রবিবার,৯,নভেম্বর,২০২৫
25 C
Dhaka
রবিবার, নভেম্বর ৯, ২০২৫
প্রচ্ছদসম্পাদকীয়মুক্তমতবাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বিস্তৃতি কি হারানো সম্পর্ক পুনরুদ্ধার নাকি নতুন চোরাবালিতে পা:...

বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বিস্তৃতি কি হারানো সম্পর্ক পুনরুদ্ধার নাকি নতুন চোরাবালিতে পা: এই সম্পর্ক বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা!

”পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতির বহুমুখী জোয়ার: যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রেয়ার আর্থ ও বন্দর চুক্তি : বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বিস্মৃতি কি হারানো সম্পর্ক পুনরুদ্ধার নাকি নতুন চোরাবালিতে পা: এই সম্পর্ক বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা”

আল জাজিরার বিশ্লেষক মনে করেন সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতিতে সুবাতাস বইছে। আফগানিস্তান থেকে কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রত্যাহারের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতিতে ভাটার টান শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের প্রত্যাবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ভূমি ব্যবহারের জন্য যে আর্থিক ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিত তা বন্ধ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র একই সময়ে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগ দেয় এশিয়া প্যসিফিকে চীনকে ঠেকানোর জন্য। কিন্তু ট্রাম্প যখন আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান বন্দরের দিকে নজর দিল তখন আবার পাকিস্তানের গুরুত্ব বেড়ে যায়।
ট্রাম্প একদিকে শুল্কের চাপে ফেলে পাকিস্তানকে একটা বিশেষ চুক্তিতে বাধ্য করে, পাকিস্তান নিঃশব্দে তাদের রেয়ার আর্থ বা ম্যাগনেট উত্তোলনের অধিকার যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দেয়। অন্যদিকে,  পাকিস্তান আরব সাগরে ভারতের সীমান ঘেঁষে নতুন একটা বন্দর নির্মাণ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।  বহু বছরের যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু পাকিস্তান এভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভূমিকা পালনের সুযোগ পায়। কায়রো সম্মেলনে পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী ভূমিকা পালনের সুযোগ পায়। এর আগে পাকিস্তান সৌদি আরবের সাথে একটা কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি করে।  তাই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতির মূল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা এবং ভারতকে ঘিরে ফেলা- দুটোতেই বেশ সফল হয়।  এই সফলতাকে আল জাজিরা জোয়ার বলছে। আল জাজিরা আরও বলছে এটা পররাষ্ট্র নীতিতে সফলতা আনলেও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে। আল জাজিরা জানাচ্ছে পাকিস্তানে রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট পাওয়া যাবে বেলুচিস্তানে। বেলুচিস্তানে চীনের বিনিয়োগ আছে।  বেলুচরা পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও চীনের বিনিয়োগের উপর হামলা চালাচ্ছে।  পরিস্থিতি বেশ জটিল।  অন্য দিকে পাকিস্তান আফগানিস্তান সীমান্ত এখন যুদ্ধে জর্জরিত।
এই ধরনের একটা আর্ন্তজাতিকভাবে অনূকূল কিন্তু অভ্যন্তীরণভাবে সংকটাবস্থায় পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে বেশ এগিয়ে গেছে।  বাংলাদেশ ছিল একসময় পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল। ১৯৭১ সালে এই পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজিত হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এটাকে পাকিস্তান ভারতের বিজয় হিসেবেও দেখে।  তারপর বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক নানা টানাপোড়েনের মাধ্যমে এগিয়ে – পিছিয়ে যাচ্ছিল।  আজ একযুগেরও বেশি সময় পর বাংলাদেশ পাকিস্তান যৌথ অর্থনেতিক কমিশনের বৈঠক হয়। একই সাথে পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর কমান্ডারও ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেছেন। পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে বহুমুখী সম্পর্কের উপর জোর দিচ্ছে।
বাংলাদেশকে তারা করাচি বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশও পাকিস্তানের সাথে রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী।  দুই দেশের মধ্যে এই কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামরিক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এখানেও জটিলতা আছে।  প্রথমত, পাকিস্তানের অর্থনীতি বেশ নাজুক।  আইএমএফের ঋণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।  সামাজিক বৈষম্য যেমন আছে তেমনি ভারত ও আফগান সীমান্তে যুদ্ধ চলছে।  এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকলেও অর্থনৈতিক গুরুত্ব এখনো তেমন নেই। আর  বাংলাদেশের অর্থনীতিও পাকিস্তানমুখী হতে সময় নিবে।  অর্থনীতি বেশ জটিল।  এখানে লাভালাভের প্রশ্ন আছে।  তাই এই খাতের পর্যালোচনা করার সময় এখনো আসেনি।
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন পাকিস্তানমুখী হলেও সামনে নির্বাচনের ফলাফলের উপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে। বাংলাদেশকেও নানা বিষয় পর্যালোচনা করতে হবে কারণ তার অর্থনীতিও বেশ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।  বাংলাদেশকে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
শেষ কথা অবশ্য বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী।  তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্যে নিহিত আছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতির চোরাবালির ফাঁদ।
লেখক- শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক

সর্বশেষ