রবিবার,৯,নভেম্বর,২০২৫
25 C
Dhaka
রবিবার, নভেম্বর ৯, ২০২৫
প্রচ্ছদসম্পাদকীয়মুক্তমতবিশ্ববাজারে খাদ্য পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে বাড়ে, নীতির গলদ নাকি ব্যবস্থাপনার দূর্নীতি!

বিশ্ববাজারে খাদ্য পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে বাড়ে, নীতির গলদ নাকি ব্যবস্থাপনার দূর্নীতি!

বিশ্ববাজারে খাদ্য পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে বাড়ে: আলু আর আটার বাজারের উঠানামা : কেরালায় অতি দারিদ্র কমছে : বাংলাদেশে দারিদ্র্য বাড়ছে : নীতির গলদ নাকি ব্যবস্থাপনার দূর্নীতি!
সংবাদপত্রে চোখ বুলালে আজকাল সবাই দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পান। কিন্তু তাতে উৎপাদক ও ভোক্তার কোনো লাভ হচ্ছে না ; কারণ প্রশাসন নির্বিকার। বাজারে আলু কিনলাম ২৫ টাকা কেজি। অথচ,  কোল্ড স্টোরেজে দাম পড়ে গিয়ে  প্রতি কেজি ৮-৯ টাকায় ঠেকেছে। কৃষক পাচ্ছে ৫২-৬৮ পয়সা। কৃষকের উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৮ টাকা।  সে যদি ২৫ টাকা বিক্রি করতে পারতো তবে তার কিছুটা লাভ হতো। মাঝে কৃষকের মাথায় হাত। সংবাদপত্র জানাচ্ছে, বাংলাদেশে আলুর চাহিদা এককোটি টনের কাছাকাছি।  উৎপাদন হয়েছে ১.১৫ কোটি টন। বাজার অর্থনীতির হাতে কৃষক নাকাল। এই নাকাল হতেন না যদি সরকার আলু কিনে নিত। সরকার কেননি। অথচ,  টিসিবির ট্রাকের লাইনে মধ্যবিত্তও আছেন। সরকার কিনলে গরীব মধ্যবিত্ত সকলেই দুটি আলু কিনতে পারতো। পৃথিবীর যেকোনো দেশে কৃষক হয় উৎপাদন উপকরণে ভর্তুকী পায় বা তাকে মূল্য সহায়তা দেওয়া হয়।  বাংলাদেশে শুধু কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কেনা হয়। তাও দূর্নীতিতে ভরা। এবার সে কাজটিও হয়নি। আলুর  উৎপাদক কৃষকের মাথায় হাত। লাভ শুধু মধ্যস্বত্তভোগীর। আড়তদার ও কোল্ড স্টোরেজের মালিকের যোগসাজশ নাকি সরকারি অবহেলা – কাকে দায়ী করবেন?  নাকি নীতিমালা?
বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে।  বাংলাদেশের বাজারে আটার দাম বেড়েছে। ট্রাম্প সাহেবের শুল্ক বৃদ্ধি থামাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি দামে বাংলাদেশ গম কিনে রেডিমেড কাপড়ের রপ্তানি বাজার ঠিক রাখতে আটার দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে।  বিভিন্ন পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে,  কলকারখানা বন্ধ হচ্ছে,  নতুন বিনিয়োগ ও নিয়োগ নেই। মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯-১০ এর ঘরে আটকে আছে।  মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিক ও চাকরিজীবীদের প্রকৃত মজুরি ও বেতন কমে যাচ্ছে প্রতিবছর। বিশ্বব্যাংক বলছে,  দেশের প্রবৃদ্ধি কমবে, দারিদ্র্যের হার ও দূর্ভিক্ষ বাড়বে।
দেশের এই সব খবরের সাথে ভিন্ন ধরনের খবরও চোখে পড়ে।  কেরালার বামপন্থী মূখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন তাঁর রাজ্যে চরম বা অতি দারিদ্রের হার কমে গেছে। তাঁরা কিছু সহজ নীতি বাস্তবায়ন করেছেন।  ধারাবাহিক ভাবে তারা অতি দরিদ্রের কর্মসংস্থান, আবাসন ও সামাজিক সুরক্ষা দিয়েছেন।  দূর্নীতিমুক্তভাবে অতি দরিদ্ররা এখন আয়ের একটা উপায়ে তার চরম দারিদ্র্য কাটিয়ে উঠেছে।  একটা গনতান্ত্রিক সরকার কাঠামোতেও সরকার নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস করতে পারে।  আর আমাদের দেশের দূর্ভাগ্য, কোনো লোক বা কৃষকরা উৎপাদন করেও সরকারি নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে বানরের তৈলাক্ত বাঁশে  উঠানামার মতো ক্রমাগত চরম দারিদ্র্যের দিকে নিপতিত হচ্ছে।  অথচ,  বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন নীতিমালা থাকলেও দারিদ্র্য ব্যবসাই যেন ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
এই অবস্থা কতদিন চলবে – কে জানে!/?
লেখক- শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক

সর্বশেষ