নেপালে মাত্র দুইদিনের আন্দোলনেই ঘটে গেছে সরকার পতনের মতো বিরাট এক ঘটনা। তীব্র চাপের মুখে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। এর আগেই পদত্যাগের সুর উঠেছিল তার মন্ত্রিসভায়। একে একে সরে দাঁড়াচ্ছিলেন প্রভাবশালী নেতারা। বিক্ষোভের আগুনে ছড়িয়ে পড়ছিল গোটা দেশে। শেষ পর্যন্ত জেন জি বিক্ষোভকারীদের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন নেপালি প্রধানমন্ত্রী।
৪ সেপ্টেম্বর – সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ
ফেসবুক-এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। কারণ হিসেবে বলা হয় স্থানীয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন না থাকা এবং মিথ্যা তথ্য ও হিংসাত্মক কনটেন্টের উদ্বেগের কথা।
৮ সেপ্টেম্বর – জেন জি বিক্ষোভ শুরু
হাজার হাজার বিক্ষোভকারী, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। কাঠমান্ডু, পোখরা, চিতওয়ানসহ দেশের অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টে ঢোকার চেষ্টার করলে পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং তাজা গুলি ব্যবহার করে। এতে অন্তত ১৯ জন নিহত হন, আহত হন প্রায় ৫০০ জন।
৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা – স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ
বিক্ষোভ দমন চলাকালীন হতাহতের জন্য নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে পদত্যাগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক।
৮ সেপ্টেম্বর রাত – সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার
জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধাদেশ প্রত্যাহার করে সরকার। যোগাযোগমন্ত্রী পৃথ্বি সুব্বা গুরুং নিশ্চিত করেন, ‘শাটডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে … এখন তারা কাজ করছে।’ এছাড়া ১৫ দিনের তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়।
৯ সেপ্টেম্বর – আরও তীব্র বিক্ষোভ
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরও আন্দোলন থামেনি। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট এবং কয়েকজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন; রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন করা হয় এবং ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
প্রধানমন্ত্রী ওলি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন এবং সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তবে কয়েক ঘণ্টা পরেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশত্যাগ ঠেকাতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের উড্ডয়ন ও অবতরণ বাতিল করা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিশেষ অনুমতি ছাড়া কোনো আন্তর্জাতিক বা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ছাড়তে দেওয়া হবে না। ফলে আকাশপথে ওলি দেশ ছাড়ার সুযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রতিবেশী ভারতও সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের পানিটাঙ্কি সীমান্তে বাড়তি পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বসানো হয়েছে অতিরিক্ত তল্লাশি চৌকি। সীমান্ত পারাপার, যানবাহন ও যাত্রীদের চলাচল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় এখন কার্যত উচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে, যাতে কোনোভাবেই ওলি গোপনে প্রবেশ করতে না পারেন।
নেপালে জেন জি বিক্ষোভকারীদের হামলায় আহত রয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নেপালি কংগ্রেস সভাপতি শের বাহাদুর দেউবা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরজু রানা দেউবা। রাস্তায় খেলেন গণধোলাই অর্থমন্ত্রী। মঙ্গলবার (৯ সেপ্পেটম্বর) বুধনিলকণ্ঠে তাদের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা।সোমবার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে তুমুল সংঘর্ষে ১৯ জন নিহত এবং কয়েকশ মানুষ আহত হন। মঙ্গলবার মারা যান আরও দুজন।
সূত্র: কাঠমান্ডু পোস্ট, হিমালয়ান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে



