মঙ্গলবার,১৯,মার্চ,২০২৪
23 C
Dhaka
মঙ্গলবার, মার্চ ১৯, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়মুক্তমতদিশাহীন উন্নয়ন

দিশাহীন উন্নয়ন

॥ তাপস দাস ॥

তাপস দাস

উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, সন্দেহ নাই। চোখ ধাঁধানো অবকাঠামোগতো উন্নয়ন দেখছেন দেশবাসী। নিজস্ব আয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা বাজেটের পদ্মাসেতু কিছুদিন পর ৫০ হাজার ছাড়াবে। দক্ষিণ জনপদের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু অচিরেই বাস্তবে রূপ নিবে। রাজধানীর সাথে হবে তাদের জীবন্ত যোগাযোগ। মেট্রোরেল, উড়ালসেতু, চারপাঁচ লেনের রাস্তা, কর্ণফুলী ট্যানেল সহ বড় বড় মেগা প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলছে দুর্দমনীয় গতিতে। হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বড় বড় অট্টালিকা। হতদরিদ্রের জন্য দুই ধরনের টাইলস দিয়ে সুখনিদ্রা কাটানোর মনোরম ফুটপাতও তৈরি হচ্ছে। মন্দির মসজিদ সহ আরো অনেক উন্নয়ন হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ’৭১-এর মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখেছি। কারো কারো ফাঁসি এবং যাবৎজীবন জেল হয়েছে। তবে অনেকটা থমকে গেছে বাকিদের বিচার কাজ। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা খুশি, আনন্দিত। সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই। লাল-সবুজের বাংলা থেকে ওদের উৎখাত চাই। হঠাৎ হঠাৎ মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাও দেখছি। আবার মাদক কারবারির বউকে এমপি হতেও দেখছি। জুয়ার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখছি। একই সাথে দেখছি এসব পরিচালনায় রয়েছে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থাকা হোমরাচোমরাদের। নদী দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য সাধুবাদ জানাই। তবে হতাশ হই, যখন দেখি সাহস নিয়ে যেসকল অফিসার পদক্ষেপ নেয় তাদের বদলি হতে বেশিদিন সময় লাগে না, ঢাকা উত্তর দক্ষিণে রবিন হুট মেয়রদের যেমন দেখছি, তেমনি ডেঙ্গু নগরবাসীর বাড়িতে বাসা বাঁধতেও দেখছি।
উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে দুর্নীতি। বিদেশে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। দুর্নীতির মহারোগে আক্রান্ত সকল সেক্টর। পুলিশকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ধর্ষণের তিন দিন পর মামলা না নিতে। মহামারী করোনা আমাদের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। দেখছি শিক্ষা ক্যারিকুলামে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার, আবশ্যিক বিষয়কে বাদ দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার সম্পাদন। জনগণকে জিম্মি করে করোনার মধ্যে সকল পণ্যের দাম বাড়াল অসাধু ব্যবসায়ীরা। জনগণের রক্ত চুষতে ঔষধ ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো ঔষধের দাম বাড়াল, যদিও ঔষধ বিক্রেতারা কেউ কেউ সরকারের উপদেষ্টাও বটে। এসব অপকর্মের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। বাজারে চালের কেজি ৭০ টাকা, তেলের লিটার ১৬০, চিনি ৯৫, পেঁয়াজ ৫০। সবজির বাজারে আগুন জ¦লছে দাউ দাউ করে। মাছ বাজারে যেতে পারি না বহুকাল ধরে। ডিমের হালি ৪০ টাকা। সব লিখে শেষ করা যাবে না। তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে জিম্মী নাটকের ধর্মঘটে গণপরিবহণের ভাড়া বাড়ল ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত গণপরিবহন মালিকরা। অথচ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের হাপ-পাস নিতে হয়েছে বহু কাঠখর পুড়িয়ে, তাও শর্ত সাপেক্ষে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সে মিছিলও থামানোর কোনো পদক্ষেপ নেই। মাঝনদীতে আগুনে পুড়ে মরছেন লঞ্চ যাত্রীরা। দায় নিচ্ছে না কেউ।
করোনায় অন্ধকার নামা জীবনযাপন থেকে সাধারণ মানুষ একটু ঘুরে দাঁড়াতেই বেড়ে গেল তেল, গ্যাস, পানি সহ আরো অনেক কিছুর দাম। পা ফাটা মানুষ পড়লেন সবচেয়ে বেশি বিপদের। অমিক্রনের থাবা থেকে বাঁচতে সরকার নীতিমালা ঘোষণা করল। কিন্তু সুবিধাভোগী পরিবহন মালিকদের চোখরাঙ্গানিতে এক দিনের মধ্যেই তা পরিবর্তন করতে বাধ্য হল। মন্ত্রী আমলা ও সরকারি সকল কর্মচারীদের বেতন বাড়ে, কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাতের থালায় ভাতের পরিমাণ বাড়ে না। বরং মানুষকে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হয় মাছ-মাংস-ডিম। একবেলার ভাত কেউ কেউ খান তিন বেলায়। পুষ্টিহীনতা ক্রমেই এসব মানুষগুলোকে আষ্টেপিষ্টে ধরছে। অর্থের অভাবে চিকিৎসাটাও ঠিকমতো করতে পারছে না, করোনাভিঘাতে গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিবাহের হিরিক পড়েছে। মানুষ বাঁচতে চান, শান্তিতে একটু ঘুমাতে চান। আর চান রাজনীতি থাকুক রাজনীতিবিদের হাতে দুর্বৃত্তদের হাতে নয়। কিন্তু রাজনীতি ক্রমেই অরাজনৈতিকদের হাতে চলে যাচ্ছে। বাড়ছে সুবিধাভোগীদের দৌরাত্ম্য। ওদের দাপট আর চোখ রাঙানিতে ম্লান হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার অপ্রতিরোধ্য গতি। এ গতি চালু রাখতে সবার আগে সুবিধাভোগীদের দাপট থামাতে হবে। তাছাড়া দিশাহীন এ উন্নয়ন সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না।

লেখকঃ সহ-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী।

সর্বশেষ