বৃহস্পতিবার,২৫,ডিসেম্বর,২০২৫
14 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫
প্রচ্ছদঅনুসন্ধিৎসাপ্রতিবেশমৌলভীবাজারে ব্যাটারি চালিত রিকশা উচ্ছেদ বন্ধসহ ৭ দফা দাবিতে রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের...

মৌলভীবাজারে ব্যাটারি চালিত রিকশা উচ্ছেদ বন্ধসহ ৭ দফা দাবিতে রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের স্মারকলিপি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ এবং দ্রব্যমূল্য কমানো, বর্তমান বাজারদরের সমন্বয় করে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ, রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং চালুসহ ৭ দফা দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন।

২৭ আগস্ট বুধবার দুপুরে শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয় থেকে মিছিল সহকারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনয়িনের সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া, সহ-সভাপতি গিয়াসউদ্দিন, জসিমউদ্দিন সেবক, মিজানুর রহমান নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল জেলা প্রশাসকের মোঃ ইসরাইল হোসনের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে রিকশা শ্রমিকদের সমস্যা সংকটের কথা তুলে তা সমাধানের দাবি জানান।

শ্রমিক ইউনিয়নের স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিকরা প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত প্রখর রোদ ও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে অমানুষিক পরিশ্রম করে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে দুঃখ কষ্টের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রাম্য জোতদার মহাজনের শোষণে জমি-জমা হারিয়ে জীবিকার তাগিদে শহরে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে যাত্রী সাধারণের সেবা প্রদানের মাধ্যমে জীবন ও জীবিকা রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। তার উপর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বাজারে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। এরকম সময়ে শহরে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ তৎপরতা শ্রমিকদের আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। অথচ গত ৪ এপ্রিল/২০২২ উচ্চ আদালতের এক রায়ে মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত তিন চাকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলেও আঞ্চলিক সড়কে ও শহরের মধ্যে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচলে কোন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। এরকম সময়ে শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা না করে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ চরম অমানবিক। অথচ ব্যাটারি চালিত এসকল রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক বিক্রিতে কোন বাঁধা নেই, এমন কি এখনও শোরূম খোলে এসব পরিবহণ বিক্রি হচ্ছে। জীবন ও জীবিকা রক্ষার্থে শহরের নিম্ন আয়ের লোকজন এবং রিকশা চালকরা ব্যাটারি ও মোটর চালিত রিকশা কিনে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সকল রিকশার অধিকাংশের মালিকই হচ্ছেন রিকশা চালক নিজে, যারা এনজিও ও মহাজনের নিকট হতে উচ্চ সুদে ঋণ করে অথবা নিজের শেষ সহায়-সম্বলটুকু বিক্রি করে ব্যাটারি চালিত রিকশা কিনে জীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন। মানুষ হয়ে মানুষকে টেনে নেওয়ার বদলে ব্যাটারি ও মোটর চালিত এই রিকশায় শ্রমিকরা যেমন তুলনামূলক সহজে কম পরিশ্রমে যাত্রী পরিবহণ করতে পারছেন তেমনি অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রী সাধারণের কাছে স্বল্প খরচে আরামদায়ক পরিবহণ হিসেবে এই সকল রিকশা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যার কারণে বর্তমানে দেশের অনেক জেলায় এমন কি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলাতেও ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান অবাধে চলছে, এমনকি অনেক উপজেলাতে পা-চালিত রিকশা প্রায় উঠেই গেছে। অথচ একই সময়ে মৌলভীবাজার শহর হতে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদের তৎপরতা চলছে। নিরিহ, দরিদ্র, অবহেলিত রিকশা শ্রমিকদের রুটি রোজীকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে রিকশা উচ্ছেদের তৎপরতা চললেও ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান বিক্রিতে কোন রকম বাঁধা-নিষেধ নেই। নানা অজুহাতে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ শত শত রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে ফেলবে। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসকের ভূমিকা কামনা করা হয়।

উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী আঞ্চলিক সড়কে ও শহরের ভিতরে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচলে বাঁধা দেওয়া যাবে না। শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করে অবিলম্বে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। বর্তমান বাজারদরের সাথে তাল মিলিয়ে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ করতে হবে। যানজট নিরসনে যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে হবে। যাত্রী ও শ্রমিকদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত রিকশা স্ট্যান্ড স্থাপন করতে হবে। রিকশা শ্রমিকদের উপর সকল অন্যায় জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। রিকশা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। শাহমোস্তফা সড়ক ও শ্রীমঙ্গল সড়কের সংযোগস্থলে ট্রাফিক গোল চত্ত্বর নির্মাণ করতে হবে।

সর্বশেষ