শনিবার,২৭,এপ্রিল,২০২৪
31 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়স্মরণার্ঘ্যকমরেড হো চি মিন তোমায় লাল সালাম

কমরেড হো চি মিন তোমায় লাল সালাম

১৩১তম জন্মবার্ষিকীতে বিপ্লবী শ্রদ্ধা

নতুন কথা ডেস্ক: নগুয়েন ভ্যান কুং, নগুয়েন তাত থান, ভুয়ং সন নিহি, লিনভ এবং হো চি মিন সবই এক জন মানুষের নাম। ছোট বেলায় যাকে সবাই আদর করে ডাকতেন ‘আঙ্কেল হো’ বলে। নানা ছন্মনামের মানুষটি বিশ্ব জুড়ে পরিচিত হো চি মিন নামে। কমিউনিস্ট শাসিত ‘ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব ভিয়েতনাম’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাম্রাজ্যবাদীদের বুকে লাল তীর নিক্ষেপকারী এই মহান বিপ্লবীর ১৩১তম জন্মবার্ষিকী আজ ১৯ মে। ১৮৯০ সালের ইতিহাসের এ দিনেই হো চি মি জন্ম নিয়েছিলেন ফরাসি আশ্রিত রাজ্য আন্নামের নগেয়ান প্রদেশের হোয়াংট্রু গ্রামে। কিন্ত শৈশব কাটে কিম লিয়েন গ্রামে। বাবা নগুয়েন হুই ওরফে নগুয়েন সিন সাক ছিলেন ক্ষেতমজুর পরিবারের সন্তান। বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হন শিক্ষক। মা হোয়াং আই লোয়ান।
বিশ্ব ইতিহাসে যে কয়জন ব্যক্তি একটি জাতির জন্য স্বাধীনতার দূত হয়ে এসেছিলেন হো চি মিন তাদের মধ্যে অন্যতম। একজন সাধারণ মানুষ কীভাবে একটি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে উঠতে পারেন তারই বড় প্রমাণ হো চি মিন। এই আধুনিক বিশ্বেও তার কীর্তি সবার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ী। তার একটাই উপলব্ধি ছিল, “শিখতে হবে মানুষের কাছ থেকে, জানতে হবে পৃথিবীকে।” তিনি উপলব্ধি করতেন, কেবল সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদই সমস্ত বিশ্বের নিপীড়িত জাতি এবং শ্রমজীবী জনগণকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে পারে। এ কারণে তিনি ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হন মার্কসবাদী-লেনিনবাদী মতাদর্শে। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন নতুন ভিয়েতনামের, এক স্বাধীন রাষ্ট্রের। স্বপ্ন দেখেই সীমাবদ্ধ থাকেন নি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়াই করেছেন ফরাসি ও আমেরিকানদের বিরুদ্ধে। ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীনতা, সাধারণ জনগণের জন্য। পড়াশোনা শেষ করেই জড়িয়ে পড়েন ফরাসি শাসকদের বিরুদ্ধে। তার সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন তার বাবা নগুয়েন সাক। পরিণতি হিসেবে শাসকগোষ্ঠী অন্যান্য আন্দোলনকারীর সঙ্গে তাকেও গ্রেফতার করে। পরে ফরাসি শাসকগোষ্ঠী সিন সাককে আটকে রাখে পৌলো বন্দর কারাদ্ব্বীপে। বাবা গ্রেফতার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে গেল হো চি মিনের ছাত্রজীবন এবং শুরু হলো প্রত্যক্ষ সংগ্রামী জীবন। ভিয়েতনামের ক্ষমতায় আসার আগে হো চি মিন-এর জীবন অস্পষ্ট ছিল। তিনি ৫০ থেকে ২০০ ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।

১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লব, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশ সম্পর্কে লেনিনের বক্তব্য তরুণ হো চি মিন কমিউনিস্ট রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন এবং ১৯২০ সালে কমিউনিস্ট রাজনীতিতে সম্পর্কিত হন। ১৯২০ সালে ৩০ ডিসেম্বর ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টির ১ম কংগ্রেসে কমরেড হো চি মিন ভিয়েতনামের ১ম কমিউনিস্ট হিসাবে কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯২৩ সালে তিনি রাশিয়া যান। সেখানে অনুষ্ঠিত কৃষক আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে তিনি অংশ নেন। উপনিবেশিক দেশগুলিতে কৃষকের মধ্যে কমিউনিস্ট সংগঠন গড়ার কর্মপন্থা নির্ধারনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৫ সালের জুন মাসে চীনে হো চি মিন অন্যান্য বিপ্লবীরা গড়ে তোলেন ‘ভিয়েতনাম রেভুলেশনারী এসোসিয়েশন’। ১৯৪১ সালে কমিউনিস্ট পার্টি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের দ্বারা বিপ্লব ও ক্ষমতা দখলের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৫ সালে অগাস্ট বিপ্লবের মধ্যদিয়ে জাপ-সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করে গঠিত হয় ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র।

এরপর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই সংগ্রাম তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। ’৫৪-এর ৭ মে মাসে-হো চি মিন ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ভিয়েতনামের বিপ্লবী বাহিনী ও জনগণ ফরাসী সাম্রাজ্যবাদ ও তার বাহিনীকে পরাজিত করে উত্তর ভিয়েতনামে বিপ্লব সম্পন্ন ও স্বাধীনতা অর্জন করেন। এখানেই থেমে নেই, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে দক্ষিণ ভিয়েতনাম মুক্ত করার জন্য হো চি মিন এর নেতৃত্ব ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি, ফ্রন্ট, বিপ্লবী বাহিনী জনগণ সশস্ত্র লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দালালদের আতঙ্ক, বিশ্বের মেহনতি মানুষের মহান নেতা ও শিক্ষক। যতদিন বিশ্ব থাকবে, মানুষ থাকবে, শ্রেণী শোষণ, শ্রেণী বৈষম্য, ধনী-গরীব থাকবে ততদিন শ্রেণী দ্বন্দ্ব, শ্রেণী সংগ্রামও চলবে। এই মহান বিপ্লবী প্রকৃতিক অমোঘ সত্য মৃত্যুর ডাকে সাড়া দেন ১৯৬৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি চলে যান ৭৯ বছর বয়সে। কমরেড হো চি মিন আজো দুনিয়ার শোষিত-নিপীড়িত মানুষের কাছে অসামান্য প্রেরণা। ভিয়েতনাম মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত কিংবদন্তি বিপ্লবী নেতা কমরেড হো চি মিন তোমায় বিপ্লবী অভিবাদন।

সর্বশেষ