শুক্রবার,১৯,এপ্রিল,২০২৪
37 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
Homeজাতীয়করোনার ভয়াল থাবায় বাংলাদেশ

করোনার ভয়াল থাবায় বাংলাদেশ

#সংক্রমণে গ্রাম শহর একাকার #রাজধানী বিচ্ছিন্ন সারাদেশ থেকে # ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে বিস্ফোরণের শঙ্কা # ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন

এম এইচ নাহিদ ॥ করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছুটছে রকেট গতিতে। কি শহর, নগর বা গ্রাম-করোনায় একাকার। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে সংক্রমণের তালিকাও। গত এক সপ্তাহে সারাদেশে মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয়েছেন ৬ শতাধিক, আক্রান্ত প্রায় ৩৮ হাজার। গত ২৬ জুলাই ১ দিনেই সারাদেশে ১০৮ জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এদিন শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৬৯ জন। ৬৪ জেলার মধ্যে ৪০টি জেলাই অতি উচ্চঝুঁকিতে। বাকি জেলাগুলোর মধ্যে ১৫টি উচ্চঝুঁকিতে আর মধ্যম ঝুঁকিতে আছে আরো ৮ জেলা। সংক্রমণ ঠেকাতে রাজধানী ঢাকা সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। ঢাকার পার্শ্ববর্তী ৭ জেলাসহ ৮ জেলায় চলছে কঠোর লকডাউন। এছাড়া সারাদেশেই সর্বাত্মক লডকাউন বহাল থাকবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। তারপরও করোনার দানবীয় তাণ্ডব থেকে রক্ষা মিলছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসনের অবহেলা আর মানুষের বেপরোয়া চলাচলে সংক্রমণ কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে। কিন্তু টিকাপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা এখনো কাটে নি। খুব সহসা কাটবে বলে মনেও হয় না। তাই লকডাউন নয়, ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’-এর সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরী পরামশর্ক কমিটি। এই সুপারিশকে যৌক্তিক বলেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। ইতোমধ্যে আগামীকাল ২৮ জুন সোমবার থেকে সীমিত আকারে এবং ১ জুলাই থেকে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এবারের লকডাউন মানাতে মাঠে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও থাকবে। সেনাবাহিনীকেও নামানো হতে পারে। জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকবে। তথ্য অধিদপ্তরের এ তথ্য জানানো হয়েছে। তাছাড়া সামনে শাটডাউনের কর্মসুচীও আসতে পারে।

# হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু # গ্রামে গ্রামে করোনার হানা
# অতি উচ্চঝুঁকিতে ৪০ জেলা # ১৫ জেলা উচ্চঝুঁকিতে
# মধ্যম ঝুঁকিতে আরো ৮ জেলা # মৃত্যু বেশি খুলনায়
# ঢাকায় বাড়ছে সংক্রমণ

জানাগেছে, কেবল সীমান্তবর্তী জেলাসমূহ নয়, পুরো দেশজুড়েই অদৃশ্য শত্রু করোনা হানা দিয়েছে। এখন সর্বত্র চলছে এই মরণঘাতী ভাইরাসের দানবীয় তা-ব। গত ১৮ জুন থেকে ২৫ জুন-এক সপ্তাহে সারাদেশে ৬৩১ জন করোনায় মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৫৬৫ জন। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নামে পরিচিত এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে চলমান সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যেই রাজধানীর পাশ^বর্তী জেলা মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাকে বিছিন্ন ঘোষণা করা হয়। এর ফলে সারাদেশ থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দেশের রাজধানী শহর। ঢাকার সাথে বাস, ট্রেন, লঞ্চ-সব পথেই যোগাযোগ বন্ধ। সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা এবং খুলনা ও নাটোরের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসে নি। বরং দিন দিন তা বাড়ছে। খুলনায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। ঢাকায় বাড়ছে সংক্রমণ। এছাড়া অন্যান্য জেলাতেও করোনার সংক্রমণ বাড়তেই আছে। এখন গ্রামে গ্রামে যেমন সংক্রমণ বাড়ছে, তেমনি ঘরে ঘরে বাড়ছে জ¦র-সর্দি-কাশি। অনেকেই অবহেলা করছে, অনেকেই সামাজিক বয়কটের শিকার হওয়ার ভয়ে চেপে যাচ্ছে। কেউ আবার মৌসুমী জ¦র বলে কাটিয়ে দিচ্ছে। এইসব সংক্রামিত মানুষ নিজের পরিবারে এবং বাইরে গিয়ে অন্যের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ফলে সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ইঙ্গিত। বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রামে গ্রামে এখন করোনার যে পরিস্থিতি-তাতে এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। যেভাবেই হোক করোনার তৃতীয় ঢেউ ঠেকাতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই মানুষকে বিধিনিষেধ মানানো যাচ্ছে না। দেশজুড়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউন এবং ৮ জেলা ও কিছু উপজেলায় কঠোর লকডাউনেও কোনো কাজ হচ্ছে না। পথে পথে কেবল জনজট আর যানজট। আক্রান্তরা ঘুরে বেড়াচ্ছে হাট-বাজার ও শহরের অলিগলিতে।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথমত শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে করোনার টিকা দিতে হবে। কিন্তু দেশজুড়ে চলছে টিকার হাহাকার। শুরুতে অবহেলা থাকলেও এখন টিকায় আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু বর্তমানে টিকার মারাত্মক সংকট। নতুন করে টিকার নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে। আগের টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ১২ লাখ মানুষ এখনো টিকা পান নি। আদৌ তারা দ্বিতীয় ডোজ পাবেন কিনা তা অনিশ্চিত। সীমিত সংখ্যক ফাইজারে টিকা নিয়ে ২১ জুন থেকে রাজধানীর তিনটি কেন্দ্রে টিকাদান শুরু হয়েছে। এছাড়া ঢাকার চারটি কেন্দ্র এবং প্রতিটি জেলায় ১ টি করে কেন্দ্রে টিকাদান শুরু হয়েছে চীনের সিনোফার্মের টিকা নিয়ে। ফলে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার স্বপ্ন এখনো বহুদূর। তাই এই মহুর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই একমাত্র পথ। কিন্তু মানুষের মধ্যে তা দেখা যাচ্ছে না। তাই জাতীয় পরামর্শক কমিটি ১৪ দিনের জন্য দেশকে শাটডাউন করার সুপারিশ করেছে। কমিটি এই সময় জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সবকিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে। একই সাথে শাটডাউন বাস্তবায়নে পাঁচদফা সুপারিশও করেছে। জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশকে যৌক্তিক বলেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, সুপারিশটি বিবেচনায় নেওয়া হবে। সরকারও এ বিষয়ে প্রস্তুত আছে। এরই মধ্যে তথ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আপাতত এক সপ্তাহের জন্য ঘোষণা করা হলেও পরিস্থিতি বুঝে তা বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এসময় জরুরি পরিসেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবে না। জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত যানবাহন ছাড়া রাস্তায় কোনো যানবাহন চলবে না। লকডাউন মানাতে মাঠে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও থাকবে। নামানো হতে পারে সেনাবাহিনীও। এছাড়া জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশকে শাটডাউনও করা হতে পারে! তবে অর্থনীতি বিশ্লেষক ও শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বরের আওয়াজ তা করার আগে মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ করোনা যেমন ভয়ঙ্কর তেমনি মানুষের ক্ষুধার চিন্তাও বড় চিন্তা।

সর্বশেষ