মঙ্গলবার,১৯,মার্চ,২০২৪
25 C
Dhaka
মঙ্গলবার, মার্চ ১৯, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়মুক্তমতদেশ ঢেকে যায় হিজাবে হিজাবে

দেশ ঢেকে যায় হিজাবে হিজাবে

।। কল্যাণী রমা ।।

ঈদ। শব্দটা শুনলেই এখনো আমার বুকের ভিতরটা ভালোবাসায় নরম হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে বড় হয়েছি বলেই হয়তো ‘পুজোয় চাই নতুন জুতো’ ধরণের আবেগের আধিপত্য আমায় তাড়া করেনি কখনো। ঈদ মানেই পোলাও, কোর্মা, রেজালা, কাবাব, সেমাই, জর্দা পোলাও…হ্যাঁ, আমি একটু পেটুক বটে। আমি বছরে দু’বার বিশেষভাবে এইসব রাজভোগ বন্ধুদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে খাওয়ার জন্য সারা ছেলেবেলা উদগ্রীব হয়ে থাকতাম। আমার হিন্দু বাড়িতে দারুণ রন্ধন পটিয়সী দিদাও মাংস ঠিক ভালোভাবে রান্না করতে পারত না, জিরা দিয়ে লম্বা ঝোল ক’রে ফেলত। ফলে সুস্বাদু মাংস রান্না মানেই আমার চাচী,ফুফু, আর খালাদের বাড়ি বাড়ি।

কিন্তু আমার দিদা আর দাদুভাই ভীষণই অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিল। আগেও বহুবার বলেছি দাদুভাই আমাদের বাড়ি একটা জায়নামাজ রাখত তার ধর্মপ্রাণ বন্ধুরা বাড়ি এলে নামাজ পড়বে বলে। আমার দিদা নিজে থেকে আমাদের দুই বোনকে বছরের দুই ঈদে নতুন জামা বানিয়ে দিত। আমরা কিন্তু কোনদিন মুখ ফুটে চাই নি। আজ আমার দিদা বা দাদুভাই কেউ আর নেই। কিন্তু আমার বাংলাদেশ আছে। হিজাবে ঢাকা বাংলাদেশ!

অনেকদিন পর সেবার যখন দেশে গেলাম, গিয়ে দেখি রাস্তাঘাটে প্রায় শাড়ি পরা আর খুব বেশি মেয়ে বাকি নেই। বেশিরভাগ মেয়েও হিজাব পরা। ছেলেরাও গোড়ালির উপরে অদ্ভুত এক ধরণের সালোয়ার কামিজে। এ কোন বাংলাদেশ? বাংলাদেশ পাকিস্তান বা আরব দেশ নয়। বাংলাদেশ আমার সোনার বাংলা। সেখানে এমন হিজাব কেন? এমন সালোয়ার কামিজ কেন? ছেলেবেলায় চিরকাল দেখেছি মেয়েরা শাড়ি পরে, কপালে টিপ দিয়ে, খোঁপায় বেলিফুলের মালা জড়িয়েছে। তেমন সাজতে হলে এখন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হতে হয়!

আঠারো বছর বয়সে আমি ভারতে চলে যাই পড়াশোনা করতে। তারপর আমেরিকা। বহু বহু বছর আমি দেশের বাইরে। তবু প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় আর ভোরবেলা আমার আজানের সুর শোনবার জন্য প্রাণ উদগ্রীব হয়ে ওঠে। সেবার  দেশে গিয়ে জেটল্যাগে যখন ভোরবেলা জেগে আছি, দেখি আজান হচ্ছে। বহু বছর পর আজানের শব্দ শুনে আমার দুই চোখ জলে ভরে উঠল।

হ্যাঁ, আজান আমার। ঈদ আমার। জায়নামাজ আমার। আমি নাস্তিক হলেও সবকিছু এই আমারও। জন্ম থেকে দেখা আমার রক্তের ভিতরের সবকিছুকে তোমরা হিজাবে ঢেকে দিও না।

লেখক: সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, আমেরিকা প্রবাসী।

সর্বশেষ