। সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ সদস্য প্রাণ হারায়। এ ঘটনায় পুলিশ গ্রামবাসীর ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। গ্রামবাসীদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চলে। প্রায় শতাধিক কৃষক, সাঁওতালকে হত্যা করা হয়। ইলামিত্রকে গ্রেফতার করে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।

ইলামিত্রের স্বপ্নছিল নতুন সমাজ গড়ার। শোষণ, বৈষম্যহীন সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। ভারত ও বাংলাদেশের স্বধীনতা সংগ্রামে এক উজ্জল ও অবিস্মরণীয় নাম ইলা মিত্র। দীর্ঘ সময় পর সুস্থ হয়ে তিনি কলকাতা সিটি কলেজে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সকল প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত থেকেছেন। ১৯৬২-১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি ৪ বার বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে ভারতে আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থী বাঙালিদের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ১৯৮৯ সালে তিনি শিক্ষকতা থেকে আবসর নেন। উপমহাদেশে নারী জাগরণ ও কৃষক আন্দোলনের এই কিংবদন্তী নেত্রী ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। তার সাহস ও সংগ্রামের দৃষ্টান্ত শোষিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত, গণমানুষের নিকট চির অনির্বাণ বাতিঘর হয়ে থাকবে। লাল সালাম ইলামিত্র।

সর্বশেষ