শুক্রবার,২৬,এপ্রিল,২০২৪
30 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Homeসীমানা পেরিয়েকৃষক আন্দোলনের নয়া ইতিহাস

কৃষক আন্দোলনের নয়া ইতিহাস

ভারতীয় কৃষক ঘরে ফিরলেন বীরের বেশে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ আন্দোলনের নয়া ইতিহাস গড়লেন ভারতের কৃষকরা। ৩৭৮ দিনের মরণপণ লড়াইয়ে বিজয় নিয়েই ৩৮০ দিনের মাথায় তারা ঘরে ফিরলেন বিজয়ী বীরের বেশে। ভারতের কেন্দ্রীয় মোদী সরকার কৃষকদের সকল দাবি মেনে নিয়েছেন। তবে মেনে নেওয়া বললে ভুল হবে, মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তিন কৃষি আইন বাতিল না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী কেবল গোঁ ধরে বসেই ছিলেন না, কৃষকদের আন্দোলন দমাতে চেষ্টাটাও কম করেন নি। কিন্তু লাঠি, গুলি, টিয়ারগ্যাস, হামলা-মামলা, খুন-জখম এবং শাসকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ ও গু-াবাহিনীর নির্মম অত্যাচার সহ্য করে কৃষকরা দিল্লী সীমান্তে মাটি কামড়ে বসেছিলেন। ঝড়-বৃষ্টি, রোদ-ঠাণ্ডা কোনোকিছুতেই তারা লড়াই ছাড়েন নি। দিন যত গড়িয়েছে, আন্দোলনে কৃষক ততো বেশি সংগঠিত হয়েছে। এমন আন্দোলনের কারণেই মোদী সরকার মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছেন। হেরেছেন মোদী, বিজয় হয়েছে কৃষকের।
আন্দোলন সমাপ্ত করে ফুল, বাজির বিজয় মিছিলে ঘরে ফিরলেন কৃষকরা। তবে কড়া নজরও থাকবে কেন্দ্রের দিকে-জানিয়েছেন কৃষক নেতারা। তারা বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্র হলেই আবার তারা লড়াইয়ে ফিরবেন। ১২ ডিসেম্বর সকাল থেকে দিল্লি-কারনাল-আম্বালা, দিল্লি-হিসার মহাসড়কে কেবল সারি সারি ট্রাক আর ট্রাক। চলেছে অবিরাম ফুল বৃষ্টি, গান আর বাধভাঙা নাচ। হাতে হাতে বিলি হয়েছে হালুয়া, লাড্ডু বরফি। বেজেছে নাকাড়া, ঢোল। অনেকের কাঁধে লাল ঝা-া। পথে পথে মানুষের প্রাণঢালা অভিনন্দন। এ যেন অন্যরকম আনন্দ-উচ্ছ্বাস।
দীর্ঘ ১৫ মাস আগে শুরু হওয়া ঐক্যবদ্ধ কৃষকের লাগাতার আন্দোলন ভাঙতে না পেরে ১৯ নভেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তিন কেন্দ্রীয় কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। বিশ^াস করেননি আন্দোলনরত কৃষকরা। এর আগেও কেন্দ্রের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কৃষকদের দাবি পূরণ করা হয়নি। তাই এবার তারা আশ^াসেও ময়দান ছাড়েননি। অবশেষে সংসদের শীত অধিবেশনের প্রথম দিনই তিন আইন বাতিল হয়। পরে রাষ্ট্রপতিও সম্মতি দেন। বাতিল হয় নরেন্দ্র মোদীর সাধের তিন কালা কৃষি আইন।
কৃষকরা তখনও ময়দান ছাড়েন নি। তাদের তরফ থেকে কেন্দ্রকে জানানো হয় ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের নিশ্চয়তা, আন্দোলনের সময়ে কৃষকদের বিরুদ্ধে করা মামলা, শহীদ কৃষক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, বিদ্যুৎ বিল সংসদে পেশ না করার দাবি মানতে হবে। সরকার চিঠি পাঠিয়ে এই প্রস্তাবগুচ্ছ সাধারণভাবে মেনে নেয়। কিন্তু কৃষক নেতারা বলেন, না সরকারিভাবে সব উল্লেখ করে চিঠি পাঠাতে হবে। ভারতীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সঞ্জয় আগরওয়ালের স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী একটি কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন। সেই কমিটিতে কেন্দ্র, রাজ্য সরকার, কৃষক মোর্চা ও কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা, কৃষি বিজ্ঞানীরা থাকবেন। কমিটির কাজ হবে, দেশের কৃষকদের এমএসপি পাওয়া কীভাবে নিশ্চিত করা যায়। ইতিমধ্যে চালু এমএসপি’র ব্যবস্থা জারি থাকবে। চিঠিতে আরো জানানো হয়, কৃষক আন্দোলন সংক্রান্ত সমস্ত মামলা তুলে নেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে মৃত কৃষক পরিবারকে। বিদ্যুৎ বিলও এখনই পেশ করা হবে না। অন্যান্য অংশীদার এবং সংযুক্ত কৃষক মোর্চার সঙ্গে আলোচনার পরেই সংসদে এই বিল পেশ হবে। শস্যের অবিশিষ্টাংশ পোড়ানো নিয়ে আইনের ১৪ এবং ১৫ নম্বর ধারা প্রত্যাহার করে ফৌজদারি অপরাধ থেকে কৃষকদের অব্যাহতি দেওয়া হবে। এই চিঠির মাধ্যমে স্পষ্ট যে কেন্দ্রীয় মোদী সরকার কৃষকদের প্রায় সব দাবি মেনে নিয়েছে। তাই তো বিজয় বেশে ঘরে ফিরছেন কৃষকরা। এ বিজয়কে চমকপ্রদ ও ঐতিহাসিক বলছেন মোর্চার নেতারা। তারা বলছেন, এ বিজয় লখিমপুর খেরি সহ ৭১৫ জন শহীদের স্মৃতির উদ্যেশে এই হলো। সমস্ত কৃষক ও তাদের সমর্থকদের এই নজিরবিহীন সংগ্রাম ও গৌরবময় জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে মোর্চা। এই জয়ের পিছনে আসল চাবিকাঠি ছিল কৃষক ঐক্য, শান্তি ও ধৈর্য।
১০ ডিসেম্বর কৃষক আন্দোলন সমাপ্ত ঘোষণা করে ঘরে ফিরলেও তারা ১৫ জানুয়ারি দিল্লীতে বসছেন পর্যালোচনা ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করতে। মোর্চার নেতারা অভিন্ন সুরে বলেছেন, মুখে অভিন্ন কথাই ছিল : সংযুক্ত কৃষক মোর্চা ভারতে এক নতুন শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই মোর্চাকে অটুট রাখতে হবে।
ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনে সহযোগিতা করা স্থানীয় মানুষদের, লড়াইয়ে থাকা ট্রেড ইউনিয়ন, মহিলা সংগঠন, ছাত্র-যুব সংগঠন, আইনজীবী, শিল্পী, ডাক্তার, সাংবাদিক সহ সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মোর্চার নেতারা।

সর্বশেষ