বৃহস্পতিবার,২৫,এপ্রিল,২০২৪
38 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়মুক্তমতঈদ উদযাপনে থাকতে হবে সতর্ক

ঈদ উদযাপনে থাকতে হবে সতর্ক

ঈদ আমাদের সংস্কৃতিতে মহা আনন্দের পার্বণ। ঈদ উৎসব-আদর,স্নেহ,ভালবাসা ও মিলনের।গেল বছরের এবং এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।গোটা পৃথিবীতে চলছে করোনা অতিমারি।করোনার অতিমারির দু:সময়ে ঈদ উদযাপনে সবারই সতর্ক থাকা জরুরি।ইসলাম ধর্মের নির্দেশনা, অতিমারি পরিস্থিতিকে এড়িয়ে চলা।সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ।প্রত্যেক মানুষের জীবন সবার আগে।জীবন বাঁচাতে, পরিবারের সকলের সুস্থতা এবং সমাজের সুরক্ষার কথা আমাদের সকলকেই ভাবতে হবে।করোনা মহামারির ভয়াবহতা আমরা সবাই জানি।এ নিয়ে হেলাফেলা করা ঠিক না।কয়েকদিন আগেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি বেসামাল ছিল।মানুষের অবস্থা ছিল হাঁসফাঁস।হাসপাতাল ঘুরেও বেড পাওয়া যায়নি।অক্সিজেন সংকটে মানুষ হয়েছিলেন দিশেহারা।ভারতের ধরণ ছড়িয়ে পরলে আমাদের পরিণতি কি হবে- তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ’রা উদ্বিগ্ন।
ভারতের অবস্থা নাজুক। স্বাস্থ্যবিধি বহির্ভূত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশের কারণে ভারতের ওই নাজুক পরিস্থিতি।এ অভিমত “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার”। সেখানে লাশ সৎকারে জায়গা মিলছেনা।করোনায় মৃত মানুষের লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে নদীতে। গঙ্গা নদী পাড়ে বালু চাপা দেয়া সারিসারি গণকবরের মর্মান্তিক খবর প্রচার হচ্ছে ভারতীয় মিডিয়ায়।বেসামাল, ভয়াবহ পরিস্থিতি।এ পরিস্থিতিকে অন্য দৃষ্টিতে দেখলে ভূল হবে।
সব বদলানো গেলেও প্রতিবেশি বদল হয়না।প্রতিবেশির বাড়িতে আগুন লাগলে আমরা নিরাপদ থাকবো এ ভাবনা সঠিক না।ইতোমধ্যে বাংলাদেশে করোনার ভারতীয় ধরণ শনাক্ত হয়েছে।এরকম উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ঈদ উদযাপনে ঘরমুখো লাখো মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে গ্রামে ফিরেছেন,স্বজনদের কাছে।কোন আইনেই ঠেকানো যায়নি ঘরমুখী মানুষের জনস্রোত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানা গেছে, ৬৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে এসেছেন।এদের অনেকের শরীরে ভারতীয় ধরণের সংক্রামক ভাইরাস থাকতে পারে- এমন আশংকা বিশেজ্ঞদের। সংক্রামিত মানুষ আমাদের শত্রু না,ওরা আমাদের পাড়াপড়শি।শত্রু করোনাভাইরাস।যা দ্রুত গ্রামের অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ভারতীয় টাইপের করোনা গ্রামে ছড়লে,সুরক্ষিত গ্রাম করোনার থাবায় মূহুর্তে হতে পারে লণ্ডভণ্ড!তাই,গাজিপুর,ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ,চট্রগ্রাম অথবা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে যারা গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপনে এসেছেন তাদের দিকে সদয় দৃষ্টি ফেরাতে হবে।তারা বাড়িতেই থাকবেন।অবাধে সবখানে তারা যাতে ঘোরাফেরা না করে তা তাদের বোঝাতে হবে।শুধু সরকারের একার ঘাড়ে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি ছেড়ে দিলে চলবেনা।সরকারের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সমাজ তার দায়িত্ব এড়াতে পারেনা।নিজের,পরিবারের ও গ্রাম সমাজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে আমাদের সকলকেই। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি এবং শিক্ষিত তরুণদের ভূমিকা অগ্রগণ্য।উৎসব উদযাপন করতে গিয়ে যেন আমরা প্রিয়জনকে বিপদ ও ঝুকির মধ্যে না ফেলি তা দেখতে হবে।মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।আমরা এবার ঈদগাহে সবাই মিলে নামাজ আদায় করবো না।করোনার বিস্তার রোধে আমরা আমাদের নিজনিজ গ্রামের মসজিদে কড়াকড়ি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করবো।সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করবো করোনা যাতে দ্রুত পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।নামাজে যাওয়ার সময় নিজের জায়নামাজটি সঙ্গে নেব,বাড়ি থেকে অজু করে মসজিদে যাব।ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি হাত মেলানো থেকে এবার আমরা সবাই বিরত থাকবো।বযস্ক ও নানা রোগে আক্রান্ত স্বজনদের এবার ঈদের নামাজে না নেওয়াই শ্রেয়।আমরা তাঁদের ঘরে বসেই নামাজ আদায়ে উদ্বুদ্ধ করবো।মসজিদে যাওয়া আসার সময় শারীরিক দূরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।মাস্ক পরেই নামাজ আদায় করতে হবে,মাস্ক পরেই করতে হবে ঘোরাফেরা।এবারে ঈদ উদযাপন করবো আমরা ভিন্ন আঙ্গিকে। করোনাকালে এটাই সরকার,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবং ধর্মের নির্দেশনা।আমরা প্রিয়জন,পরিবার,সমাজ ও দেশের সুরক্ষার কথা ভেবে ঈদের অনুভূতি ভাগাভাগি করবো সবাই।    বিদেশে ও দেশের ভেতরের স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ বিনিময় করবো মোবাইল,ফেসবুক,ম্যাসেঞ্জার,টুইটার,ওয়াটসাপসহ নানা অনলাইন মাধ্যমে।আমরা সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবো, তাদের প্রতি সহমর্মিতার হাত করবো প্রসারিত।আমরা ভোগের নয়,ত্যাগের মহিমায় থাকবো উজ্জীবিত।করোনা প্রতিরোধে গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্য সচেতনার বার্তা এবার সকলের কাছে পৌঁছাবো। আসুন,আমরা ঘরে বসেই ঈদের আনন্দ ভোগ করি। মাস্ক- মাস্ক- মাস্ককেই জীবন সাথি হিসেবে বেঁচে নেই,স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। নিজে মানি, সমাজকে মানাই।এই হোক এবারের ঈদ উৎসব উদযাপনের অঙ্গীকার।
ঈদ মোবারক।
লেখকঃ নজরুল ইসলাম হক্কানী, পলিটব্যুরো সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

সর্বশেষ