রবিবার,২৮,ডিসেম্বর,২০২৫
14 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫
প্রচ্ছদসীমানা পেরিয়েস্বঘোষিত সোমালিল্যান্ডকে বিশ্বে প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল

স্বঘোষিত সোমালিল্যান্ডকে বিশ্বে প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল

“স্বঘোষিত রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী সোমালিল্যান্ডকে বিশ্বে প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) এক ঘোষণায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী দেশটিকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন”

নেতানিয়াহু তার বিবৃতিতে সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আবদিরাহমান মোহামেদ আবদুল্লাহিকে অভিনন্দন জানান। তিনি আবিদুল্লাহির নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং তাকে ইসরায়েলে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, কৃষি, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও প্রযুক্তি খাতে সোমালিল্যান্ডের দিকে ইসরায়েল শিগগিরই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।

ইসরায়েলের বিবৃতি অনুযায়ী, নেতানিয়াহু, ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার এবং সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট যৌথ স্বীকৃতির একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। ইসরায়েলের এই ঘোষণা ওই অঞ্চলের রাজনীতির প্রকৃতি যেমন বদলে দিতে পারে, তেমনি বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে সোমালিয়ার অনমনীয় অবস্থানকেও চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। ১৯৯১ সালে সোমালিয়া গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে সোমালিল্যান্ড কার্যত স্বায়ত্তশাসন এবং তুলনামূলক শান্তি ও স্থিতিশীলতা উপভোগ করে আসছে। তবে এত বছরেও অঞ্চলটি অন্য কোনও দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি। সোমালিল্যান্ডের স্বীকৃতি ঠেকাতে বছরের পর বছর ধরে সোমালিয়া আন্তর্জাতিক মহলে সক্রিয়ভাবে লবিং করে আসছে।

ইতোমধ্যে, সোমালিল্যান্ডের স্বীকৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে সোমালিয়া। ইসরায়েলের ঘোষণাকে ‘অবৈধ পদক্ষেপ’ বলে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়া সোমালিয়ার সার্বভৌমত্বে একপ্রকার ইচ্ছাকৃত আক্রমণ। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের সার্বভৌমত্ব, একতা এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা রক্ষা করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। এজন্য আন্তর্জাতিক বিধি মোতাবেক (স্বীকৃতির বিরুদ্ধে) প্রয়োজনীয় সবরকম কূটনৈতিক, রাজনৈতিক এবং আইনি পদক্ষেপ নিতে সরকার পিছপা হবে না।

তবে নেতানিয়াহু বলছেন, তাদের ঘোষণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ২০২০ সালে ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় ইসরায়েল সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করে; পরে আরও কয়েকটি দেশ এতে যুক্ত হয়।

প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহি এক বিবৃতিতে বলেন, সোমালিল্যান্ড আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে এবং তিনি এটিকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, সোমালিল্যান্ড অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে, পারস্পরিক সমৃদ্ধি বাড়াতে এবং মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা জুড়ে স্থিতিশীলতা জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসরায়েলের স্বীকৃতির বিরোধিতা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও। মিসর জানায়, শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি সোমালিয়া, তুরস্ক ও জিবুতির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনালাপে ইসরায়েলের ঘোষণার পর হর্ন অব আফ্রিকায় সৃষ্ট ‘বিপজ্জনক পরিস্থিতি’ নিয়ে আলোচনা করেন।

মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, ওই মন্ত্রীরা সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান, সোমালিয়ার ঐক্য ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, বিচ্ছিন্ন অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেওয়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। আফ্রিকান ইউনিয়নও সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার যেকোনও উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, সংস্থাটি সোমালিয়ার ঐক্য ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি “অটল প্রতিশ্রুতি” পুনর্ব্যক্ত করছে এবং সতর্ক করেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ গোটা মহাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন করতে পারে।

এদিকে, সাবেক ব্রিটিশ প্রটেক্টোরেট সোমালিল্যান্ড আশা করছে, ইসরায়েলের স্বীকৃতি অন্য দেশগুলোকেও একই পথে হাঁটতে উৎসাহিত করবে, ফলে তাদের কূটনৈতিক প্রভাব ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়বে।

সূত্র: রয়টার্স

সর্বশেষ