একই দিনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করা ‘চ্যালেঞ্জিং’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন।
তিনি এও বলেছেন, গণভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশন অঙ্গীকারাবদ্ধ।
শনিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস’ আয়োজিত কর্মশালার সমাপনী পর্বে বক্তব্য রাখছিলেন সিইসি। নাসির উদ্দিন বলেছেন, “আমাদের একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করতে হবে, একই ‘রিসোর্স’ ব্যবহার করে। এটা আগে ছিল না। আগের কোন কমিশনকে এই চ্যালেঞ্জ দিতে হয়নি। এটার জন্য অনেকগুলো অতিরিক্ত কাজ করতে হবে কিন্তু গণভোটটা আমদের আয়োজন করতে হবে৷ আমরা একইদিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করব, কারণ আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।”
এদিন ইসি সচিব বলেছেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে একসঙ্গে আয়োজনে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন-ইসিকে চিঠি দিয়েছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধের মধ্যে গেল ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন। তার এক সপ্তাহ পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইসিকে চিঠি দিল। নির্বাচন কমিশন এখনও গণভোট আয়োজেন ‘আইনি ক্ষমতা’ পায়নি তুলে ধরে সিইসি বলেন, “আইনি ক্ষমতা পেলেই আমরা গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করবো।”
তিনি বলেন, “সেদিন একটা অনুষ্ঠানে এই প্রশ্নটা আমি আইন উপদেষ্টাকে করেছিলাম৷ কয়েকদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে গণভোট আয়োজনের ক্ষমতা দিয়ে আইন পাস হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।” অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে নাসির উদ্দিন বলেন, “আমাদের এজেন্ডা এবং একমাত্র এজেন্ডা জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়া; ‘নাথিং মোর, নাথিং লেস’।” আসন্ন নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইসি চালাচ্ছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “নির্বাচন আসন্ন হলেই আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাব।” ৪২ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজকে ‘দানবীয় অভিশাপ’ বলেও মন্তব্য করেন সিইসি।
পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট চালু নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সিইসি বলেন, “মানুষের প্রত্যাশা ব্যবস্থাপনা করা খুব বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষের অনেক অনেক প্রত্যাশা ব্যবস্থাপনা করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, অনেক অনেক প্রত্যাশা। প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনেকের বৈধ পাসপোর্ট না থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচন উপলক্ষে কমিশনের প্রস্তুতি সম্পন্ন এবং যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কমিশনের প্রস্তুত থাকার বলেছেন সিইসি।
তিনি বলেন, “এবারের নির্বাচনে এআই ও সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার রোধ কঠিন হয়ে যাবে। তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি যদি সমঝোতা ও সহযোগিতামূলক থাকতো তাহলে কমিশনের কাজ আরও সহজ হতো।” বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে দিনব্যাপী কর্মশালাটির আয়োজন করে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস। সকালে কর্মশালার সূচনা পর্বে অংশ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে তুলে ধরে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, “এআইয়ের অপব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মিসইনফরমেশন আর ডিসইনফরমেশন’ মোকাবিলা বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে দেখছে ইসি। তবে সবার সহযোগিতায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।”



