“ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র”
শুক্রবার দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। কারাকাসের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার সীমান্তে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি জোরদার করার ধারাবাহিকতায় এ সিদ্ধান্ত এল। আল জাজিরা লিখেছে, নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এল এমন এক সময়ে, যখন ভেনেজুয়েলার উপকূলে নৌযানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী।
এসব হামলায় ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ভেনেজুয়েলার বন্দরগুলোতে যাতায়াতকারী সব জাহাজের ওপর নৌ অবরোধ আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছেন, “মাদুরো ও তার অপরাধী সহযোগীরা আমাদের অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।” তিনি বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন মাদুরোর অবৈধ একনায়কতন্ত্র টিকিয়ে রাখার সঙ্গে জড়িত নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাবে।”
আল-জাজিরা জানিয়েছে, নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন সাতজন ব্যক্তি। তাদের মধ্যে রয়েছেন, মাদুরোর ভাগ্নে মালপিকা ফ্লোরেস এবং পানামার ব্যবসায়ী রামোন কারেতেরোর আত্মীয় বা সহযোগী।এর আগে ১১ ডিসেম্বর ঘোষিত এক দফা নিষেধাজ্ঞায় তাদের পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার পতাকাবাহী ছয়টি তেল ট্যাংকার ও কয়েকটি শিপিং কোম্পানিকে নিশানা করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ভাষ্য অনুযায়ী, মাদুরোর স্ত্রীর তিন ভাগ্নের একজন মালপিকা ফ্লোরেস, যাদের যুক্তরাষ্ট্র ‘নার্কো-নেফিউজ’ আখ্যা দিয়েছে। ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পেত্রোলেওস দে ভেনেজুয়েলা এসএ-তে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
তবে ফ্লোরেসের এই ভূমিকা কীভাবে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর তথাকথিত ‘নার্কো রাষ্ট্র’ টিকিয়ে রাখতে সহায়ক হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি মার্কিন কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছে, মাদক পাচার দমনের লক্ষ্যেই তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওই অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্ব প্রশান্ত ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে নৌযানে হামলাগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শামিল।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, মাদক পাচারের কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও বক্তব্য ক্রমেই ভেনেজুয়েলার তেলসম্পদের দিকেই কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল মজুদ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব সম্পদ অনেকটাই অব্যবহৃত রয়েছে। গত সপ্তাহে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপদেষ্টা ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার সামাজিক মাধ্যমে দাবি করেন, ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রেরই সম্পদ। তিনি লেখেন, “ভেনেজুয়েলার তেল শিল্প গড়ে উঠেছে আমেরিকান শ্রম ও মেধায়। সেটি দখল করে নেওয়া ছিল আমেরিকান সম্পদের সবচেয়ে বড় চুরি।”
ভেনেজুয়েলার তেল খাতকে লক্ষ্য করে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো দেশটির অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর করেছে এবং মাদুরোর বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়িয়েছে। এর জবাবে প্রেসিডেন্ট মাদুরো ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘শাসন পরিবর্তনের’ লক্ষ্যে ‘স্থায়ী যুদ্ধ’ তৈরি করার অভিযোগ করেছেন এবং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার বিশাল তেলসম্পদ দখল করতে চায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভেনেজুয়েলার ওপর লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে, যা গত সপ্তাহে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রথম আরোপ করা এসব ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সম্পদ জব্দ।
সুত্র-আল-জাজিরা


