জাপান সফর ট্রাম্পের ভাগ্য সুপ্রসন্ন! জাপানের সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্খা উজ্জীবিত! সাউথ চায়না সাগরে মার্কীন রণতরী জাপানের সহযোগিতায় চীনকে ঘিরে ফেলবে! ট্রাম্পের শান্তির নোবেলের আকাঙ্খা আসলে যুদ্ধ বাঁধানোর ফাঁদ ছাড়া আর কি!
ইতিহাসে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের জাপান সফর বেশ কঠিন ও জটিল। একবারতো কোনো এক প্রেসিডেন্ট চাপ সহ্য করতে না পেরে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার ভান করেছিলেন – রসিক সাংবাদিকরা এভাবেই লিখেছিলেন। সে তুলনায় ট্রাম্প বেশ ভাগ্যবান! তিনি জাপান থেকে দু-হাত ভরে নিয়ে গেলেন। জাপানের সাথে রেয়ার আর্থ বা বিরল খনিজ সম্পদ আহরণের চুক্তি করলেন। যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আদায় করলেন। জাপান যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল অঙ্কের সামরিক সরঞ্জাম কিনতে রাজী হয়েছে। এর সাথে ইন্দো- প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক মহড়া বাড়াবে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যোগাযোগ মুক্ত ও অবাধ রাখার জন্য। আর এখানেই জাপানের সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্খা উজ্জীবিত হয়েছে। চীনকে শায়েস্তা করা না গেলেও চেপে রাখা যাবে।
জাপানের বর্তমান রক্ষণশীল নারী প্রধানমন্ত্রী বেশ উজ্জীবিত ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়ে। তিনি জাপানের ঐতিহ্য ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রের চাল কিনতে রাজী হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি টয়োটার গাড়ি জাপানের বাজারে বিক্রি করার সুযোগ পাবে। এছাড়াও জাপান রাজি হয়েছে আগামী বছরের মার্চ থেকে তাদের জিডিপির ২% প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করবে এবং তার পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রের কোষাগারে জমা হবে। জাপানের পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমবে কীনা তা স্পষ্ট না হলেও জাপান ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেলের সুপারিশ করতে বেশ উৎসাহী !
জাপান একটা শান্তশিষ্ট দেশ হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করলেও ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। জাপান মেইজি আমল(১৮৬৮) থেকে সামরিকীকরণ ও পশ্চিমা জ্ঞান আহরণের প্রক্রিয়া গ্রহণের পর থেকেই একটা সাম্রাজ্যবাদী দেশ হিসেবে আর্বভূত হয়। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়ার সাথে ছাড়াও প্রতিবেশী সব দেশের উপর তার দখল কায়েম করতে গিয়ে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। জাপান একমাত্র দেশ যে যুক্তরাষ্ট্রের পার্ল হারবারে আক্রমণ করেছে। জাপান একমাত্র দেশ যার উপর যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক হামলা করেছে। এখন জাপানের প্রতিটি শহরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ক্যাম্প রয়েছে। জাপান এখনও পুরনো সূত্র ধরে চীনের প্রবল শত্রু। বর্তমানে চীন যুক্তরাষ্ট্রেরও সামরিক টার্গেটে আছে, অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে। জাপান এই সুযোগে খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসতে চাইছে। আর এবার রণক্ষেত্র হবে সাউথ চায়না সাগরে। এখানে ইন্দো- প্যাসেফিক বা অন্যান্য জোট গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে চেপে ধরতে চায়। চীনকে মোকাবিলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাই জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়াকে জোটে এনেছে। আর এই যুদ্ধের খরচটা যুক্তরাষ্ট্র জাপানের পকেট থেকে বের করবে।
একজন জাপানি লেখেন, এশিয়ায় আধিপত্য ধরে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যেমন জাপানকে দরকার তেমনি জাপানের সার্বভোমত্ব ধরে রেখে প্রতিবেশী দেশের উপর আধিপত্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দরকার।
ট্রাম্প জাপানের মনোবাসনা জানে জাপানও ট্রাম্পের মনোবাসনা জানে। ট্রাম্প জাপানের টাকা প্রতিরক্ষার নামে নিজের পকেটে ঢুকাবে এবং জাপান ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করে সামরিক শক্তি অর্জন করে সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্খা পূরণ করবে। শান্তির আড়ালে যুদ্ধের ব্যবসা। ট্রাম্প ও জাপান উইন উইন পজিশনে আছে। তার প্রতিফলন দেখার জন্য ট্রাম্পের চীন সফর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
লেখক- শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক



