প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধের পর এবার নতুন একটা সামরিক মহড়া বা যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কীনা – তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক দিনে যখন তিনি আফগানিস্তানকে তাদের বাগমার বিমানবন্দর যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার বা দখল দিতে আহবান করছেন। তিনি তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, এতে আফগানিস্তান রাজী না হলে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে। এই মন্তব্যের সার কথা হলো, সামরিক হস্তক্ষেপ বা যুদ্ধ।
২০২১ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহারের পর এই প্রথম আবার সামরিক বিষয়ে ফিরে এসেছে। উল্লেখ করা যায়, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থন করেননি। তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বর্তমানে আফগানিস্তানের বিষয়কে সামনে নিয়ে আসেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত কয়েক মাস ব্যস্থ ছিলেন ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে মিসাইল যুদ্ধ নিয়ে যেখানে তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তিনি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্থ ছিলেন, পুতিনের সাথে বৈঠক করার পরও তিনি প্রয়োজনীয় যুদ্ধবিরতি আনতে না পারায় শান্তির নোবেল প্রাপ্তিতে কিছুটা পিছিয়ে যান। এরই মধ্যে তিনি ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের অনুমতি দিয়েছেন এবং তা ঘনীভূত হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে একদিকে ইজরায়েলের গণহত্যাকে সমর্থণ ও পৃষ্ঠপোষকতা করছেন অন্য দিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধের হুংকার ও দামামা বাজাচ্ছেন।
তবে আফগানিস্তানের বাগমার বিমানবন্দরের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রহ এশিয়ার বৃহত্তর অঞ্চলে শান্তি বিনষ্ট হবে – এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
ট্রাম্প পরিষ্কার করে বলেছেন, বাগমার বিমানবন্দর তাঁর প্রয়োজন প্রথমত, চীনের বিরুদ্ধে সামরিক স্ট্রাটেজিক পয়েন্ট হিসেবে এবং দ্বিতীয়ত এই বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকার আছে। ট্রাম্পের প্রথম বক্তব্য সত্য কিন্তু দ্বিতীয়টি মিথ্যা। বাগমার বিমানবন্দর প্রথম সামরিক প্রয়োজনে তৈরি করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র নয়। যুক্তরাষ্ট্র এই বিমানবন্দর আধুনিকায়ন করেছে আফগানিস্তানে তার দখলদারিত্ব বজায় রাখার জন্য। তবে এটা ঠিক, এই বিমানবন্দর গত সত্তর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করে আসছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ ছয় জন প্রেসিডেন্ট এই বিমানবন্দরে নেমেছেন এবং তাদের সৈন্যদের সাথে দেখা করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তাঁর গত পিরিয়ডে এই বিমানবন্দর ভ্রমণ করেছেন।
বাগমার বিমানবন্দর বেশ উঁচুতে প্রায় ৩৫ একর ভূমিতে বিস্তৃত। এখানে কার্গো থেকে বড় বড় সামরিক বিমান অবতরণ করতে পারে। এখানে যুক্তরাষ্ট্র একটা কারগারও নির্মাণ করেছিল, আর আছে প্রশস্ত কফি হাউজ। এখান থেকে কাবুলের দূরত্ব মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার।
এই বিমানবন্দর যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ব্যবহার করেছিল আফগানিস্থানকে দখলে রাখার জন্য, এখন প্রয়োজন চীনকে কব্জা করার জন্য। ট্রাম্প বলেছেন, এই বিমানবন্দর থেকে সহজেই চীনের পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত করা যাবে। শুধু চীন কেনো, ইরান ও রাশিয়াকেও সহজে টার্গেট করা যাবে।
পর্যবেক্ষকগণ বেশ মজার তথ্য দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, বাগমার বিমান ঘাঁটিতে আমেরিকান সৈন্যরা প্রায় সব ধরনের অপরাধে যুক্ত ছিল। খুন, নারী ধর্ষণ ছাড়াও তারা মাদক পাচারের সাথেও জড়িত ছিল। তখন পপি বা গাঁজা ও আফিমের স্বর্গ রাজ্য ছিল আফগানিস্থান। এখন তালেবান সরকার মাদক উৎপাদন ও পাচার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে, ট্রাম্প সেই মাদক ব্যবসাকেই পুনরায় ফিরিয়ে আনতে চায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র যেসকল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে সেই সব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের চোরাকারবারিরাই সক্রিয় থাকে বা আছে।
যাইহোক, আফগানিস্তান এখনো ট্রাম্পের আহবানে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। তারা একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে। তাঁরা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়গুলো আগে সমাধান হতে হবে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই বাগমার বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে শুধু চীন নয় তার সাথে ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সংঘাত অনিবার্য হবে এবং এটা হবে আফগানিস্তানের ভূমিতে। ”চীন ইতিমধ্যেই তার হুশিয়ারী দিয়ে রেখেছে।”
অন্য দিকে, সম্প্রতি সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক চুক্তি হয়েছে তার লক্ষ্যও এই ভূখন্ডে পারমাণবিক অস্ত্রের পরিসরকে বৃদ্ধি করা। এই চুক্তি যদিও এই দুই দেশের বহু পুরনো সামরিক বন্ধনকে একটা যৌক্তিক পরিণতি দিয়েছে তবুও এটার লক্ষ্য যত না সৌদি আরবের প্রতিরক্ষাকে সমৃদ্ধ করা তারচেয়েও বেশি হলো, পাকিস্থান ভারতকে মোকাবিলা করার শক্তিকে বাড়িয়ে নিল।
এশিয়ার নিরাপত্তা আগামী দিনে কেমন হবে তার কিছুটা ইঙ্গিত বাগমার বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ এবং সৌদি ও পাকিস্তানের সামরিক চুক্তিতে নিহিত আছে বলে মনে হয়।
একটা যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতি শেষ বিচারে এই এলাকার শান্তি ও উন্নয়নকে ব্যাহত করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে সব দেশের ভবিষ্যত। দেখা যাক, আফগানিস্তান ও চীন যুক্তরাষ্ট্রকে কীভাবে মোকাবিলা করে।



