গণমানুষের নেতা আমিনুল ইসলাম গোলাপ,বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আমাদের প্রিয় গোলাপ ভাই একরকম আকস্মিক ভাবেই আমাদের ছেড়ে পরপারে পাড়ি দিলেন। আমরা শোকাভিভূত, বয়স কিছু হয়েছিলো কিন্তু এভাবে চলে যাবেন, আমরা কেউ ভাবতেই পারিনি। উন্নতি চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হলো কিন্ত চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই গত ২২ অক্টোবর ২০২৫ চলে গেলেন।
আমরা যারা কৈশোরে রাজনীতির অ আ ক খ শিখছি, সেই সময় অন্যান্য অনেক নেতাদের মতো গোলাপ ভাইয়ের নামের সাথে পরিচিত হই, দেখা হয় অনেক পরে।কাছে যাওয়ার সুযোগ হয় আরো অনেক পরে। গোলাপ ভাই ছাত্র জীবন থেকেই প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পরেন। মেনন গ্রুপ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হয়ে উঠেছিলেন। ছিলেন কাজী জফর আহমেদের খুব স্নেহের শিষ্য,শিষ্য হয়েও আদর্শের প্রশ্নে তাকে ছেড়ে এসেছিলেন। কাজী জাফরের মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন,বেছে নিয়েছিলেন কৃষক,ভুমিহীন আর মুজুরদের সংগ্রামের এক অনিশ্চিত পথ। সেই পথ থেকে গোলাপ ভাই একদিনের জন্যও সরে আসেননি।
গোলাপ ভাইয়ের নামের সাথে যেভাবে পরিচয়, কৃষক,ভুমিহীন আর মুজুরদের অধিকার আদায়ে (Local Partial Movement) স্থানীয় সমস্যা ভিত্তিক আন্দোলন ও গরীব মেহনতীদের সংগ্রামে ছিলেন আপোষহীন। সে সময় এখনকার মতো সোসাল মিডিয়া ছিলো না, কিন্ত পেপার পত্রিকায় সেই সংগ্রামের সংবাদ সচেতন কর্মীর কাছে পৌঁছে যেতো।ভূমিহীনদের ভুমির লড়াইয়ে জিতেছেন,সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে স্থানীয় এক সংগ্রামে তিনি জয়ী হোন, যা উল্লেখ করার মতো। সেই সময় মহা শক্তিশালী সুদী মহাজনদের তিনি পরস্ত করেন।
সামনাসামনি গোলাপ ভায়ের সাথে দেখা আমার দেখা মেলে সম্ভবত ৯৭ সালে গাইবান্ধায় ছাত্র মৈত্রীর এক সভার আগে। বাস ষ্টান্ডে নেমে গোলাপ ভাইয়ের বাড়ী যাবো বলতেই রিক্সা ওয়ালা আমাকে নিয়ে চললেন। তারপর হাত মিলালাম সংগ্রামী মানুষটির সাথে। যাকে অনুভব করেছি আর পত্রিকায় পড়েছি। গোলাপ ভাই ছিলেন গাইবান্ধার সকল প্রগতিশীল,গণতান্ত্রিক,সাংস্কৃতিকসহ গণমানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রাণ।
গোলাপ ভাই বিশ্বাস করতেন স্থানীয় সমস্যা ভিত্তিক আন্দোলন ছাড়া পার্টি বিকশিত হবে না। এটা শুধু সত্য না (Universal Truth) ।তিনি আরো বলতেন,পার্টি বিকাশে গণসংগঠনের শ্রেনী স্বার্থের সংগ্রাম খুব জরুরী। ঢাকায় ছাত্র রাজনীতির সুযোগে গোলাপ ভাইয়ের সাথে ধীরে ধীরে গভীর রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। রাজনীতির কৌতহলী মনের আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর তিনি দিয়েছেন,কখোনো বিরক্ত হননি, মঝে মধ্যে ফোনেও সময় চেয়ে কথা বলেছি,কথা মানে প্রশ্ন। মনেপরে, সারাদেশের বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর প্রতিনিধিরা আমাকে সংগঠনের সভাপতি করলেন ব্যালট ভোটের মাধ্যমে,পরে গোলাপ ভাইয়ের সাথে দেখা হলে আমার পীঠে হাত রেখে বলেছিলেন, ভোটে জয়ী যুব সভাপতি, অভিনন্দন।
সমসায়িক রাজনীতি নিয়ে এই তো সেদিন দুমাসও হবে না, গোলাপ ভাইয়ের কাছে সময় চেয়ে সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে দীর্ঘ সময় কথা বলেছিলাম কথা মানে আমার মনের রাজনীতির প্রশ্ন। বলছিলেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে কেন্দ্র করে শ্রেনী পেশার মানুষ সংগঠিত করতে হবে, সহজ হবে না কিন্ত কাজটি করতে হবে। মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে আমরাও দাড়াবো, হতাশ হওয়া যাবে না। খুব আশাবাদী মানুষ ছিলেন গোলাপ ভাই। জাতীয় কৃষক সমিতি নিয়ে জেলায় জেলায় হাজির হতেন কোনো ক্লান্তি ছিলো না তার। আমাদের গোলাপ ভাই সাদাসীধা মানুষ ছিলেন। (Establishment) এর প্রতি তার কোনো আকর্ষন দেখিনি। জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন তিনি অতি সাধারনের মাঝে অসাধারন এক মানুষ। গোলাপ ভাইয়ের প্রস্থান পার্টি হারালো এক নিবেদিত প্রাণ নেতা ও সংগঠক আর আমি হারালাম আমার প্রশ্নের উত্তরদাতা। এই ক্ষতি পূরণ হবার নয়।তার হাতের জ্বলে থাকা মশালটি জ্বালিয়ে রাখাই আজ আমাদের প্রজন্মের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। শ্রদ্ধেয় প্রিয় গোলাপ ভাই, পরপারে ভালো থাকবেন। আপনার সাহসী সংগ্রামী স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লেখক- সাব্বাহ আলী খান কলিন্স
সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।
সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ও বাংলাদেশ যুব মৈত্রী।



