রবিবার,২৮,এপ্রিল,২০২৪
32 C
Dhaka
রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
Homeখেলাধুলাবাজে ব্যাটিংয়ের পর হতশ্রী ফিল্ডিংয়ে বড় ব্যবধানে আবারো হারল বাংলাদেশ

বাজে ব্যাটিংয়ের পর হতশ্রী ফিল্ডিংয়ে বড় ব্যবধানে আবারো হারল বাংলাদেশ

নিউজিল্যান্ডের টানা তৃতীয় জয়

খেলাধুলা প্রতিবেদন: ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই উড়িয়ে মারলেন ড্যারিল মিচেল। লং অফে সুযোগ পেলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ভারসাম্য রাখতে পারলেন না। বল হাতে নিয়েই তিনি ঢুকে পড়লেন বাউন্ডারিতে! বেঁচে গেলেন মিচেল। এর আগে কেন উইলিয়ামসনের ক্যাচ নিতে পারেননি তাসকিন আহমেদ। পরে দুই ব্যাটসম্যানই খেললেন সত্তর ছোঁয়া ইনিংস। বাজে ফিল্ডিংয়ের মাশুল দিয়ে বাংলাদেশ হারল আরও এক ম্যাচ।

চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে ব্যাটিংয়ের পর ফিল্ডিংয়েও হতশ্রী প্রদর্শনী করা বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। ২৪৬ রানের লক্ষ্য ৪৩ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে গত দুই আসরের রানার্স-আপরা। বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এ নিয়ে ছয় ম্যাচের সবকটি হারল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানোর পর টানা দুই পরাজয়ে টুর্নামেন্টে নিজেদের বড় স্বপ্নেও ধাক্কা খেল সাকিব আল হাসানের দল। 

বাংলাদেশকে আড়াইশর মধ্যেই আটকে রাখার কারিগর লকি ফার্গুসন। তানজিদ হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে শুরুতেই ধাক্কা দেন তিনি। পরে আউট করেন সাকিব আল হাসানকেও। ৪৯ রানে ৩ উইকেটের সৌজন্যে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে। ব্যাট হাতে বাংলাদেশের পক্ষে লড়েছেন শুধু মুশফিকুর রহিম। চাপের মুখে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছেন অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটসম্যান। চল্লিশ ছোঁয়া ইনিংস এসেছে অন্য দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব, মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে। 

নিউ জিল্যান্ডের কাজ সহজ করেছে বাংলাদেশের এলোমেলো ফিল্ডিং। অন্তত ৩টি ক্যাচ ছাড়ার পাশাপাশি গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে কিছু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। এর পূর্ণ ফায়দা নেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। রান তাড়ায় শুরুর বোলিংটা খারাপ করেনি বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারে রাচিন রবীন্দ্র ফেরেন মুস্তাফিজুর রহমানের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে। প্রথম পাওয়ার প্লেতে শুরুর এই চাপ ধরে রাখেন মুস্তাফিজ, শরিফুল ইসলামরা।

কনওয়েও ফিরতে পারতেন অল্পে। মুস্তাফিজের বলে পয়েন্টে তার কঠিন তবে ধরার মতো ক্যাচ নিতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। পরে উইলিয়ামসনের সঙ্গে ৮০ রানের জুটি গড়েন ৪ চারে বেঁচে যাওয়া কনওয়ে। সাকিবের বলে রিভার্স সুইপের ব্যর্থ প্রয়াসে এলবিডব্লিউ হন ৪৫ রান করা বাঁহাতি ওপেনার। পরের বলে মিচেলের দেওয়া সুযোগটি নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। সাকিবের এর আগের ওভারে শর্ট মিড উইকেটে উইলিয়ামসনের দেওয়া সুযোগ ছাড়েন তাসকিন। তখন ২৭ রানে ছিলেন উইলিয়ামসন। জীবন পেয়ে দুজন মিলে ধীরে ধীরে এগিয়ে যান জয়ের পথে। দীর্ঘ দিন পর ফিরে ৮১ বলে ফিফটি করেন উইলিয়ামসন। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি করতে মিচেল খেলেন স্রেফ ৪৩ বল।

দলীয় দুইশ হওয়ার পর মাঠ ছেড়ে যান উইলিয়ামসন। নাজমুল হোসেন শান্তর একটি থ্রো বাম হাতের আঙুলে লাগলে ব্যথায় ভুগতে দেখা যায় তাকে। সেটি স্টাম্পে লাগলে রান আউট হতে পারতেন উইলিয়ামসন। অধিনায়ক চোট পেয়ে ফিরলেও গ্লেন ফিলিপসকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মিচেল।

ম্যাচের প্রথমভাগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই লিটন দাসের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে প্রথম বলেই আউট হওয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় ওপেনার লিটন। প্রথমজন হান্নান সরকার, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০৩ বিশ্বকাপে। শুরুর চাপ সামাল দেওয়ার আভাস দেন তানজিদ, মিরাজ। কিন্তু বড় হয়নি জুটি। ফার্গুসনের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফ্লিক খেলতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন তানজিদ। একই বোলারের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে ধরা পড়েন তিন নম্বরে নেমে ৩০ রান করা মিরাজ। পরের ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরে শান্ত। স্রেফ ৫৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। 

পঞ্চম উইকেটে হাল ধরে ৯৬ রানের জুটি গড়েন সাকিব, মুশফিক। জুটিতে সাকিবের তুলনায় সাবলীল ছিলেন ছয় নম্বরে নামা মুশফিক। শুরু থেকেই বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করতে থাকেন তিনি। স্রেফ ৫২ বলে বিশ্বকাপে অষ্টম ও সব মিলিয়ে ৪৮তম ফিফটি করেন অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটসম্যান। চেন্নাইয়ের অতিরিক্ত গরমে ক্র্যাম্প করতে থাকে ব্যাটিংয়ে ধুঁকতে থাকা সাকিবের। শুশ্রূষা নিয়ে ব্যাটিং শুরুর পর হাত খুলে খেলার আভাস দেন তিনি। রাচিন রবীন্দ্রর ওভারের পরপর দুই বলে মারেন চার ও ছক্কা। ফার্গুসনের বাউন্সারে ছক্কা মারার পর আবারও একই ধরনের বলে একই রকম শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৩ চার ও ২ ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। পরে বোল্টের স্লোয়ারে তাওহিদ হৃদয়ও ফেরেন অল্পেই। এর সৌজন্যে স্রেফ ১০৭ ইনিংসে ওয়ানডেতে ২শ উইকেট পূর্ণ করেন বোল্ট। তার চেয়ে দ্রুত এই মাইফলক ছুঁতে পেরেছেন শুধু মিচেল স্টার্ক (১০২) ও সাকলাইন মুশতাক (১০৪)।

দারুণ অফ কাটারে মুশফিকের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটান ম্যাট হেনরি। ৭৫ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান মুশফিক। শেষ দিকে দলকে টানেন মাহমুদউল্লাহ। ব্যাটিংয়ের শুরুতে খুব ধীর এগোলেও, শেষে দুটি ছক্কায় তিনি বাড়ান রানের গতি। ২টি করে চার-ছক্কায় ৪৯ বলে ৪১ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। নয় নম্বরে নেমে দুই ছক্কায় তাসকিন আহমেদ রাখেন ১৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

পুরো ইনিংসে ৮টি ছক্কা মেরেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বিশ্বকাপে এক ইনিংসে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড। ২০১৫ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ৭টি মারে তারা। 

পুনেতে আগামী বৃহস্পতিবার ভারতের বিপক্ষে পরের ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ৫০ ওভারে ২৪৫/৯ (লিটন ০, তানজিদ ১৬, মিরাজ ৩০, শান্ত ৭, সাকিব ৪০, মুশফিক ৬৬, হৃদয় ১৩, মাহমুদউল্লাহ ৪১*, তাসকিন ১৭, মুস্তাফিজ ৪, তাসকিন ২*; বোল্ট ১০-০-৪৫-২, হেনরি ১০-০-৫৮-২, ফার্গুসন ১০-০-৪৯-৩, স‍্যান্টনার ১০-১-৩১-১, ফিলিপস ২-০-১৩-১, রবীন্দ্র ৭-০-৩৭-০, মিচেল ১-০-১১-০)

নিউ জিল‍্যান্ড৪২.৫ ওভারে ২৪৮/২ (কনওয়ে ৪৫, রবীন্দ্র ৯, উইলিয়ামসন আহত অবসর ৭৮, মিচেল ৮৯*, ফিলিপস ১৬*; মুস্তাফিজ ৮-০-৩৬-১, শরিফুল ৭.৫-১-৪৩-০, তাসকিন ৮-০-৫৬-০, সাকিব ১০-০-৫৪-১, মিরাজ ৯-০-৫৮-০)

ফলনিউ জিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচলকি ফার্গুসন

সর্বশেষ