আজ বাংগালির জাতীয় ও সাংস্কৃতিক মননের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিন বাংলা নববর্ষ-পহেলা বৈশাখ। আমরা এই দিনে সমবেত হই, আনন্দিত হই, উল্লসিত হই, সবাই সবাইকে আপন করে নেই। কিন্তু এবার ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করতে হবে অনেককে যারা এই নববর্ষে বা ‘পহেলা বৈশাখে’র সামনের সারির কুশিলব। আমাদের হৃদয়ে ক্ষরণ হচ্ছে সন্দেহ নেই, তবুও ‘পহেলা বৈশাখ’ কে আমাদের সামনে রাখতেই হবে সকল জরা, ব্যাধি আর অপসংস্কৃতির সকল আক্রমনকে রুখে দেবার শপথ নিয়ে। এবার পহেলা বৈশাখ হোক তেমনি এক দুর্বিনিত প্রতিজ্ঞা। তাই এবারের পহেলা বৈশাখে প্রকাশ্যে শোভাযাত্রা বন্ধ হোক, আত্মিক বন্ধন হোক আরও দৃঢ়।
সন্দেহ নাই মানবজাতি আজ একটা ভয়াবহ সংকট অতিক্রম করছে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ অতিমারি বিশ্বসভ্যতাকেই এক চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্ব-অর্থনীতি পর্যুদস্ত। সবচাইতে সংকটে শ্রমজীবি, কর্মজীবি মানুষ। যাদেরকে দিন এনে দিন খেতে হয়। একদিকে কোভিডের আক্রমণ অন্য দিকে জীবিকার সংকট। সরকার এবং রাষ্ট্র পরিকল্পিতভাবে এই ধরণের মানুষের জীবন জীবিকার বিষয়ে উদ্যোগ না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘লকডাঊন’ বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় নির্দেশ ভুল বার্তা নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, কোভিডকে প্রতিরোধের জন্য গৃহীত বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এক ধরণের প্রচারণা নিরন্তর চালানো হচ্ছে , যা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রনের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। তাই, এই মুহূর্তে লকডাউনের মধ্যে যারা অর্থনৈতিকভাবে সংকটে পড়ছে তাঁদের সহায়তা করার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ সরকারকে ঘোষণা ও কার্যকর করতে হবে। অন্যদিকে শুধুুমাত্র একটি ভ্যকসিন এর উপর ভরসা করা যাচ্ছে না এটা বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত। ফলে যত দ্রুত সম্ভব আরও ভ্যাকসিন সংগ্রহের এখনি সময়। সেখানে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বেড়াজাল অতিক্রারম করেই এগুতে হবে। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারুর সঙ্গে শ্ত্রুতা নয়। শুধু সংকীর্ণ জাতীয়িতাবাদ নয়, বিশ্বসংকটে বিশ্বমানবতার পাশে দাঁড়ানোই হলো এই মুহূর্তের এই সময়ের দাবী। তাই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংগের ঘোষিত নীতি অনুসারেই আমাদের এগুতে হবে। রাশিয়া বা চীনের ভ্যাকসিনের ব্যাপারে ইউরোপসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ইতিবাচক উদ্যোগ নিচ্ছে। এসকল ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হচ্ছে। দেশের মানুষের দীর্ঘকাল ভাইরাসের হাত থেকে সুরক্ষা দেবার জন্য স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি ‘ভ্যাকসিনেশন’ অপরিহার্য। তাই, এই বিষয়টিকে উপেক্ষা করার উপায় নাই।